জাতীয় সম্পদ বিক্রি করাটা ক্ষমার অযোগ্য

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতবর্ষ যখন ভাগ হয় তখন হিন্দুস্থান ও পাকিস্তান, আর  ইংরেজের অখণ্ড ভারতবর্ষতে মাত্র ১৫টি রাজ্য ছিল৷ আজ হিন্দুস্থানে এতে ২৯টি বড়ো রাজ্য আর কেন্দ্রশাসিত রাজ্য এর সংখ্যা হলো ৭টি৷ তা হলো মোট ছোট বড়ো রাজ্য এর  সংখ্যা  ৩৬টি৷ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি ডানা কাটা পড়ে ইংরেজ আমলে৷ তাই আয়তন ছোট হয়ে যায় অনেকটা৷ কিন্তু স্বাধীন ভারতের যুক্তরাষ্ট্রে রাজ্যের সংখ্যা দু’গুণের চেয়ে বেশী৷ ইংরেজ  ডিভাইড এ্যাণ্ড রুল এই নীতিতে অখণ্ড ভারতবর্ষ দেশকে ১৫টি রাজ্যের  সংখ্যায় রেখেই সেই ডিভাইড এ্যাণ্ড রুল শাসন চালিয়ে গেছে৷ তাছাড়া রাজ্যগুলির যে সংখ্যক জেলার সংখ্যা, সেই জেলাগুলির সংখ্যা হয়েছে আজ বহুগুণ৷ যদিও লোক সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই রাজ্যের সংখ্যা বাড়ায় প্রশাসনিক ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ৷ ইংরেজ সরকারের শাসনে সরকার আয়ের উৎস যা ছিল ব্যয়ের উৎস্য অনেক কম৷ তাই হোমে(ব্রিটেনে) ইংরেজ সরকার হাজার হাজার পাউণ্ড পাঠাতো৷ এটা ছিল ইংরেজের লক্ষ্মী ভাণ্ডার৷ কিন্তু আজ বিশেষ করে করোনার অর্থাৎ মহামারীর আক্রমণে দেশের আয় বহুলাংশে কমে গেছে৷ কারণ সরকার লক্‌ডাউনে উৎপাদন ব্যবস্থাকে শিকেয় তুলে আর বিমুদ্রাকরণ করে স্বপ্ণের ভারত গড়তে গিয়ে সর্বনাশ করেই ছেড়েছে৷ সেদিনের জন সংখ্যা ছিল অখণ্ড ভারতবর্ষে মাত্র ৪৫ কোটি৷ আর হিন্দুস্থান ও পাকিস্তান করতে গিয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষেই লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে এদেশে আসেন৷ তাদের সংখ্যাও এদেশের জনগণের সংখ্যা মিলে দীর্ঘ সাত দশকের অধিক সময়ে লোক সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪০ কোটির মতো৷ যেমন লোকসংখ্যা বেড়েছে অত্যধিক কিন্তু আয়তন কমেছে অনেক আর সরকারের ডিভাইড্‌ এ্যাণ্ড রুল নীতির কারণে প্রশাসনিক ব্যয় বেড়েছে বহুগুন৷ তাই বর্তমানে ভারত যুক্তরাষ্ট্র চরমভাবেই আর্থিক দিক থেকে পথে বসেছে৷ তার উপর আয়ের উৎস্যটাই  নড়বড়ে হয়ে পড়ায় ব্যয়ের পরিমান বহুগুন বেড়ে যাওয়াতে বর্তমানের কেন্দ্রের হিন্দুত্ববাদী সরকার জাতীয় সম্পদ বেসরকারের হাতে অর্থাৎ ধনীদের হাতে বেচে দিয়ে  ভয়ঙ্কর আর্থিক বিপর্যয়কেই উষ্কে দিয়ে দেশকে ডোবাচ্ছে৷ এর হাত থেকে বাঁচতে হলো আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণের পথে জনগণকে যেতেই হবে৷ সেটা হলে উৎপাদন ও বন্টনে সমবায় ব্যবস্থাকে দ্রুতভাবে আহ্বান দিতে হবে৷ আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের জোয়ার এতে দেশকে ভাসিয়ে দিতে হবে৷ আর প্রশাসনিক ব্যয় সংকোচ জরুরী৷ তবে যে নোংরা রাজনৈতিক দলবাজিতে দেশের রাজনৈতিক নেতারা উন্মত্ত হয়েছেন, সেই পথে টানতে হবে সংযম ও কৃচ্ছতা৷

অতীব লজ্জার কথা দেশের কোষাগার খালি হচ্ছে, কিন্তু  দলীয় ভাণ্ডার দিন দিন পরিপূর্ণ হচ্ছে৷ বর্তমানে বিজেপির অর্থভাণ্ডার ৪৫০০কোটির চেয়ে বেশী৷  আর জনগণের সঞ্চয় কপর্দকশূন্য৷ অধিকাংশ পরিবার এর কর্ত্তার ও কর্মক্ষমদের কোন কর্মই নেই৷ দেশের অধিকাংশ নাগরিক বেকার আর অর্দ্ধবেকার৷

