কুলি ঃ অষ্ট্রিক ভাষায় ‘কুলি’ শব্দ দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়৷ ৰানানেও কুলি/কুলী দুই-ই চলবে৷ ‘কুলি’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল মজুর৷ এই মজুর অর্থে ‘কুলি’ coolie) শব্দটি ইংরেজীতে গৃহীত হয়েছে৷ এটি মোটেই ইংরেজী শব্দ নয়৷ বর্তমানে ‘কুলি’ শব্দটি ইংরেজীতে শ্রমিক ও মুটে-দুই অর্থেই চলে৷ শ্রমিকের নিজস্ব ইংরেজী হচ্ছে ওয়ার্কম্যান Workman) ও ‘মুটে’র ইংরেজী পোর্টার Porter) হ্যাঁ, মজুর অর্থে ৰাংলায় যে শব্দটি চলে সেই ‘মজুর’ শব্দটিও ৰাংলা নয়, এটি এসেছে উর্দু ‘মজ্দুর’ শব্দ থেকে৷ (শব্দটি উর্দূতে এসেছে ফার্সী থেকে)৷ শ্রমিক বা মুটে অর্থে যে অষ্ট্রিক ‘কুলি’ শব্দটি চলে তার স্ত্রীলিঙ্গ রূপ ‘কামিন’৷ গ্রাম্য পথ অর্থে ‘কুলি’ শব্দের প্রচলন আছে৷ এটি কিন্তু দেশজ বাংলা শব্দ৷ শব্দটি পশ্চিম রাঢ়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়৷ প্রভাত-সংগীতে ঝুমুর গানে এই অর্থে ‘কুলি’ শব্দটাকে আমি ব্যবহার করেছি৷
কুড়ি ঃ ‘বিশ’ শব্দের আর একটি জনপ্রিয় বিকল্প শব্দ হচ্ছে ‘কুড়ি’---এসেছে অষ্ট্রিক সূত্র থেকে৷ প্রাচীনকালে অষ্ট্রিক ভাষায় সংখ্যাবাচক শব্দ ছিল না৷ ‘এক’ দেখাতে গেলে হাতের একটা আঙ্গুল দেখাতে হ’ত৷ পাঁচের জন্যে পাঁচটা আঙ্গুল বা একটা হাত, অনুরূপ দশের জন্য দু’টো হাত, পনের-এর জন্যে দু’টো হাত ও একটা পা, বিশ-এর জন্যে দু’টো হাত ও দু’টো পা অর্থাৎ গোটা মানুষটাকেই দেখানো হত৷ সুপ্রাচীন অষ্টরিক ভাষায় ‘কুড়ুড়ু’ মানে মানুষ৷ অর্থাৎ যে সংখ্যাকে ৰোঝাবার জন্যে গোটা মানুষকেই বা গোটা ‘কুড়ুডু’কেই দেখানো হচ্ছে তা ‘কুড়ি’৷ এই কুড়িই ছিল আদিমকালের সর্র্বেচ্চ সংখ্যা৷ জিনিসপত্র কেনবার জন্যে প্রাচীনকাল থেকেই ৰাঙলায় কুড়ির হিসেৰ চলে আসছে---চলে আসছে গণ্ডা-হালি-র হিসেৰ৷ এই কুড়ি-গণ্ডা-হালি সব অনার্য শব্দ৷ কোনটা অষ্ট্রিক, কোনটা মঙ্গোলীয় অর্থাৎ সেগুলিকে ৰলতে পারি সাবেকী বাংলা কিন্তু হাটে-ৰাজারে কেনাবেচায় ‘কুড়ি’ ৰললে সর্বদা যে কেবল ‘কুড়ি’ সংখ্যাকেই ৰোঝায় তা নয়৷ খুলনার গ্রামে দেখেছি, এক কুড়ি লিচু বললে চবিবশটা লিচু ৰোঝাত৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে গৃহীত)