কয়েকটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ ও পাতার ব্যবহার

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

গাঁদাল পাতা ঃ

পরিচয় ঃ গাঁদাল পাতার সংস্কৃত নাম খরগন্ধা/খরগন্ধিকা/খরগন্ধনিভা৷ তিনটে শব্দেরই অর্থ গাঁদাল পাতা৷ খর মানে ....... পায়খানার দুর্গন্ধ৷ যে পাতায় কতকটা ওই ধরণের গন্ধ রয়েছে তা খরগন্ধা৷ গাঁদাল পাতার অন্য সংস্কৃত নাম হচ্ছে–কৃষ্ণপল্লবি/কৃষ্ণপল্লবী/কৃষ্ণপল্লবিনী৷ ঙ্মলৌকিক সংস্কৃতে ৰলা হয় গন্ধভাদালী ৰ৷ গাঁদাল একটি লতানে উদ্ভিদ৷

উদরাময় রোগে গাঁদাল ঃ গাঁদাল পাতা পেটের অসুখ বা ডায়ারিয়ার ড্ডন্ত্রব্জব্জড়প্সন্দ্ মহৌষধ ঙ্মশুক্তোর সঙ্গে বা পাতলা তরকারীর ঝোলের সঙ্গেৰ৷ গন্ধটি ভাল না হোক, গুণে অপরিসীম হচ্ছে আমাদের গাঁদাল পাতা৷ পেট রোগা মানুষেরা, ভুক্তভোগী মানুষেরা দেখেছেন দুর্গন্ধ যুক্ত এই গাঁদাল পাতার কী সৌজন্যগত মহিমা

কোষৰৃদ্ধি, শ্লীপদ রোগে ও বাতরোগে গাঁদাল ঃ গাঁদাল পাতা চাটুতে সেঁকে রোগগ্রস্ত স্থানে দৃঢ় ভাবে ৰেঁধে রাখলে কোষৰৃদ্ধি ণ্ড্রম্ভস্তুব্জপ্সন্তুন্ ও গোদ রোগের (শ্লীপদ) উপশম হয়৷ গাঁদাল পাতা ভেজে খেলে তা বাত রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে৷২

কালমেঘ ঃ

কালমেঘ এক প্রকার গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ৷ এ থেকে পেটের রোগের ও ৰহুমূত্র রোগের নানান ঔষধ তৈরী হয়৷ পেট রোগা লোকেরা ও যকৃতরোগী কালমেঘের ৰড়ি তৈরী করে সকালে খালি পেটে খেলে ভাল ফল পাবে৷ এতে যকৃত ও হজমের গোলমাল সেরে যায়৷৩

নিশিন্দা ঃ

নিশিন্দা একটি ঔষধীয় গুণযুক্ত গাছ৷ রাঢ়ী ৰাংলায় একে ‘বোনাই’ ৰলা হয়৷ এতে প্রচুর পরিমাণে ঔষধীয় গুণ আছে৷ স্বাদে খুবই তেঁতো বলে গোরু–ছাগলে একে খায় না৷ পেটের পক্ষে নিশিন্দা খুবই উপকারী৷ তিক্ততা নিৰন্ধন এই নিশিন্দা পাতা কীটনাশক৷ রেশমী ও পশমী বস্ত্রাদির মধ্যে নিশিন্দা পাতা রেখে দিলে তাতে সহজে পোকা লাগে না৷৪

চিড়ের ক্কাথ ও উদরাময় রোগ ঃ

চিড়ের ক্কাথ মানে চিড়ে ভিজিয়ে বা সেদ্ধ করে, তাকে ভাল ভাবে চট্কে নিয়ে পাতলা কাপড়ে ছেঁকে নেওয়া তার রস৷ চিড়ের ক্বাথ উদরাময়ের খাদ্য, পথ্য ও ঔষধ তিনই৷ এই গুণ সেদ্ধ চিড়ের চেয়ে আলো চিড়ের (আতপ চিপিটক বা আতপ চালের চিড়ে) বেশী৷৫

ছাঁচি কুমড়ো বা চাল কুমড়ো ঃ

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ ছাঁচি কুমড়ো সাধারণতঃ মাটিতে হয় না৷ ঘরের চালাতে বা মাচাতে এই লতানে গাছটাকে তুলে দিতে হয়৷ এর জন্যে ছাঁচি কুমড়োকে গ্রাম–ৰাংলায় অনেকে চালকুমড়োও ৰলেন৷ এরও তিনটি ঋতুগত প্রজাতি রয়েছে৷ বর্ষাতী চালকুমড়োকে অবশ্যই মাচায় অথবা ঘরের চালে তুলে দিতে হয়৷ শীতের প্রজাতির ছাঁচি কুমড়োকে মাটিতেই ৰেড়ে যেতে দেওয়া হয়৷ তবে কেউ ইচ্ছে করলে মাচায় তুলে দিতে পারেন৷ গ্রীষ্মকালীন চালকুমড়ো মাটিতেই ৰেড়ে যেতে থাকে৷ (একেও) কেউ ইচ্ছে করলে মাচায় তুলে দিতে পারেন৷ তবে বর্ষাতী চালকুমড়োকে মাচায় তুলে দিতেই হবে, নইলে পোকার আক্রমণে ফলটি নষ্ট হবেই.....গাছও নষ্ট হবে৷

