ৰাঙলায় তথা ভারতের অনেক জায়গায় ‘ডহরি’ বলে অনেক গ্রাম বা জায়গা আছে৷ পুরোনো ৰাংলায় ‘ডহর’ কথাটি রাস্তা বা পথ অর্থে ব্যবহূত হ’ত৷ ‘ডহর’ একটি অষ্ট্রিক শব্দ৷ রাস্তার পাশে বেথো শাক*(সংস্কৃতে ‘বাস্তক’ আলুর জমিতে শীতকালে অনেক সময় আপনা থেকেই বেথোশাক জন্মায়৷ বালি বালি চকচকে পাতাযুক্ত এই শাক একটি জনপ্রিয় খাদ্য৷ মহাপ্রভু চৈতন্যদেব নাকি এই শাক খেতে দারুণ ভালবাসতেন৷ শচীদেবী শান্তিপুরে মহাপ্রভুকে এই শাকের ব্যঞ্জন খাইয়েছিলেন৷) অর্থাৎ ডহরের পাশে বেথো শাক রয়েছে, তাই তার নাম ‘বেথুয়াডহরি’৷ আর রাস্তার পাশে বাম ডান দিকে ডোবায় মোষ চরছে, তাই তার নাম মহিষাডহরি’৷ তার থেকে ‘মোষডহরি’৷ আজকাল আমরা ‘ডহর’ শব্দের প্রয়োগ বড় একটা করি না৷ বিহারের কোথাও কোথাও এর অল্পবিস্তর ব্যবহার আছে৷ আমরা ‘ডহর’কে বর্জন করে তার জায়গায় ফার্সী শব্দ ‘রস্তা’–কে গ্রহণ করেছি৷ ফার্সী ‘রাহ’ শব্দটিকে সোজাসুজি গ্রহণ করিনি, বাঁকা পথে গ্রহণ করেছি৷ যেমন ‘রাহা–খরচ’ মানে পথ চলার খরচ৷ হিন্দুস্তানীতে পথযাত্রীকে ‘রাহী’ ৰলা হয়, সহযাত্রীকে বলা হয় ‘হমরাহী’৷ মধ্যযুগীয় ৰাঙলায় যে সমস্ত সরকারী কর্মচারী পথঘাট সংক্রান্ত তদারকির দায়িত্বে ছিলেন (অর্থাৎ পি. ডব্লিউ. ডি–তে কাজ করতেন), তাঁদের উত্তর পুরুষেরা আজও ‘রাহা’ পদবী ব্যবহার করেন৷ ‘রাহী’ শব্দটি ৰাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবে ব্যবহূত না হলেও প্রায় ৭০০ বছর ধরে চলে আসছে৷ অবশ্য সংস্কৃত–জাত তদ্ভব শব্দ ‘রাহী’ মানে রাধিকা৷ রাধিকা > রাহিআ > রাহি > রাই–
‘‘শ্যাম রূপ ধরি আজ এসেছে মরণ
প্রাণপাখী আর মানে না,
চল রাহি চল মরণ–যমুনায়৷’’
‘রাধিকাগঞ্জ’ থেকে এসেছে ‘রাইগঞ্জ’ যাকে আমরা ভুল করে ‘রায়গঞ্জ’ বলি৷ এরূপ ‘রাই’ শব্দ ব্যবহারের আর একটি উদাহরণ–
‘‘নব ঘন চিকন কাল
রাই কি বাসোনি ভাল,
তাই রাধার রূপের ভাঙতে গুমোর
ৰুঝি কাঁচা সোনা মাখলি গায়৷৷’’
নবাব হোসেন শাহের সময় মহাপ্রভু যখন ধর্মদেশনার উদ্দেশ্যে স্বয়ং এসেছিলেন তখন তিনি রামগেলিকে (রামকেলি স্থানটি মালদা জেলায়) কেন্দ্র করে তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন৷ তার ফলস্বরূপ এই এলাকায় পরবর্তীকালে রাধা–কৃষ্ণ সংক্রান্ত নাম যথেষ্ট সংখ্যায় দেখা যায়৷ যেমন–কালিয়াচক, কালিগঞ্জ, রাইগঞ্জ, রাধিকাপুর প্রভৃতি৷