মানুষ আরামের অন্বেষণ করে৷ তাই এই অর্থে ‘ঢুণ্ঢ’ড করে যে ‘ঢ’ শব্দ পাই তার একটা অর্থ হ’ল আরামের উপকরণ (ভাবারূঢ়ার্থ), যোগারূঢ়ার্থে ‘গদি’৷ গদি বলতে ৰোঝায় যা শয়নকে বা উপবেশনকে আরামদায়ক করে দেয়৷ খাটের তোষকের নীচে যে গদি ব্যবহার করি ৰা চেয়ারের ওপর যে গদি ব্যবহার করি তার জন্যে ‘ঢ’ ব্যবহার করা যেতে পারে৷
উত্তর ভারতে সাধারণতঃ ‘গদ্দা’ ব্যবহূত হয়৷ তবে ‘গদ্দী’ শব্দে ব্যবহার যে নেই এমন নয়৷ তবে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ‘গদ্দী’ বলতে ৰোঝায় দোকানদার যেখানে বসে তার কাগজপত্র দেখে বা হিসেব–নিকেশ করে সেই স্থানটি অর্থাৎ অফিস৷ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অফিসকেও গদ্দী বলা হয়৷ গদ্দীর কথায় শেঠজীর সেই গপ্পটাও মনে পড়ে গেল৷
শেঠজীর বাড়াবাড়ি অসুখ........মৃত্যুশয্যায়৷ বাড়ীতে কান্নার রোল উঠেছে৷ খবর পেয়ে শেঠজীর পাওনাদারেরা উদ্বিগ্ণ৷ শেঠজীর অধমর্ণদের মুখে আনন্দের পাতলা ঝিলিক, যেন জল মেশানো ভেজাল দুধের পাতলা সরটি৷ শেঠজীর পুত্রেরা শশব্যস্ত হয়ে বিক্রয়কর, আয়কর ও আৰগারী বিভাগের খাতাপত্র সামলাতে ব্যস্ত৷
শেঠজী মরণাসন্ন৷ সেদিনকার মত গদ্দী ৰন্ধ করে তাঁর সাত ছেলে করজোড়ে শয্যাপার্শ্বে এসে দাঁড়াল৷ শেঠজী নাম করে করে তাদের খবর নিতে লাগলেন৷ প্রথমে খোঁজ করলেন প্রথম পু–ের৷ শেঠজী বললেন– রামনজ র হাজির রামনজ র হাত জোড় করে বললে–জী পিতাজী, হাজির৷ এবার দ্বিতীয় পু–ের খোঁজ করে বললেন–রামপরীক্ষণ হাজির৷ রামপরীক্ষণ বললে–জী পিতাজী, ম্যাঁয় উপস্থিত হুঁ৷ এবার তৃতীয় পু–ের খোঁজ নিয়ে শেঠজী বললেন–রামসুরথ হাজির রামসুরথ বললে–জী পিতাজী, ম্যাঁয় আপকা চরণ–কমলোঁ মেঁ হুঁ৷ এবার চতুর্থ পু–ের খোঁজ নিয়ে শেঠজী বললেন–রামসিংহাসন হাজির রামসিংহাসন বললে–জী পিতাজী, আপকা দাস হাজির৷ এবার পঞ্চম পু–ের খোঁজ নিয়ে বললেন–রামইক্ৰাল হাজির রাম ইক্ৰাল বললে–জী পিতাজী, ম্যাঁ আপকা চরণোঁ মেঁ হুঁ৷ এবার ষষ্ঠ পু–ের খোঁজ নিয়ে বললেন–রামবেশন হাজির রামবেশন বললে–জী পিতাজী, দাস উপস্থিত হ্যায়৷ এবার সপ্তম পু–ের খোঁজ করে শেঠজী বললেন–রামনুঠা হাজির রামনুঠা বললে–দাস আপকে সেবা মেঁ হাজির হ্যায়৷ এবার শেঠজী ক্রোধে অগ্ণিশর্মা হয়ে বললেন–তুমলোগ সাতোঁ ভাই ইহাঁ পর হাজির হো তো গদ্দী মেঁ কৌন হ্যায় শেঠজী রাগে গর্জন করতে থাকায় হূদপিণ্ডের ক্রিয়া ৰন্ধ হয়ে গিয়ে শেঠজীর মৃত্যু হ’ল৷
হ্যাঁ, তাহলে ৰুঝলে বাংলা ‘গদি’ ও উত্তর ভারতের ‘গদ্দী’ এক জিনিস নয়৷ একটার সঙ্গে অপরটা তোমরা গুলিয়ে ফেলো না৷