‘অলাবু’ মানে ‘লাউ’ বা ‘কদু’ (bottlegourd)৷ অনেকে লাউকে ‘নাউ’ উচ্চারণ করে থাকে৷ উচ্চারণটি ঠিক নয়, কারণ ‘অলাবুতে’ তো ‘ন’ নেই৷ ‘কদু’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘কন্দুকী’ শব্দ থেকে ‘কন্দুক’ মানে ‘ৰল’৷ ‘কন্দুকী’ মানে যা ৰলের মত৷ তাই ‘কদু’ মানে গোল লাউ আর লাউ মানে যে-কোন প্রকারের লাউ৷ কথায় ৰলে, যার নাম লাউ তারই নাম কদু৷ কথাটা ঠিক নয়৷ এই গোল লাউকেই মৈথিলীতে ৰলে ‘সজিমন’৷ লাউকে ভোজপুরীতে ও উত্তর প্রদেশের পূর্বাংশে ‘লৌকী’ বা ‘লৌকা’ ৰলা হয়৷ হিন্দী/উর্দুতে ৰলা হয় ‘ঘিয়া’ (সংস্কৃত ‘ঘৃতাক’ শব্দ থেকে উর্দু-হিন্দীতে এই ‘ঘিয়া’ শব্দটি এসেছে)৷ ঘিয়া হুগলী জেলার একটি ছোট নদীরও নাম---এককাল যা ৰড় নদী ছিল৷ নদীটির অবশ্য প্রাচীন নাম ছিল ঘৃতাচী৷ মারাঠী, গুজরাতীতে লাউকে ৰলা হয় ‘দুধি’ (সংস্কৃত ‘দুগ্দিকা’ থেকে এসেছে৷ আসলে কিন্তু ‘দুগ্দিকা’ মানে লাউয়ের পায়েস)৷
লাউ একটি নির্দোষ সব্জী স্নায়ুতন্তু, স্নায়ুকোষ, লিবার ও কিডনির পক্ষে শুভ ফলপ্রদ৷ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও লাউ সাহায্য করে৷ অবশ্য স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে লাউয়ের চেয়েও ছাঁচি কুমড়ো সংস্কৃত ‘কুষ্মাণ্ড’, গ্রাম-ৰাঙলায় চাল কুমড়ো, আর কোলকাতা বাংলায় আমরা ‘ঝাঁচি কুমড়ো’ ৰলে থাকি৷ গ্রাম-বাঙলায় কেউ কেউ ‘চুণোকুমড়ো’ও ৰলেন, কারণ এই কুমড়োর গায়ে চুণের মত শাদা ছাপ এসে যায়৷ চালের ওপর হয়, তাই গ্রাম-বাঙলায় ‘চালকুমড়ো’ও ৰলে৷ ‘ছাঁচি’ শব্দটি ‘সাচি’ শব্দ থেকে এসেছে যার মানে ঝাঁঝাঁলো বা বিশেষ গুণযুক্ত যেমন ছাঁচি পাণ, ছাঁচি পেঁয়াজ৷ এই কুমড়োকে পূর্ব বিহারে ‘ভুয়া’, পশ্চিম বিহারে ও উত্তর প্রদেশে ‘‘ভতুয়া, মধ্যভারতে ‘রাখাসকোহড়া’ ও হিন্দী-উর্দুতে ‘পেঠা’ ৰলে৷ সাঁচি কুমড়োর মোরববাকেও ‘পেঠা’ ৰলা হয়) ৰেশী সাহায্য করে৷
লাউ সাধারণতঃ তিন গ্রুপে বিভক্ত-(১) বৈশাখী লাউ যা আকারে লম্বা ও মাঠে হয় (২) বর্ষাতী লাউ যা মাচায় হয় (৩) মাঘী লাউ যা শীতে মাঠে হয়৷ লাউ সাধারণতঃ চার ধরণের হয়৷ এক ঃ লম্বা লাউ দুই ঃ ঘটি লাউ, দেখতে ঘটির মত যার খোলায় কমণ্ডলু হয় তিন ঃ গোল লাউ যার খোলায় বাদ্যযন্ত্র হয় চার ঃ গদা লাউ যা দেখতে গদা বা মুদগরের (সংস্কৃতে অপর নাম ‘খেটক’) মত৷ গুণগত বিচারে ঘটি লাউ সর্বশ্রেষ্ঠ৷ তবে ফলন বেশী লম্বা লাউয়ের৷ আর একটি প্রজাতি আছে যা তিক্ত স্বাদযুক্ত৷ এই লাউ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ এর ৰীজের তৈল মাথার খুশকীরোগের উত্তম ঔষধ৷ এই লাউয়ের খোলা বায়েস/ বাইস হিসেবে একতারায় ব্যবহৃত হয়৷ লাউয়ের খোলা (লাউ ৰাকলা) মুখে লালা (saliva) এনে খাদ্য হজমে সাহায্য করে৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)