জীবনের জন্যে বৃক্ষায়ন জরুরী

লেখক
পত্রিকা প্রিতিনিধি

ইতিহাসের শুরু থেকেই জীবজগতে গাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে৷ বিশ্বের অধিকাংশ প্রজাতির প্রাণীর জন্যে গাছ খাদ্য যোগাচ্ছে, এদেরকে আশ্রয় ও ছায়া দিচ্ছে৷ বর্তমান বিশ্বে প্রায় ১০ মিলিয়ন জাতের গাছ রয়েছে৷ স্থলে ও জলে সর্বত্রই এরা গজিয়ে উঠছে, বংশবিস্তার করছে৷ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এদের অবস্থান সীমাহীন৷ গাছবিহীন পরিবেশে জীবন প্রায় অসম্ভব, দুর্বিষহ৷ গাছ আবহাওয়াকে বিশুদ্ধ রাখে, শান্ত রাখে৷ দিনের বেলা গাছ আলোক সংশ্লেষণ করে৷ তখন যারা কার্বন–ডাই–ক্সাইড প্রতিনিয়ত নির্গত করে বাতাসকে দুষিত করছে, তার অধিকাংশই গ্রহণ করছে গাছপালা৷ এর পরিবর্তে মানুষের অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন নির্গত করছে গাছ৷ তাতে নির্মল হচ্ছে বাতাস৷ এ পৃথিবী বাসযোগ্য থাকছে মানুষের জন্যে৷ বর্তমান বিশ্বে আবহাওয়ার উষ্ণতা বাড়ছে৷ তাতে বরফ গলছে মেরু অঞ্চলসমূহে৷ জলের পরিমাণ বাড়ছে বিভিন্ন সমুদ্রে, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা–ফলে বন্যার প্রভাব বেড়েছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে৷ তাছাড়া আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস৷ কোথাও বৃদ্ধি পাচ্ছে মরুকরণ৷

দ্রুত বর্ধিত জনসংখ্যা ও কলকারখানা থেকে অতিমাত্রায় নির্গত কার্বন–ডাই–ক্সাইড এই বিশ্বব্যাপী উষ্ণতার মূল কারণ৷ বন কাটা ও পোড়ানোর ফলেও বাতাসের উষ্ণতা বাড়ছে৷ পুনঃ বনায়ন ও বনভূমি সংরক্ষণ করে আবহাওয়ার উষ্ণতা বা কথিত ‘গ্রীন হাউস’ প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব৷ ভূমির ক্ষয়রোধে গাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ বাতাস ও জলের প্রভাবে ভূমির ওপরের স্তর ক্রমেই ক্ষয়পাপ্ত হয়৷ তাতে জমির উর্বরাশক্তি কমে যায়৷ অনেক সময় উৎপাদনক্ষমতা প্রায় লোপ পেতে বসে৷ গাছ মাটির এই ক্ষয় প্রক্রিয়াকে রোধ করে৷ ভূমিধ্বস থেকে রক্ষা করে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকাকে৷ আবার অনেক প্রজাতির গাছ মাটির গভীরে পুষ্টি মজুদ করে৷ জমিতে জৈব সারের সরবরাহ বাড়ায়৷ মানুষ ও গাছের মধ্যে রয়েছে এক অচ্ছেদ্য সম্পর্ক৷ মানুষ গাছের পরিচর্যা করে, তার উন্নয়ন সাধনে সাহায্য করে৷ অপরদিকে খাদ্য যোগান, বাসস্থান ও ছায়া প্রদান, তাপ ও শক্তি উৎপাদন, ওষুধ সরবরাহ ও পরিবহনের সরঞ্জাম প্রদানে মানুষকে সরাসরিভাবে সাহায্য করছে গাছ৷ মানবজীবনে এত বেশী প্রয়োজনীয় সুবিধায় পৃথিবীর অনেক স্থানে গাছ মানুষের পূজার উপকরণ হিসেবেও পরিগণিত হয়েছে৷ বৃক্ষের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে মহান মানুষেরা বলে থাকেন–ধ্বংস সংঘটিত হওয়ার সময়ে যদি কারো হাতে একটি চারা গাছ থাকে সে যেন সেই বিপদসংকূল মুহূর্তেও তা রোপণ করে দেয়৷

বনজ সম্পদের একটি প্রধান ব্যবহার জ্বালানি কাঠ হিসেবে৷ কোন কোন দেশে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ তাপ ও শক্তি উৎপাদিত হয় জ্বালানি কাঠ থেকে৷ তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বনভূমির পরিমাণ হ্রাস হবার কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এখন জ্বালানি কাঠের ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ ভবিষ্যতে এ ঘাটতির পবিমাণ বাড়বে৷ গাছ ফল দেয়৷ ফল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর৷ কিন্তু আমাদের দেশে ফলের ঘাটতি রয়েছে৷ তাই ফলের মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে৷ অদূর ভবিষ্যতে আমাদের ফলের সরবরাহ বাড়াতে হলে অধিক পরিমাণ ফলের বাগান গড়ে তুলতে হবে৷ তাছাড়া অনেক গাছের ঔষধি গুণ আছে৷ ভারতের অনেক ঔষধি গাছ বিদেশেও রপ্তানি করা হয়৷

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যে একটি দেশের শতকরা ২৫ ভাগ এলাকা জুড়ে বনাঞ্চল থাকা দরকার৷ একসময়ে ভারতে যা বনভূমি ছিল তার মধ্যে গভীর অরণ্য, জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ লক্ষণীয় ছিল৷ কালের আবর্তে এর অধিকাংশই এখন পরিণত হয়েছে বৃক্ষহীন বিরাণভূমিতে৷ বর্তমানে বৃক্ষরাজী আচ্ছাদিত বন এলাকা খুবই কম৷ তাতে হারিয়ে গেছে অনেক বন্যপ্রাণী, লোপ পেয়েছে জীববৈচিত্র্য৷ দেশের উত্তরাঞ্চলে শুরু হয়েছে মরু প্রক্রিয়া৷ জলের ভূগর্ভস্থ স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে৷ বায়ুমণ্ডলে কার্বন–ডাই–ক্সাইডে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে বিনষ্ট হচ্ছে আবহাওয়ার ভারসাম্য৷ ঘন ঘন নেমে আসছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন–বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, সিডর ও আইলা৷ তাছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে আমাদের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও তাতে অদূর ভবিষ্যতে উপকূলীয় এক বিস্তীর্ণ এলাকা জলের নীচে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ এর ফলে উপকূলীয় এক বিশাল জনগোষ্ঠী উদ্বাস্তুতে পরিণত হবার আশঙ্কা করছে বিশ্বের পরিবেশবিদরা৷ এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে এখন বনায়নের ওপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেওয়া দরকার৷

সূত্র ঃ ইণ্টারনেট