কোন কারণে দৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে যদি কম হয়, কিন্তু দৃশ্যমান কোনও গঠনগত পরিবর্তন বা কোনও রোগ যদি না থাকে সে ক্ষেত্রে চশমা দিয়ে সে দৃষ্টির উন্নয়ন সম্ভব৷ তখন একে রিফ্রাকটিভ এরর বা পাওয়ার জনিত দৃষ্টি স্বল্পতা বলা হয়৷ এটি সাধারণত চার ধরনের হয়৷
মায়োপিয়া ঃ এ ধরনের রোগীরা কাছে মোটামুটি ভালো দেখতে পারলেও দূরে ঝাপসা দেখে, তাই এদের ক্ষীণদৃষ্টি বলে৷ অবতল লেন্স বা মাইনাস পাওয়ারের চশমা করলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব৷ যাদের চোখে ছয় ডায়াপটারের বেশী মাইনাস পাওয়ারের লেন্স লাগে ও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের পাওয়ারও বাড়তে থাকে তখন তাকে প্যাথলজিকাল মায়োপিয়া বলে৷ সেক্ষেত্রে চোখের দেওয়াল বা স্ক্লেরা পাতলা হয়ে যায় ও রেটিনাতে ছিদ্র সৃষ্টি হয়ে পরবর্তীতে রেটিনা আলাদা হয়ে গিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে৷ মায়োপিয়াতে চোখের আকার বড় হওয়ার কারণে চোখের দেওয়াল পাতলা হয়ে যায়৷ সেজন্যে সামান্য আঘাতেই চোখে অনেক মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে৷ সুতরাং মায়োপিয়া রোগীদের সবসময় চেখের আঘাত থেকে সাবধান থাকতে হবে ও নিয়মিতভাবে ডাক্তারের পরামর্শে চেখের পাওয়ার পরীক্ষা ও রেটিনার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো৷
হাইপারোপিয়া ঃ এ ধরনের রোগীরা দূরে ও কাছের উভয় দিকেই ঝাপসা দেখে ও অফিসিয়াল কাজ করার সময় রোগীর চোখের ওপর চাপ পড়ার কারণে মাথাব্যথার অনুভূতি হয়৷ স্বাভাবিক চোখের চেয়ে এদের চোখ একটু ছোট থাকে, যদিও এটা বোঝা যায় না৷ উত্তল বা পাস লেন্সের চশমা ব্যবহার করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়৷
অ্যাসটিগম্যাটিজম ঃ এটি এক ধরনের দৃষ্টি স্বল্পতা, যাতে রোগীর কর্নিয়ার যে কোনও একদিকে (লম্বাদিকে, প্রস্থে অথবা কোণাকাণি) পাওয়ার পরিবর্তন হয় বলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়৷ এ কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, একটি জিনিসকে দুইটি দেখা ও মাথাব্যথা হতে পারে৷ সিলিণ্ডার লেন্স ব্যবহারে এ সমস্যার সমাধান হয়৷
প্রেসবায়োপিয়া ঃ এতে বয়সজনিত চোখের গঠনগত পরিবর্তনের কারণে চোখের লেন্সের ইলাসটিসিটি বা স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়, ফলে লেন্সের প্রয়োজনে (বিশেষ করে কাছের জিনিস দেখার জন্যে) আকার পরিবর্তন করার ক্ষমতা কমে যায় ও কাছের জিনিস ঝাপসা দেখায়৷ চল্লিশ বছরের পর এ সমস্যা দেখা যায় বলে এতে চালসে রোগ বলা হয়৷ শুধু কাছের জিনিস দেখার জন্যে (বিশেষ করে পড়াশোনার জন্যে) উত্তল বা পাস লেন্স ব্যবহার করলে এ সমস্যার সমাধান হয়৷ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চশমার পাওয়ারও পরিবর্তন হয়৷
চিকিৎসা
১ ডাক্তারের পরামর্শে রোগের ধরন অনুযায়ী পাওয়ার চেক করে চশমা ব্যবহার করা যেতে পারে৷
২ চশমা যারা পরতে চায় না, তারা কণ্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে পারেন৷ কিন্তু কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারবিধি একটু জটিল৷ অনেকের পক্ষে ব্যবহার করা হয়ে ওঠে না৷
৩ বর্তমানে লেজার সার্জারির মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব৷ এক্সাইমার লেজার ব্যবহার করে চোখের পাওয়ার পরিবর্তন করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়৷ একে ল্যাসিক রিফ্রাকটিভ সার্জারি বলা হয়৷ এর মাধ্যমে ১৫ ডায়াপটার পর্যন্ত মায়োপিয়া, ৫ ডায়াপটার পর্যন্ত অ্যাসটিগম্যাটিজম ও ৭ ডায়াপটার পর্যন্ত হাইপারোফিয়ার চিকিৎসা সম্ভব৷ সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, ল্যাসিক করার পর সাধারণত চশমা অথবা কণ্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না৷
মনে রাখতে হবে-
ক) বাচ্চাদের দৃষ্টিস্বল্পতার দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন না হলে অলস চোখের কারণে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে কমে যেতে পারে৷
খ) কাছ থেকে যে সব শিশু টেলিভিশন দেখে অথবা টেলিভিশন দেখার সময় চোখ ট্যারা হয়ে যায় ও চোখ থেকে জল পড়ে, তাদের তাড়াতাড়ি চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো৷
গ) মাথাব্যথা চোখের পাওয়ার পরিবর্তনের লক্ষণ, সুতরাং মাথাব্যথা হলে একবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো৷
ঘ) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে চশমা ব্যবহার করে খুব ভালো ফল পাওয়া যায় না, কারণ এতে ঘন ঘন চোখের পাওয়ার পরিবর্তন হয়৷
ঙ) যারা নতুন নতুন চশমা ব্যবহার শুরু করবেন তাদের চশমাতে অভ্যস্ত হতে ১০-১৫ দিন সময় লেগে যায়, এ সময়ে চশমা ব্যবহারে অস্বস্তি লাগলেও এটি ব্যবহার বন্ধ করা ঠিক নয়৷
চ) যারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে চান, তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহারবিধি মেনে ব্যবহার করবেন৷
- Log in to post comments