‘গৃহচটক’ শব্দের অর্থ হল চড়ুই পাখী৷ চটক গ্গ চড গ্গ চডুই গ্গ চড়ুই৷ চটকী গ্গ চডইগ্গ চডুই গ্গ চড়ুই৷ বাঙলায় ‘চড়ুই’ ও ‘চড়ুই’ দুটি শব্দই চলে৷ আমাদের পশ্চিমরাঢ়ের গ্রামের মানুষ অনেকেই ‘চটই’বলে থাকে৷ ‘চটই’ শব্দটি ‘চটক’ শব্দ থেকে এসেছে৷ চড়ই কে বিহারের মগহী ভাষায় বলা হয় ‘গর্বৈয়া’৷ মৈথিলী ভাষায় ‘গর্বৈয়াও’ চলে ‘ফুদ্দিও’ চলে৷ ভোজপুরীতে বলা হয় ‘ফুরগুদ্দি’৷ অঙ্গিকা ভাষায় টিকটিকিকে বলে টিকটিকিয়া৷
চটক পাখী দুইভাগে বিভক্ত যারা পাকা বাড়িতে কার্নিশে ঘর বানায় তারা হল ‘গৃহচটক’ বা ‘চড়ুই পাখী’৷চ চড়ুই পাখী পায়রার মতো খড়কুটো দিয়ে ভালো ঘর তৈরী করতে পারে না৷ কিন্তু অধিকাংশ পাখী পারে৷
মানুষের লালসার শিকার বন-চড়ুই ঃ চড়ুই পাখীর যে প্রজাতিটি ঘরে থাকে না, তারা বাস করে ছোট ছোট গাছে ধানক্ষেতের কাছে পিঠে৷ এদের প্রধান কাজ হল ধান বা প্রধান ফসল কর্ত্তিত হয়ে যাওয়ার পর জমিতে পড়ে থাকা শস্যকনাগুলি খুঁটে খুঁটে খাওয়া৷ বাঙলায় এই জাতীয় চড়ুই খুবই কম৷ পশ্চিম দেশ থেকে কিছু আসে শীত কালে বাঙলায় ধান কাটা হয়ে যাওয়ার পরে৷
থাকে ধান ক্ষেতের কাছাকাছি ছোট ছোট গাছে৷ দিন পনেরো-বিশ এদেশে থাকে, তারপর পশ্চিম দেশে চলে যায়৷ বাঙলার গ্রামের মানুষ এদের বলে বন চড়ুই৷ লোভী লোকেরা বলে থাকে, এদের মাংস নাকি সুস্বাদু৷ তাই আড়াল থেকে জাল ফেলে ধরে এদের হত্যা করে৷ এদের সংখ্যা ক্রমশঃ কমে আসছে৷ এরা এতই ছোট যে ১০০টা পাখী মারলেও একটা মানুষের পেট ভরবে না৷ মানুষের হাত থেকে এদের বাঁচানো দরকার৷ উত্তর ভারতে এই পাখীটিকে বলা হয় ‘বৈগরী’৷ ভোজপুরী ভাষাতেও বৈগরীই চলে৷
‘জৈসন ডরেলী বাজ সে বৈগরী’৷
(---শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘আমাদের প্রতিবেশী পশু ও পক্ষী’ গ্রন্থ থেকে)
- Log in to post comments