আজ থেকে পনেরোশো বছর আগে আরব দেশে এমনি এক জাহেলিয়া যুগ এসেছিল৷ যেখানে নারী ও শিশুরা চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল৷ বিশেষ করে কন্যাসন্তান হত্যা ও নারীকে পাশবিক নির্যতন এক চরম মাত্রা অতিক্রম করেছিল৷ সমাজপতি ও রাষ্ট্রনেতাদের উদাসীন্যতায় সেই বর্বরতা মানুষের মনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল৷ কিন্তু সে অবস্থারও অবসান ঘটেছিল হজরত মোহাম্মদ নামক এক মহামানবের আবির্ভাবে৷
আজ বাঙলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষে নেমে এসেছে তেমনি জাহেলিয়া অবস্থা৷ নারী নির্যাতন, খুন, বলাৎকার শিশু হত্যা, কন্যা-শিশুর ওপরও পাশবিক নির্র্যাতন সহ নানান অমানবিক অরাজ- কতা জাহেলিয়া যুগকে ছাড়িয়ে গেছে৷ বিশেষ করে কিশোরী ও শিশুকন্যা ওপর পাশবিক নির্যাতন তো রীতিমতো প্রতিটি বাবা-মার মনে ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে৷ যে ভয়ে জাহেলিয়া যুগের বাবা- মায়েরা কন্যা সন্তান হত্যা করত, সেই ভয় আজও পনেরশো বছর পরের মানুষকে ভাবাচ্ছে৷ সত্যি এ এক চরম লজ্জা৷ জানিনা সমাজপতি ও রাষ্ট্রনেতারা এ লজ্জার হাত থেকে মানুষকে বাঁচাবেন কীভাবে?
জাহেলিয়া যুগ ছিল পনেরশো বছর আগের আদিম বর্বরতার যুগ৷ আজ উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ৷ এই যুগে জাহেলিয়ার যুগের অবস্থা মানা যায় না৷ কিন্তু তবু ঘটে চলেছে ঘটনা৷ সুকলে, কলেজে , পথে-ঘাটে, বাসে- ট্রেনে, এমনকি বাড়িতেও শিশু কন্যাসহ কিশোরী মেয়েরা, ঘরের বউ-ঝিরা ধর্ষিতা হয়ে চলেছে সমান তালে৷ এক শ্রেণীর সুকলের শিক্ষক, দপ্তরী, পুলকারের ড্রাইভার, বাসের কন্ডাক্টর, বাড়ির আত্মীয় স্বজন সবাই লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নারীর শরীরের দিকে৷ কী অদ্ভুত এক মনুষ্য-অরণ্যে বাস করছি আমরা৷ বোধ করি পশুদের অরণ্যে গেলেও বাবা-মারা এতটা চিন্তিত হতেন না, যতটা চিন্তিত হচ্ছেন মনুষ্য-অরণ্যে৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে মায়েরা কন্যা সন্তানের বাবাকেও ভরসা করতে পারছেন না৷ কিন্তু এমনটি কেন হলো?
জাহেলিয়া, যুগের মানুষ ছিলেন অজ্ঞ, অশিক্ষিত৷ আজকের মানুষ যথেষ্ট শিক্ষিত তবুও কেন এমনটি ঘটছে? আর এর থেকে মুক্তির উপায়ই বা কী?
আসলে বৈজ্ঞানিক উন্নতির পাশাপাশি আজকের মানুষের আত্মিক উন্নতির জন্য, উন্নত কোনো আধ্যাত্মিক চর্চার ব্যবস্থা তৈরী হয়নি৷ আধ্যাত্মিকতা বলতে এতদিন মানুষ ধর্মমতের প্রথা-পদ্ধতিকেই বুঝে আসছেন৷ কিন্তু ধর্মমতের প্রথা পদ্ধতি, আর আচার-আচরণ যে ধর্মের আধ্যাত্মিকতা নয় এটা এতদিন স্বার্থান্বেষী ধর্মগুরুরা বলেননি৷ তাঁরা নিজেরা গুহায় বা নির্জন স্থানে বসে আধ্যাত্মিক সাধনা করে মুক্তি মোক্ষ পেলেও, সাধারণ মানুষের জন্য কেবল কিছু প্রথা -পদ্ধতি দিয়েই দায় সেরেছেন৷ এর পেছনে কী মনস্তত্ব কাজ করছিল আমার জানা নেই৷ তবে আমার মনে হয়, অল্প শিক্ষিত বা অজ্ঞ মানুষকে দলে ধরে রাখতেই এমন কাল্পনিক অন্ধবিশ্বাসের আশ্রয় তাঁরা নিয়েছিলেন৷ কিন্তু আজকের যুগে তা কতটা প্রাসঙ্গিক?
