জ্যামিতির কোণ বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছিলেন মহর্ষি কপিল

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

‘কুণ্’ ধাতু + ঘঞ্ প্রত্যয় করে আমরা ‘কোণ’ শব্দ পাচ্ছি৷  ‘কোণ’ শব্দের অর্থ হ’ল দুই বা ততোহধিকের মাঝখানে চাপা পড়ে যে ঠিক ভাবে ধবনি দিতে পারছে না.......যথাযথ ভাবে অভিব্যক্ত হচ্ছে না৷ যোগারূঢ়ার্থে ‘কোণ’ বলতে বুঝি দুইটি  বাহু (side) যেখানে অভিন্ন (common) বিন্দুতে মিলছে সেখানে ওই অভিন্ন বিন্দুকে ছুঁয়ে যে ভূম্যংশ (angle) তৈরী হচ্ছে তা’৷ জ্যামিতির কোণ–বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছিলেন আদি বিদ্বান প্রথম দার্শনিক মহর্ষি কপিল৷ তিনিই প্রথম বলেছিলেন একটি সমকোণী ত্রিভুজে মোট ১৮০ ডিগ্রী কোণ আছে ও সমত্রিকোণী ত্রিভুজে কোণগুলি ৬০ ডিগ্রী হয়ে থাকে৷ এ  নিয়ে তিনি অতিরিক্ত কিছু বলেননি–হয়তো বা দার্শনিক গূঢ়তত্ত্ব নিয়ে অত্যধিক ব্যস্ত থাকায় জ্যামিতি নিয়ে আরও কিছু বলবার সময় তিনি পাননি৷ তোমরা অনেকেই হয়তো জান যে বিশ্বের এই প্রথম দার্শনিক ছিলেন রাঢ়েরই কংসাবতী অববাহিকার পাটিঝালদা গ্রামের সন্তান, ও ঝালদা শহরের পাশেই আজও যে কপিলা পাহাড়টি রয়েছে সেখানে বসেই তিনি দার্শনিক চর্চা করে গেছেন, তারই সঙ্গে জ্যামিতির চর্চাও করে গেছেন৷ ঋষি বৃহস্পতি আবিষ্কার করেছিলেন Base2 (ভূমি2)  + Perpendicular2 (লম্ব2) = Hypotenuse2 (কোটি2) [২৯তম উপাপাদ্য]৷ ঘটনাটি এখন নানান মানুষের নাম দিয়ে চালানো হলেও এককালে ভারতীয় জ্যামিতিতে এটিকে বার্হস্পত্য অঙ্কশাস্ত্র বলা হত (সম্ভবতঃ বৃহস্পতির আবিষ্কারের কথাটি ইয়ূরোপে ছড়িয়ে পড়ার পর পরবর্ত্তীকালে এই তত্ত্বটির উদ্ভাবক সম্বন্ধে মতভেদের সৃষ্টি হয়েছিল৷ এ নিয়ে পণ্ডিতেরা আরও গবেষণা করুন)৷ একটি গোরুর পায়ে ক্ষুর ঠুকবার জন্যে তাকে এমন ভাবে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়েছিল যার ফলে তৈরী হয়েছিল একটি ‘ভূমি’ (Base), একটি লম্ব (Perpendicular) ও একটি কোটি (Hypotenuse)৷ সেইখানে তিনি ভূমিগত পরিমাপ করে প্রথম উপলব্ধি করেন Base2 + Perpendicular2= Hyponeuse2 আর তাঁর এই অঙ্কশাস্ত্রের ওপরেই সম্পূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ত্রিকোণমিতি (Trigonometry) পরিমিতি (Mensuration)–এই দুটি অঙ্কশাস্ত্র৷ মহর্ষি বৃহস্পতির গুণাবলী এত সুব্যাপ্ত ছিল যে আজও আমরা ছড়া হিসেবেই বলে থাকি, ‘‘গুণে লক্ষ্মী,  জ্ঞানে বৃহস্পতি’’৷ তবে বীজগণিতের– (A+B)2= A2 +B2 +2AB, এটির আবিষ্কর্তা ছিলেন মহর্ষি কপিল৷ কোণ মাপবার আধুনিক ব্যবস্থার প্রবর্ত্তন কিন্তু কপিল বা বৃহস্পতি করেননি -- করেছিলেন ভিক্ষু নাগার্জুন৷ ইনিই চোলাইয়ের (distillation) বকযন্ত্র (retort) উদ্ভাবন করেন৷ আধুনিক কালে যন্ত্রপেটিকায় (Instrument Box) যে কোণমাপক যন্ত্র দেখে থাকি সেটির কিন্তু আবিষ্কারক ইয়োরোপের গ্রীসে (সংস্কৃতে ‘যবন’ দেশ৷ আরবী ভাষাতে ‘যবন’–জাত ‘ইউনান’ শব্দটি গ্রীসের জন্যে ব্যবহূত হয় ও হেকিমী চিকিৎসাকে বলা হয় ইউনানী চিকিৎসা কারণ এর উদ্ভব গ্রীসে৷ ‘যবন’ শব্দটির অর্থ হ’ল যিনি বৈদিক ব্যবস্থা মানেন না.....এটা কোন পরুষ বাক্য নয়)৷ আর্যভট্ট (যিনি মগধ দেশের কুসুমপুরের সন্তান ছিলেন৷ কুসুমপুর ছিল বর্ত্তমান পটনারই কাছাকাছি কোন স্থান) তাঁর জ্যোতির্বিজ্ঞানের (astronomy) চর্চার জন্যে উন্নততর জ্যামিতি বিজ্ঞানের আবশ্যকতা অনুভব করেন৷ শোণা যায় এজন্যে তিনি কয়েকটি জ্যামিতিক তত্ত্ব–বিশেষ করে কোণ সংক্রান্ত জ্যামিতিক তত্ত্ব আবিষ্কার করেন কিন্তু সেগুলির কোন হদিশই আজকাল পাওয়া যায় না৷ কোণ নিয়ে যথেষ্ট চর্চা তিনি করেছিলেন বলে তাঁকে সেকালের পণ্ডিতেরা ‘কৌণিক’ আখ্যায় সম্মানিত করেছিলেন৷

সেকালের জ্যামিতি মুখ্যতঃ তিনটি উপতত্ত্বের ওপর নির্ভরশীল ছিল–বাহ্বিক (lateral), বার্ত্তিক বা গৌলিক (circular) ও কৌণিক (angular)৷ আর্যভট্টের পর ভারতে অঙ্কশাস্ত্রে আসে এক অনির্দিষ্ট কালের অন্ধকার যুগ৷ আর্যভট্ট, নাগার্জুন ও শ্রীধরাচার্যের মধ্যেকার কালের ব্যবধান খুঁজে বের করা বেশ একটু কষ্টসাধ্য জিনিস৷ যা অল্পস্বল্প পাওয়া যায় তাও মতভেদ কণ্ঢকিত৷

(শব্দ চয়নিকা, ৮/৬)