গোলমরিচকে প্রাচীনকালে কথ্য সংস্কৃতে ক্ষলা হত ‘‘কটূবীজম’’৷ গোলমরিচের আদিবাস দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া৷ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া গোলমরিচের অতি প্রিয়৷ হাওয়াতে–মাটিতে–জলে একটু নোনতা ভাব থাকলে তো সোণায় সোহাগা৷ মোটামুটি বিচারে ধরে নেওয়া যেতে পারে নারকোল, পান, চৈ, গোলমরিচ কতকটা একই ধরনের আবহাওয়া চায়৷ এই জন্যে আমরা দেখতে পাই অনেক ক্ষেত্রে লোকে গোলমরিচের লতা নারকোল গাছের ওপর তুলে দেয়৷ গোলমরিচ ভারত তথা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি অন্যতম ফসল ও যথেষ্ট গুণযুক্ত একটি মশলা৷ গোলমরিচ একটি সংরক্ষণযোগ্য বীজ ঙ্শুকিয়ে রাখা যায় দীর্ঘদিন৷ দক্ষিণ বাংলা, পূর্ব বাংলা ও উত্তর বাংলার আবহাওয়া নারকোল, চৈ ও গোলমরিচ–তিনেরই উপযোগী৷ পূর্ব রাঢ়েও এরা জন্মাতে পারে৷ তবে পশ্চিম রাঢ়ের মিষ্টি মাটি, মিষ্টি জল ও শুকনো আক্ষহাওয়া এদের পক্ষে উপযোগী নয়৷
রান্নায় গোলমরিচের ব্যবহার ভারতে প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে৷ দেশে লঙ্কার আমদানীর পর গোলমরিচের ব্যবহার কিছুটা কমলেও খুব বেশী কমেনি৷ তার কারণ লঙ্কার স্বাদ ও গোলমরিচের স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী৷ গুণগত বিচারে লঙ্কার চেয়ে গোলমরিচের গুরুত্ব অনেক বেশী৷ ভারতে সাধারণতঃ কালো অথবা খয়েরী রঙের গোলমরিচ পাওয়া যায়৷ তবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অল্প মাত্রায় শাদা গোলমরিচও লভ্য৷
গোলমরিচ হজমে সাহায্যকারী, আলস্য ও বিষাদ বায়ু রোগে উপকারী ঃ গোলমরিচ মুখে লালা আনে..... ক্ষুধার উদ্রেক করে..... পরিপাকে সাহায্য করে৷ গোলমরিচ স্নায়ু তন্তুতে সজীবতা এনে দেয়৷ আলস্য (lethargic nature) ও বিষাদ বায়ু রোগে (melancholia) গোলমরিচ একটি ঔষধ৷ বিভিন্ন অনুপানের সঙ্গে মিলিয়ে গোলমরিচ অনেক রোগের নিরাময়ে সাহায্য করে৷ যেমন–বসন্ত রোগে কন্টিকারীর মূলের সঙ্গে বয়ঃব্রণে দুধের সরের সঙ্গে ছুলি রোগে তাজা তালের রসের সঙ্গে৷ এদের ব্যবহার–বিধি যথাস্থানে বর্ণিত হয়েছে ৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে গৃহীত)