ধর্মমতের প্রথা পদ্ধতিগুলি আচার-আচরণে কঠোর হলেও তাতে নীতিবাদী তৈরী হবার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ অলীক স্বর্গনরকের বিশ্বাস দৃঢ় করতেই সেই সব প্রথা-পদ্ধতির যতসব জারিজুরি৷
আমার মনে হয় আজকের মানুষের এতসব নৈতিক অধঃপতনের জন্য এইসব ধর্মমতগুলিও অনেকাংশে দায়ী৷ তার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অপব্যবহারও অনেকটা দায়ী৷ সারাক্ষণ ইন্টারনেট ফ্রি পর্ণচিত্র মানুষের সেক্স বৃত্তিকে এতটাই চাগিয়ে তুলেছে যে, তার তাড়ণায় মানুষ বিবেকবুদ্ধি জলাঞ্জলি দিয়ে কুকুর-বিড়ালের মতো রাস্তাঘাটে যৌনকর্ম করছে৷ এমনকি নিজের মেয়ে, মা, বোনকে পর্যন্ত ছাড়ছে না৷ আর তার সঙ্গে মাদকদ্রব্যের অবাধ ব্যবসায়িক ছাড়পত্রও আছেই৷ যে দেশে মাদকদ্রব্য বিক্রি করে সর্র্বেচ্চ রাজস্ব আদায় করা হয়, সে দেশের মানুষের নৈতিকতা কোনো মানদন্ডেই বজায় রাখা সম্ভব নয়৷
অবিলম্বে এই অবস্থা থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে৷ সমাজ, ধর্মমত, রাষ্ট্র সবেতেই বদল আনতে হবে৷ সে যুগে হজরত মহম্মদ এসেছিলেন , আজকের যুগে নোতুন প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্বের মাধ্যমে এই অবস্থার বদল ঘটাতে হবে৷ নোতুন সেই উপযোগ তত্ত্বের মাধ্যমে নারী ও কন্যা শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে, সমাজের সার্বিক কল্যাণ আনতে যে ব্যবস্থাগুলি দ্রুততার সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত আমার মতে তা হলো-
১) ধর্মমতের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসা৷
২) প্রকৃত ধার্মিক ও নীতিবাদে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যে সঠিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আধ্যাত্মিকতার অনুশীলন করা ৷
৩) মাদকদ্রব্য ব্যবহার বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা৷
৪) নারী নির্যাতন ও ধর্ষণে ধর্ষকের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা৷ প্রয়োজনে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করা৷
৫) নোতুন এক প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্বের দ্বারা মানব সমাজের সব রকমের অভাব ও আভোগের পরিপূর্তি করা৷
৬) ধর্মমত, বর্ণ-গোত্রের ঊধের্ব উঠে এক মানব পরিবার গড়ে তোলা৷
পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কিছু শিশু-কিশোরী ধর্ষণের পরিপেক্ষিতে এই লেখার তাগিদ অনুভব করেছি৷ এমনিতে আমি কোনো লেখিকা নই৷ আমি একজন সাধারন নারী৷ সাম্প্রতিককালের এই নারী নির্যাতন আমাকে ভীষণভাবে আহত করেছে৷ আমি সার্বিকভাবে এ সবের প্রতিকার চাই৷
আমার জানা মতে শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের নোতুন প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব (প্রাউট)-এ এর সুস্পষ্ট প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে৷ আমি নিজেও বিশ্বাসী৷ সমাজের সকল মানুষের প্রতি আমার নিবেদন, পিছনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে সামনের দিকে দেখুন৷ হয়তো নোতুন কোনো প্রভাত অপেক্ষা করছে৷ যে প্রভাত নারী, শিশু সবার জন্য এক আলোক উজ্জ্বল পৃথিবী উপহার দেবে৷
- Log in to post comments