এ ব্যাপারে আরো কিছু আলোচনা জরুরী বলে মনে করি৷ যাঁরা ঢাক পেটান এই বলে যে দেশে কংগ্রেস স্বাধীনতা এনেছে সেটা ইতিহাসের চোখে বড়ই কটু! কারণ এই দেশ ভাগটা হলো ইংরেজ সরকারের একটা মারাত্মক চাল৷ দেশে সাম্প্রদায়িকতাকে উষ্কে দিয়ে চিরকালের  মতো পঙ্গু করে ভবিষ্যতে লুটে পুটে খেতেই দেশভাগ৷ কারণ কমনওয়েলথ সদস্য করে ভারত ও পাকিস্তানকে, সীমান্তে লড়াই, বিরোধ চিরকাল থাকবে৷ আর দেশ ভাগ করে যাঁরা শাসক হলেন তাঁরা নিজেদের কৃতিত্বটা জাহির করতেই বুঝি নেতাজীর নামে এ দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলো মিথ্যা অন্যান্য কুৎসা ছড়াতে  লাগে আর মিথ্যা বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার সংবাদ রটনা করে চলে৷ বিশেষ করে খোদ, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সাগরেদরা  ও কমিউনিষ্ট দল৷ যেটা মিথ্যা প্রমাণিত করেন মুখার্জ্জী কমিশন৷ সেই তাই হকু বিমান বন্দরে  বিমান দুঘর্টনাটা তাইহকুতে  গিয়ে তদন্ত করেই৷  কংগ্রেস সরকার সেটাকে লোকসভায় খারিচ করে দেয় ধরা পড়ার ভয়ে৷

দেশভাগ হয়েছে এই বাঙলাকে একেবারে পঙ্গু করেই৷ অখণ্ড বাঙলার প্রায় সবটাই পাকিস্তানকে দিয়ে দেওয়া হয়৷ যাতে চির  সংগ্রামী বাঙ্গালী জাতি মাথা তুলতে না পারে৷ আর ইংরেজ আমলেই বাঙলার  অংশ অসম, বিহার ও ঊড়িষ্যার সঙ্গে  জুড়ে দেওয়া হয়৷ যাতে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী আন্দোলন জোরদার করতে না পারে৷ বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে সব দিক থেকে নির্মূল করার চক্রান্তটা ইংল্যাণ্ডের ‘‘ইন্ডিয়া হাউস’’ থেকে প্রথম চালানো হয়৷  সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ইচ্ছাকৃতভাবেই ইংরেজ সরকার মুসলমানদের উষ্কে দেয় অমুসলমান নিধনে৷ ডাঃ বিধান রায় প্রায় নীরব ছিলেন দাঙ্গার ব্যাপারে তবে তিনি বাংলা বিহার এক করণের চেষ্টা করেন বিশেষ কোন কারণে৷ তবে এটা বন্ধ হয় কমিউনিষ্টদের আন্দোলনে৷ উদ্বাস্তুদের নিয়ে এদেশের রাজনৈতিক দলগুলি বিশ্বাসঘাতকতা করে এমনকি বর্তমান কেন্দ্র সরকার ও এই পশ্চিম বাঙলাকে একেবারে ধবংস করার কাজে খুবই তৎপর৷ কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিগত বিধানসভা নির্বাচনে চেষ্টা করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও যোগীজিও অন্যান্যরা কিন্তু এই পশ্চিম বাঙলা তাঁদের অশুভ চেষ্টাকে ব্যর্থ করে  দিয়েছে মতামত দান করে৷ বাঙালী সমাজ মোটেই দিল্লির ষড়যন্ত্রকে মূল্য দেন না৷ তাইতো  কেন্দ্রের সরকার পদে পদে বিরোধিতা করে চলেছেন ও রাজ্যের পাওনা দেন না৷ এটা গণতন্ত্রের কলঙ্ক৷ বাঙলার রাজনৈতিক সচেতনতাকে  হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার অত্যন্ত ভয়ের চোখে দেখতে অভ্যস্ত৷ মোদ্দাকথা কেন্দ্রের কি কংগ্রেসী সরকার আর কি বিজেপি সরকার, কেহই সহ্য করতে পারেন না বাঙলা কে৷ কেবল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাননীয় অটল বিহারী বাজপেয়ী কিছুটা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অধিকারী ছিলেন৷ তাই বাঙালীজাতির  রাজনৈতিক  সচেতনতাকে সম্মান দিতেন ও বুঝতেন চিরসংগ্রামী বাঙালী জনগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনাটা কতো যুক্তি সঙ্গত৷ তাই তো  মাননীয় গোখলে বলতেন---‘‘বাঙলা আজ যা ভাবে

সারা ভারত ভাবে কাল তাই৷ বাঙালী জনগোষ্ঠীকে সর্বদা জাগ্রত ও সচেতন থাকতে হবে৷