ফলের আকার ৰাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর বাইরেকার সবুজ রঙটার ওপর একটা শাদা আস্তরণ পড়তে থাকে৷ তাই ৰাংলার কোন কোন জায়গায় একে চুনো–কুমড়োও ৰলা হয়৷ রাঁচী অঞ্চলে বলা হয় ‘রাখাস কোহড়া’৷ বিহারের কোথাও কোথাও বলা হয় ‘ভুয়া’, কোথাও কোথাও বলা হয় ‘ভতুয়া’–ভাল হিন্দুস্তানীতে বলা হয় ‘পেঠা’৷ ছাঁচি কুমড়ো ভারতের একটি সাবেকী জিনিস.... বাইরে থেকে আসেনি৷ প্রাচীন ৰাংলায় যাঁরা শাক্ত দেবী–দেবতাকে বৈষ্ণবীয় রীতিতে অর্চনা করতেন, তাঁরা বলি দানের উদ্দেশ্যে পশু–পক্ষীর পরিবর্ত্তে আখ, কলা, সুপুরী, ছাঁচি কুমড়ো বলি দিতেন৷ বলি দানের অধিকার ছিল কেবল পুরুষের৷ তাই দীর্ঘকাল ধরে আখ, কলা, সুপুরী, ছাঁচি কুমড়ো মেয়েরা কাটতেন না৷

উদররোগে, অগ্ণিমান্দ্যে ও স্নায়ুতন্তুর রোগে ছাঁচি কুমড়ো ঃ পাকা ছাঁচি কুমড়ো উদর রোগের পক্ষে ভাল৷ দীর্ঘকালীন উদর রোগে ছাঁচি কুমড়ো ভাল ফল দেয়৷ ছাঁচি কুমড়োর ঘণ্ট বা নারকোল–কুমড়ি ৰাঙালীর একটি প্রিয় ভোজ্য৷ স্নায়ুকোষ ও স্নায়ুতন্তুর রোগেও কাঁচা বা পাকা ছাঁচি কুমড়ো ঔষধের কাজ করে৷ ছাঁচি কুমড়োর মধ্যে উদর ও স্নায়ু রোগের ঔষধীয় গুণ নিহিত থাকায় মধ্য যুগে ৰাঙালী মেয়েরা অঘ্রাণ মাসে নারকোল কুরুনিতে ছাঁচি কুমড়ো কুরে ডাল–বাটার সঙ্গে মিশিয়ে বড়ি তৈরী করতেন৷ ছাঁচি কুমড়ো অগ্ণিমান্দ্যের ন্প্সব্দব্দ প্সন্দ্র হ্মন্দ্বব্ধন্ব্ধন্দ্বগ্গ্ ঔষধ ঙ্মরস বের করে সেই রস বা তরকারী হিসাবেৰ৷ ছাঁচি কুমড়ো যত কচি–কাঁচা অবস্থায় থাকবে ততই সে স্নায়ুকোষ ও স্নায়ুতন্তুর পক্ষে ভাল৷ আর যত বেশী পূর্ণত্বের দিকে যেতে থাকে তত বেশী যকৃত ও পেটের রোগের ভাল ঔষধ৷ শুকনো অবস্থাতেও এ অগ্ণ্যাশয়ের ঔষধ৷

ছাঁচি কুমড়ো ৰীজের তৈল ও চর্মরোগ ঃ আয়ুর্বেদে ছাঁচি কুমড়ো ৰীজের তেলের ঔষধীয় ব্যবহার আছে৷  ছাঁচি কুমড়ো ৰীজের তেল চর্ম রোগের ঔষধ৷

ছাঁচি কুমড়োর মোরব্বা ঃ উত্তর ভারতের আগ্রার ও পূর্ব ভারতের শিউরীর (বীরভূম জেলা) পেঠা বা ছাঁচি কুমড়োর মোরব্বা প্রসিদ্ধ৷ কলকাতার কাছাকাছি এলাকায় ছাঁচি কুমড়োর মোরব্বাকে কেউ কেউ ‘কুমড়োর মেঠাই’ ৰলে থাকেন৷

                                    (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে)