যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা তখনই সার্থক হয় যখন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার আপন আপন সীমার মধ্যে থেকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মধুর সম্পর্ককে মান্যতা দিয়ে জনগণের স্বার্থকে সর্বদা অগ্রাধিকার দিয়ে শাসন কাজ করে চলেন৷ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে দেখা যাচ্ছে যতোদিন যাচ্ছে ভারতের মতো বিরাট দেশে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যে রাজ্যে আঞ্চলিক দলের উত্থান ও কেন্দ্রে সর্বভারতীয় দলের শাসনে সমস্যারই সৃষ্টি হয়ে চলেছে৷ কোন সমস্যার সঠিক সমাধান হচ্ছে না৷ দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রে যে দল যখন শাসনে আসছে কিছু সংখ্যা গরিষ্ট হয়ে মিলিজুলি সরকার গড়ছে তখনই যাদের নিয়ে শাসন চালাচ্ছে তখনই সেই সরকারের মধ্যে দলগুলি সমর্থন দিচ্ছে তাদের দাবী দাওয়া এমনই এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে তাতে সারা ভারতের স্বার্থে সেগুলি মেনে নেওয়া কেন্দ্রের পক্ষে সম্ভব না হওয়াতে অচল অবস্থায় সৃষ্টি হচ্ছে ঠিক তেমনই দেখা যাচ্ছে আঞ্চলিক দলগুলির দাবী না মেনে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে কেন্দ্রের প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হওয়াতে ঐ সমস্ত আঞ্চলিক দলগুলির স্বার্থ ক্ষুণ্ণ্ হওয়াতে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে৷ ফলে এদেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাটাই এক ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে৷
কেন এমনটা হচ্ছে? এর সদুত্তর আজ খুঁজতে হবে৷ সেই সদুত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যাচ্ছে ভারতের সংবিধানকে অদ্যাবধি কেন্দ্রে যে দলগুলি এসেছে ও শাসন ক্ষমতা হাতে নিয়েছে তারা সংবিধানকে নিছক দলীয় স্বার্থেই পরিবর্তন করে জটিলতাকে আরো জটিল করে বসেছে৷ শতাধিক বার সামান্য ৭২ বছরে পবিত্র সংবিধানকে কাটা ছেঁড়া করেছে৷ আর সারা ভারতে রাজ্যগুলিকে টুকরো টুকরো করে সংকীর্ণ স্বার্থেই শাসন চালিয়ে চলেছে নিছক দলীয় স্বার্থে৷ দেশের ঐক্য সংহতি কে অস্বীকার করেই দলগুলি যেন বেঁচে আছে৷ লজ্জার কথা রাজশক্তিকে দলীয় স্বার্থে কব্জা করাই দলগুলির একমাত্র লক্ষ্য৷ সেবার মানসিকতাটা দলগুলির আজ অনেকাংশে কমে গেছে৷
ইন্দিরা গান্ধীর ৪২তম সংবিধান সংশোধন গণতন্ত্রের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতি করে গেছে৷ দেশের নাগরিক গণ সচেতন হতেন তাহলে হয়তো দেশের অন্য অবস্থা হতো৷ মিলিজুলি সরকারগুলি কখনো স্থায়ী হয়নি৷ একমাত্র অটলবিহারী বাজপেয়ী ২৪ দলকে এক করে দেখিয়ে গেছেন গণতন্ত্র কেমন করে চালাতে হয়৷ সেটা সম্ভব হয়েছিল তাঁর মতো নেতার ধৈর্য্য ও সংযমের কারণে৷ দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীন ভারতে এমন নেতাতো দেশ আর পায়নি৷
ইংরেজের ফেলে দেওয়া সেই ধ্যান-ধারণা নিয়ে ভারতের স্বাধীন গণতন্ত্র কি উন্নতির মুখ দেখতে পারে? ভারতের নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতি আছে, ভারতের নিজস্ব সমাজবাদ আছে, ভারতের নিজস্ব সমগ্র বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের বীজমন্ত্র আছে৷ এদেশের সরকার তো সেদিকে না গিয়ে বাহিরের রাষ্ট্রের পুঁজির দিকে নজর দিয়ে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতির মিথ্যা দিবাস্বপ্ণ দেখেই কাল কাটাচ্ছে৷ দেশের কোটি কোটি মানুষ নিরন্ন, চরম দারিদ্রে কর্ষাঘাতে কাতর যে কথা চিন্তা না করে সরকার আর্থিক উন্নতির দেশগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেখাতে চাইছে ভারত কতোটা উন্নত হয়েছে আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে৷ আকাশ অভিযান হচ্ছে৷ দেশের মানুষের পেটে ভাত নেই, মাথা গোঁজার ঘর নেই, রোগে ওষুধ নেই৷ হায় গণতন্ত্র! মনে রাখা দরকার ভারত কৃষিপ্রধান দেশ৷ কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলতে হবে৷ ব্লকভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করে চরম বেকার সমস্যা দূর করতে হবে৷ গণতন্ত্রের স্বার্থে সমাজবাদকে মান্যতা দিতে হবে৷ বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে গ্রহণ করতে হবে৷ ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সেবাদাস হয়ে ভারতের সমস্যা সমাধান করা অসম্ভব৷ যে দেশে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়েছে সে দেশে তো গ্রামের ব্লকের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকে উন্নয়ণের পথে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে৷ ব্লকগুলিকে আর্থিক দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার চিন্তা তো কি কেন্দ্র আর কি রাজ্য সরকার নজর দিচ্ছে না৷
মোদ্দাকথা মিথ্যা কথার জালে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নতি হয় না হবে না৷ কৃষিপ্রধান ভারতে কৃষিকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে চাষাবাদ করে ও সেই কৃষিজাত দ্রব্যকে শিল্পে রূপান্তরিত করে বিরাট জনসংখ্যার অভাব অনটন দূর করার কথা ভাবতে হবে৷ মানুষকে অন্ধকারে রেখে, হতদরিদ্র মানুষের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে, আর্থিক উন্নয়ণকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দিয়ে, সাম্প্রদায়িকতার সেন্টিমেন্ট এতে সুড়সুড়ি দিয়ে দেশ সেবার মানসিকতাকে বর্তমান অত্যাধুনিক যুগ কখনোই মান্যতা দেবে না৷ আজকে যুগ হলো বিশ্বৈকতার যুগ আজকে বিজ্ঞানকে প্রগতিকে যেমন মানতে হবে তেমনই মানবতাকে সর্বাগ্রে মান্যতা দিতে হবে৷
সর্র্বেপরি ভারতের সেই সুপ্রাচীন অধ্যাত্মবাদকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করতে হবে ৷ তবেই ভারত বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা পাবে৷
তাই দেশের জনগণ আরো সচেতন ও সজাগ হোন৷ দেশকে রক্ষা করার দায় বর্ত্তমানের দলীয় নেতাদের শুধু নয়৷ সবচেয়ে দরকার আজ দেশের সৎসাহসী নিষ্টাবান বিদ্বৎ সমাজের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা৷ আজ দলছুট নেতা নেত্রীগণ গণতন্ত্রকে নিয়ে নিছক এক নোংরা রাজনৈতিক জুয়ায় মেতেছে যেটা ধনতন্ত্রেরই এক ভয়ঙ্কর ধবংসাত্মক আত্মঘাতী খেলা, বিশেষ করে যেথায় গরীব মানুসরাই বলি হয়ে চলেছে মুষ্টিমেয় ধনীর লালসায় ঘৃতাহুতি দিতে৷
- Log in to post comments