পূর্ব প্রকাশিতের পর
সিপিএমের অত্যাচার থেকে মুক্তি লাভের জন্যে জনগণ মমতার নেতৃত্বে সিপি এমের ৩৪ বছরের কুশাসনের অবসান ঘটিয়ে মমতাকে ক্ষমতায় এনেছে৷ তাই বলছিলাম সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস কেউই শান্তির পায়রা নয়৷
দেশ গড়ার নীতির কথা নেই৷ ধর্মমতের উন্মাদনা জাগিয়ে ভোট পাবার রাজনীতিতে জনগণের কল্যাণ সাধন করা যায় না৷ বিজেপি রামকে নিয়ে, হনুমানকে নিয়ে অস্ত্রমিছিল প্রদর্শন করতে বিশেষ উৎসাহী৷ এখন দেখা যাক , রামায়ণ থেকে---রামের জীবনী থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই৷ যেমন তেমন করে ক্ষমতার আসা, না ত্যাগ ও সহযোগিতা করার শিক্ষা৷ রামায়ণে কী দেখি? রাম রাজা হবেন৷ রাজ্যাভিষেকের দিন প্রজাবৃন্দের কী সে আনন্দ! কৈকেয়ী রামকে পিতৃসতোর কথা শুনালেন৷ তখন রাম পিতৃ সত্য পালনের জন্য ১৪ বছরের বনবাসে গেলেন৷ ভরত ছিলেন মাতুলালয়ে৷ অযোধ্যায় এসে মাতা কৈকেয়ীর মুখে নিজের রাজা হবার কথা ও রামের চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসের কথাশুনে ভরত মাকে ভৎর্সনা করলেন৷ আর রামকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রজাদের সঙ্গে নিয়ে রামের কাছে ভরত গেলেন৷ ভরত কত কান্নাকাটি করলেন রাম যাতে ফিরে আসেন৷ রাম ভরতকে নানা ভাবে বুঝিয়ে শান্ত করলেন৷ কিন্তু ভরত রাজা হতে চান না৷ তাই রামের পাদুকা চেয়ে নিলেন ৷ রামের পাদুকাকে রামের প্রতীক হিসাবে সিংহাসনে রেখে ভরত রামের নামেই চৌদ্দ বছর ধরে প্রজাপালন করলেন৷ এই রাম ও ভরতের চরিত্র রাজ্যলাভের লোভ নয়, ত্যাগ ও প্রীতির শিক্ষাই দেয়৷ কিন্তু বিজেপি পার্টির রামকে নিয়ে ধর্র্মেন্মদনার সঙ্গে হাতে অস্ত্র নিয়ে মিছিলে তো রাম বা ভরতের জীবনের শিক্ষার ছিটেফোঁটা টুকু নেই৷ বাংলার গ্রামে গঞ্জের মানুষেরা নিয়ম করে রামায়ণ পাঠ করে থাকেন রামায়নের থেকে শিক্ষালাভের জন্যে --- যে রামের মত বড় ভাই,ভরতের মত ত্যাগী ও লক্ষণের মত ভাই হওয়ার জন্যে৷ আর সীতাার মত সহিষ্ণু নারী হওয়ার জন্যে৷ কু-সংস্কারাচ্ছন্ন ধর্র্মেন্মদনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে প্রভাব সৃষ্টি করে তাদের ভোট নেওয়া যেতে পারে কিন্তু মানুষের তথা সমাজের কল্যাণ করা যায় না৷ যতদিন মানুষ কু-সংস্কারের কূপমণ্ডুকতায় ডুবে থাকবে ততদিন তাদের বিকাশ ঘটানো যাবে না, তাদের কল্যাণ সাধন করাও যাবে না৷
পশ্চিমবঙ্গবাসীদের বোট পাওয়ার জন্যে আজকাল রবীন্দ্র প্রশস্তি, ঘটা করে বিবেকানন্দের জন্মদিন পালন, বিবেকানন্দের ভিটে বাড়ি দর্শন ইত্যাদিতে মন দিয়েছে বিজেপি নেতারা৷ বিজেপির ইস্তেহারে ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে তিনি হলেন প্রকৃত এ বাংলার রূপকার৷ কিন্তু বলা হয়েছে অন্যান্য পার্টিরা শ্যামা প্রসাদের মহত্বক ভুলে গেছে৷ এখন প্রশ্ণ যে, শ্যামাপ্রসাদের তৈরী জনসংঘ পার্টিকে তো বিলুপ্ত করা হয়েছে৷ নাম ও প্রতীক চিহ্ণ সব পাল্টে দেওয়া হয়েছে৷ জনসংঘের প্রতীক সেই প্রদীপ ও আর নেই৷ তাই বলি, শ্যামা প্রসাদের প্রশস্তি গাওয়া কী এদের মুখে মানায়? রবীন্দ্রপ্রীতি মুখে বললে চলবে না৷ কাজে চাই৷ রবীন্দ্রনাথ যে বাংলা ভাষায় কাব্য লিখে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন, সেই বাংলা ভাষার বিকাশের জন্যে তো বিজেপি আদৌ আগ্রহী নয়৷ বরং বাঙলাকে দমিয়ে বিজেপি হিন্দী সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠাতেই আগ্রহী বেশী৷
