চশমা কেন প্রয়োজন

লেখক
ডাঃ আলমগির

কোন কারণে দৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে যদি কম হয়, কিন্তু দৃশ্যমান কোনও গঠনগত পরিবর্তন বা কোনও রোগ যদি না থাকে সে ক্ষেত্রে চশমা দিয়ে সে দৃষ্টির উন্নয়ন সম্ভব৷ তখন একে রিফ্রাকটিভ এরর বা পাওয়ার জনিত দৃষ্টি স্বল্পতা বলা হয়৷ এটি সাধারণত চার ধরনের হয়৷

মায়োপিয়া ঃ এ ধরনের রোগীরা কাছে মোটামুটি ভালো দেখতে পারলেও দূরে ঝাপসা দেখে, তাই এদের ক্ষীণদৃষ্টি বলে৷ অবতল লেন্স বা মাইনাস পাওয়ারের চশমা করলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব৷ যাদের চোখে ছয় ডায়াপটারের বেশী মাইনাস পাওয়ারের লেন্স লাগে ও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের পাওয়ারও বাড়তে থাকে তখন তাকে প্যাথলজিকাল মায়োপিয়া বলে৷ সেক্ষেত্রে চোখের দেওয়াল বা স্ক্লেরা পাতলা হয়ে যায় ও রেটিনাতে ছিদ্র সৃষ্টি হয়ে পরবর্তীতে রেটিনা আলাদা হয়ে গিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে৷ মায়োপিয়াতে চোখের আকার বড় হওয়ার কারণে চোখের দেওয়াল পাতলা হয়ে যায়৷ সেজন্যে সামান্য আঘাতেই চোখে অনেক মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে৷ সুতরাং মায়োপিয়া রোগীদের সবসময় চেখের আঘাত থেকে সাবধান থাকতে হবে ও নিয়মিতভাবে ডাক্তারের পরামর্শে চেখের পাওয়ার পরীক্ষা ও রেটিনার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো৷

হাইপারোপিয়া ঃ  এ ধরনের রোগীরা দূরে ও কাছের উভয় দিকেই ঝাপসা দেখে ও অফিসিয়াল কাজ করার সময় রোগীর চোখের ওপর চাপ পড়ার কারণে মাথাব্যথার অনুভূতি হয়৷ স্বাভাবিক চোখের চেয়ে এদের চোখ একটু ছোট থাকে, যদিও এটা বোঝা যায় না৷ উত্তল বা পাস লেন্সের চশমা ব্যবহার করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়৷

অ্যাসটিগম্যাটিজম ঃ এটি এক ধরনের দৃষ্টি স্বল্পতা, যাতে রোগীর কর্নিয়ার যে কোনও একদিকে (লম্বাদিকে, প্রস্থে অথবা কোণাকাণি) পাওয়ার পরিবর্তন হয় বলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়৷ এ কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, একটি জিনিসকে দুইটি দেখা ও মাথাব্যথা হতে পারে৷ সিলিণ্ডার লেন্স ব্যবহারে এ সমস্যার সমাধান হয়৷

প্রেসবায়োপিয়া ঃ এতে বয়সজনিত চোখের গঠনগত পরিবর্তনের কারণে চোখের লেন্সের ইলাসটিসিটি বা স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়, ফলে লেন্সের প্রয়োজনে (বিশেষ করে কাছের জিনিস দেখার জন্যে) আকার পরিবর্তন করার ক্ষমতা কমে যায় ও কাছের জিনিস ঝাপসা দেখায়৷ চল্লিশ বছরের পর এ সমস্যা দেখা যায় বলে এতে চালসে রোগ বলা হয়৷ শুধু কাছের জিনিস দেখার জন্যে (বিশেষ করে পড়াশোনার জন্যে) উত্তল বা পাস লেন্স ব্যবহার করলে এ সমস্যার সমাধান হয়৷ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চশমার পাওয়ারও পরিবর্তন হয়৷

চিকিৎসা

১ ডাক্তারের পরামর্শে রোগের ধরন অনুযায়ী পাওয়ার চেক করে চশমা ব্যবহার করা যেতে পারে৷

২ চশমা যারা পরতে চায় না, তারা কণ্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে পারেন৷ কিন্তু কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারবিধি একটু জটিল৷ অনেকের পক্ষে ব্যবহার করা হয়ে ওঠে না৷

৩ বর্তমানে লেজার সার্জারির মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব৷ এক্সাইমার লেজার ব্যবহার করে চোখের পাওয়ার পরিবর্তন করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়৷ একে ল্যাসিক রিফ্রাকটিভ সার্জারি বলা হয়৷ এর মাধ্যমে ১৫ ডায়াপটার পর্যন্ত মায়োপিয়া, ৫ ডায়াপটার পর্যন্ত অ্যাসটিগম্যাটিজম ও ৭ ডায়াপটার পর্যন্ত হাইপারোফিয়ার চিকিৎসা সম্ভব৷ সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, ল্যাসিক করার পর সাধারণত চশমা অথবা কণ্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না৷

মনে রাখতে হবে-

ক)  বাচ্চাদের দৃষ্টিস্বল্পতার দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন না হলে অলস চোখের কারণে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে কমে যেতে পারে৷

খ) কাছ থেকে যে সব শিশু টেলিভিশন দেখে অথবা টেলিভিশন দেখার সময় চোখ ট্যারা হয়ে যায় ও চোখ থেকে জল পড়ে, তাদের তাড়াতাড়ি চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো৷

গ) মাথাব্যথা চোখের পাওয়ার পরিবর্তনের লক্ষণ, সুতরাং মাথাব্যথা হলে একবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো৷

ঘ) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে চশমা ব্যবহার করে খুব ভালো ফল পাওয়া যায় না, কারণ এতে ঘন ঘন চোখের পাওয়ার পরিবর্তন হয়৷

ঙ) যারা নতুন নতুন চশমা ব্যবহার শুরু করবেন তাদের চশমাতে অভ্যস্ত হতে ১০-১৫ দিন সময় লেগে যায়, এ সময়ে চশমা ব্যবহারে অস্বস্তি লাগলেও এটি ব্যবহার বন্ধ করা ঠিক নয়৷

চ) যারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে চান, তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহারবিধি মেনে ব্যবহার করবেন৷