ইউক্রেন ---সবপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক

বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো শক্তিধর দেশগুলি ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলিকে কব্জায় এনে নিজেদের  প্রভাব প্রতিপত্তি বজায় রাখা ৷ এতে ছোট রাষ্ট্রগুলির  অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে৷  রাশিয়ার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত বিখ্যাত শষ্যভাণ্ডার ইউক্রেন যার রাজধানী কিয়েভ তার উপর দুই শক্তি শালী রাষ্ট্র আমেরিকা ও রাশিয়া নিজেদের  সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে ছোট রাষ্ট্রটিকে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে৷ স্মরণে থাকে যে জার্র্মনীর  হিটলার বিংশ শতাব্দীর ৪ দশকের শেষের দিকে বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ করে৷ সেই সময় রাশিয়া পোড়া মাটির নীতি নেয়৷ তার ফলে এই  ইউক্রেনের শষ্যভাণ্ডার ধবংস হয়৷ হিটলারের সঙ্গে এঁটে উঠতে  না পেরেই  রাশিয়া মিত্রপক্ষে যোগ দেয়৷ মিত্র পক্ষ হলো আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন একত্রে হিটলারের সঙ্গে  যুদ্ধে নামে৷ অন্যদিকে অক্ষশক্তি যেমন জার্র্মনী, ইতালি, আর জাপান একত্রে  বিশ্বযুদ্ধ চালিয়ে যায়৷ এই বিশ্বযুদ্ধ চলে প্রায়  ১৯৩৯ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৪৫ সালে মাঝামাঝি৷ হিটালারের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে আমেরিকা এ্যাটম বোম বর্ষন করে জাপানকে ধবংস করে দেয়৷ হিরোশিমা ও নাগাসাকি দুটি সমৃদ্ধশালী শহর শ্মশানে পরিণত হয়৷

সেই সময় পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি মিলিত হয়ে ও মিত্রপক্ষের কমিউনিষ্ট দেশ রাশিয়া একত্রে বসে য়্যুনাইটটেড  নেশন্স অর্গানাইজেশন নামে একটি  সংস্থা  ঘটন করে যাকে ইউ.এন.ও বলা হয়৷ এর প্রধান কর্র্ত্ত হয় আমেরিকা৷ আর এই মিত্র পক্ষ জার্র্মনীকে টুকরো টুকরো করে  নিজেদের মধ্যে প্রায় ভাগাভাগি করেই নেয়৷ কমিউনিষ্ট মতাদর্শে পৃথিবীতে যে রাষ্ট্রের জন্ম হয় তার পীঠস্থান হয় মস্কো এদিকে সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়ার অধিকাংশটাই ছিল মিত্রপক্ষের উপনিবেশ৷ সেগুলি একেবারেই  আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শাসকদের দ্বারা প্রচণ্ডভাবেই শোষিত হচ্ছিল৷ তারা ধীরে ধীরে  স্বাধীন হয়৷ কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীরা ছলবল কৌশল করে তাদের  কর্ত্তৃত্ব বজায় রাখে পরোক্ষভাবে নিজেদের হাতেই৷

আমেরিকা দাদাগিরিটা বেশী করে৷ ন্যাটো, সিয়েটো আন্তর্জাতিক চুক্তি করে ঐ রাষ্ট্রগুলিকে ধরে রাখে৷ স্বাধীনতা প্রাপ্ত ভারতবর্ষকে ইংরেজ সরকার হিন্দুস্থান ও পাকিস্তান করে তাদের ইংরেজ সরকার কমনওয়েলথের  সদস্য করে আর  ভারতকে সিয়েটের সদস্য করে৷ ন্যাটোর সদস্য ভারত ছিল না৷