যাইহোক, দেশের সার্বিক উন্নয়নের কথাতে আসি৷ সবাই উন্নয়নের কথা বলেন৷ পশ্চিমবঙ্গে মমতাদেবীও বলছেন৷ মমতাদেবীর কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, রূপশ্রী প্রভৃতি প্রশংসনীয়ও তবে এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলি মানুষের নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন না হলে কোনো উন্নয়ন শেষ পর্যন্ত সফল হবে না৷ মানুষের নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন বলতে বোঝায়, সাধারণ প্রাকৃতিক বা পশুসুলভ মানুষ কতখানি নীতিবান অর্থাৎ নৈতিক মানুূষ হয়েছে আর নৈতিক মানুষ কতখানি বিশ্বভ্রাতৃত্ব বোধে উন্নীত হয়েছে৷ স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায় হলো পশুসুলভ মানুষ থেকে মনুষত্বে আর মনুষ্যত্ব থেকে দেবত্বে উন্নীত হওয়াই হলো মানবজাতির প্রগতি বা বিকাশ৷ মানুষের নৈতিক বিকাশটাকেই বলে মানবজীবনের মূল্যবোধের বিকাশ৷ এই মূল্যবোধটুকুকে আজ জাগানোর বেশী প্রয়োজন৷ বিবেকানন্দ বলতেন, Man making mission--- মানুষ তৈরীটাই আমার ব্রত৷ সমাজের এই মানুষ তৈরী করাটা মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত৷ কেবল দু’টাকায় চাল বিলিয়ে ভোট পাওয়ার রাজনীতি করলে হবে না৷ এর থেকে বেশী কিছু পেলে মানুষ তা ভুলে যাবে৷ এই তো বিজেপির ইস্তেহারে বলা হয়েছে, দারিদ্র্যসীমার নীচের মানুষদের - দু টাকা কেজি চালের সঙ্গে উন্নতমানের মসুর ডাল কম দামে দেওয়া হবে৷ এইভাবে আরো বেশী প্রতিশ্রুতি পেলে তো এবার সাধারণ মানুষ তৃণমূল ছেড়ে তো বিজেপির দিকে ঝুঁকবে৷ তাই কেবল ভৌতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন উন্নয়ন করে মানুষের কল্যাণ সাধন করা যায় না৷ এর জন্য মানুষকে আদর্শগত ভাবধারাতে উন্নীত করতে হবে--- যা হবে স্থায়ী বিকাশ৷ কোন দেশকে উন্নত করতে হলে চাই একটা নীতিগত বা আদর্শগত ভাবধারা৷ প্রতিটি মানুষ চায় ব্যাপ্তি অর্থাৎ বিকাশ৷ যথার্থ বিকাশ তো প্রকৃতপক্ষে আধ্যাত্মিকতার দ্বারা সম্ভব৷ কেবল ভৌতিক ক্ষেত্রের উন্নয়নে মানুষের মনের ব্যাপ্তি ঘটে না৷ তাতে মানুষের মন আরও বেশী সংকীর্ণ হয়ে যায় ফলে জাগে সংকীর্ণ স্বার্থ সিদ্ধি করার মানসিকতা৷ এর ফলে স্বার্থে স্বার্থে দ্বন্দ্ব লাগবে ও পরস্পর সংঘর্ষ হবে৷ জড়বাদী সিপিএম যখন একছত্র ক্ষমতাশালী হয়ে উঠল তখন শুরু হয়ে গিয়েছিল অন্তর্দ্বন্দ্ব৷ যার ফলে সিপিএম পার্টির আজ ক্ষয়িষ্ণু পার্টিতে পরিণত হয়েছে৷ তেমনি শুধু উন্নয়ন করে চললে মানুষের স্বার্থান্ধ মানসিকতা তো দূর হবে না৷ আজ ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, পদের জন্যে তো খবর কাগজে দেখতে পাচ্ছি তৃণমূলীদের অন্তদন্দ্বের ঘটনা৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে একই কেন্দ্রের জন্যে তৃণমূলীদের ৪/৫ জনের মনোনয়ন দেওয়ার ঘটনা কাগজে কাগজে প্রকাশিত হচ্ছে আর নেতারা কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছেন৷ তাই চাই আদর্শগত বিকাশ, মূল্যবোধের বিকাশ, নৈতিকতার বিকাশ ও এর জন্যে চাই মানসিক ব্যাপ্তির সাধনা৷ আজ বাংলায় এ হেন পরিস্থিতিতে মমতাদেবীর উচিত একটা সর্বানুস্যুতত আদর্শকে গ্রহণ করা৷ আর সেই আদর্শ হ’ল শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী প্রবর্ত্তিত আনন্দমার্গের সর্বানুস্যুত আদর্শ---অর্থাৎ যার মধ্যে রয়েছে একাধারে সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নতি, সাংসৃকতিক উন্নতি, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি---তথা মানুষের ব্যষ্টিগত তথা সমস্তি জীবনের সর্বাত্মক উন্নতি৷
মহাপুরুষেরা যুগে যুগে আসেন যুগোপযোগী সমস্যা সমাধানের জন্য৷ শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের আবির্র্ভব হয়েছিল ভারতীয় ধর্মাদর্শ তথা বেদ-বেদান্তকে প্রাশ্চাত্ত্য প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্যে৷ তাঁদের যুগে এটাই ছিল বড় সমস্যা৷ আর আজকের প্রধান সমস্যা হ’ল সমাজে পুঁজিবাদী তথা ভোগবাদী ও জড়বাদী মানসিকতার প্রাবল্য তার ফলে চরম অর্থনৈতিক সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে মানুষের চরম নৈতিক অধঃপতন৷ মূল্যবোধকে হারিয়ে মানুষ পশুত্বের দিকে এগিয়ে চলেছে৷ সারা বিশ্বজুড়ে উগ্র জাতীয়তাবাদের সমস্যা ও ধর্মীয় সাম্প্র্রদায়িকতার ফলে সারা বিশ্বজুড়ে হিংসা ও অশান্তির পরিবেশ তৈরী হয়েছে৷ বিশ্বের এই সকল সমস্যার সমাধানের জন্য শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তি দিয়েছেন একাধারে আধ্যাত্মিক দর্শন ও সাধনা, নব্যমানবতাবাদ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দর্শন প্রাউট (প্রগতিশীল উপযোগতত্ত্ব), মাইক্রোবাইটাম তত্ত্ব৷ আজকের নিপীড়িত মানবতার মুক্তির জন্যেএছাড়া অন্য কোন পথ নেই৷ মমতাদেবীকে সফলতা অর্জন করতে হলে শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর সর্র্বনুস্যুত জীবনদর্শনকে এই রাজ্যে বাস্তবায়িত করতে চেষ্টাশীল হতে হবে৷ তবেই বাঙলার প্রকৃত বিকাশ ঘটবে---সেই সঙ্গে বাঙলা ভারত ও বিশ্বকে পথ দেখাবে৷ এক নোতুন পৃথিবী গড়ে উঠবে শান্তি-মৈত্রী-প্রেম-মহানুনভবতার আলোয়৷ মহামতি গোখলে বলেছিলে—What Bengal thinks today India thinks to-morrow৷ এখন তো দেখছি What Modi & Amit Saha think today Bengal thinks to-morrow৷ এতো বাঙালী জাতির পক্ষে লজ্জার ব্যাপার! তাই, কিন্তু, শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের ওরফে শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তির ভাবধারাতে বাংলা পুষ্ট হয়ে সারা বিশ্বকে পথ দেখাবে৷
এ এক ধ্রুব সত্য৷ মমতাদেবী আজ এ আদর্শ গ্রহণ না করলে অদূর ভবিষ্যতে যোগ্য মানুষ এসে এই আদর্শ গ্রহণ করে বাঙলা থেকে বিশ্বস্তর পর্যন্ত সমস্যা দূর করবে৷ তখন বাংলা বিশ্বে বিশেষ স্থান সমাজের সমস্ত সমস্যা দূর করবে৷
- Log in to post comments