একদা সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল ইউক্রেন ও রাশিয়া৷ আজ দুটো দেশ ইউক্রেনের দখল নিতে সীমান্তে  সৈন্য নামিয়েছে৷ ওদিকে ইউক্রেনে আমেরিকা সৈন্য পাঠিয়েছে৷ তার সাথে সাথে রাশিয়া ও সৈন্য সমাবেশ করেছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট মি. বাইডেন ভারতকে হুমকী দিয়েছে যে ভারত কে সমর্থন দিতে হবে তাকে কারণ ভারত সিয়েটার সদস্য সেই কারণে ন্যাটোকে সমর্থন জানাতে হবে৷ তা না হলে আমেরিকা ও ভারতের সঙ্গে  যে সম্পর্ক রয়েছে তার ফল ভালো হবে না৷ ভারতের বক্তব্য ইউক্রেন কাণ্ডতে দুই রাষ্ট্রে আমেরিকা ও রাশিয়া আলোচনার  মাধ্যমে মিটিয়ে নিক৷ এই বাইডেনের দাদাগিরিটা কিন্তু ভারতবাসী মেনে নিতে পারে না কারণ ভারত গোষ্ঠী নিরপেক্ষ দেশ৷ তাই ভারত  আমেরিকা ও রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখে৷ আর দু’দেশের কাছে নিরাপত্তার খাতিরে সামরিক সরঞ্জাম কেনে৷ সম্প্রতি রাশিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সামরিক অস্ত্র কেনার চুক্তি হয়েছে৷ এতে মিঃ বাইডেন বিরক্ত৷ তাই ভারতের  উপর অর্থনৈতিক চাপ দিচ্ছে৷ ভারতের  কর্ত্তব্য দেশীয় প্রযুক্তি বৃদ্ধি করে দেশকে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী করা৷ ধার করে অস্ত্র ও অন্যান্য ব্যবসা বানিজ্য ব্যাপারে দুটো দেশ থেকে কিছুটা সরে আসা, কারণ ভারতের  নিজস্ব সত্তাকে বজায় রাখাটা  দরকার , কারণ ভারত কোন গোষ্ঠীর নয়৷ ভারত পররাজ্য কোনদিনই গ্রাস করেনে৷ মানবতাবাদেই ভারত বিশ্বাসী৷

পৃথিবীতে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতেই ইউ.এন.ও জন্ম হয়েছে৷ তাই ইউক্রেনের  সমস্যা মেটাবেন ইউ.এন.ও৷ তাছাড়া যদি প্রয়োজন হয় তা হলে ইউ.এন.ও সৈন্য পাঠাবে ইউক্রেনে কারণ কারোরই আগ্রাসী নীতি চলবে না এই পৃথিবীতে৷ অত্যন্ত দুঃখের কথা ভারত  সীমান্তে তো চীন ও পাকিস্তান এক নাগাড়ে অশান্তি করছে৷ আর চীন উত্তরপূর্ব ভারতে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে জমি দখল করে রেখেছে৷ তার তো কোন প্রতিকার হয়নি৷ ইউ.এন.ও কে আরো সচেতন ও নিরপেক্ষ হতে হবে৷ তবেই তাঁর প্রকৃত গুরুত্ব বাড়বে নচেৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির দাপাদাপি বাড়বে, আর নীরব দর্শক হয়েই ইউ.এন.ও কে থাকতে হবে৷ চীনের আচরণ মোটেই মিত্র সুলভ নয়৷ আগ্রাসী মনোভাবটাই বেশী৷ পাকিস্তান বর্তমানে তার দোসর৷

সকলেরই স্মরণে রাখা উচিত মানবতাকে যদি মর্য্যাদা না দেওয়া হয় এই পৃথিবীর মেকী সভ্যতা ও সংস্কৃতি বাঁচবে না৷

জীবনের সর্বক্ষেত্রে যদি ‘‘বাঁচ আর অপরকে  বাঁচতে দাও’’ এই  বোধ জাগ্রত না হয় তা  হলে  সভ্যতা ও মানব সমাজ এগুতে পারবে না৷৷ তাই শক্তিশালী দেশগুলিকে অবশ্যই সংযত হতে হবেই৷ বিশ্বৈকতাবোধকে অবশ্যই মান্যতা দিয়ে তাকে বরণ করে নিতেই হবে৷ এটাই বিশ্বস্রষ্ঠার নির্দেশ৷

বেশ বোঝা যাচ্ছে রাশিয়া ও চীন ভিন রাষ্ট্র গ্রাসে ওৎ পেতেই আছে৷  রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্ব এলাকায়  সম্প্রতি প্রায় ১৪৬ রাউণ্ডগুলি চালিয়ে বাড়ি ধবংস করে দিয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে  ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মিঃ ভলদিমির জেলেনস্কি ফোনে রাশিয়ার পুতিনকে সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন আলোচনার জন্য৷ উভয়পক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক৷ বিশ্ববাসী শান্তি চায়৷