তালীবর্গের অন্যতম গাছ হচ্ছে খেজুর৷ সংস্কৃত ‘খর্জুর’ শব্দ থেকে ৰাংলায় তদ্ভব শব্দ থেকে ৰাংলায় তদ্ভব শব্দ খাজুর বা খেজুর এসেছে৷ খেজুর গাছের সঙ্গে ভারত ও মধ্য এশিয়ার লোকেরা দীর্ঘকাল থেকেই পরিচিত৷ তাই বৈদিক ও লৌকিক সংস্কৃত দুইয়েতেই ‘খর্জুর’ রয়েছে৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানান্ প্রজাতির খেজুর আছে৷ ভারতীয় বা ইণ্ডিকা প্রজাতির খেজুরেরও মোটামুটি চারটি শাখা আছে---(১) গাঙ্গেয় (গ্যাঞ্জেলাইটিস), (২) রাজস্থানী, (৩) গুজরাতী,(৪) দক্ষিণী (ডেকানাইটিস্)৷ এদের মধ্যে স্বাদে-গুণে গুজরাতী খেজুর সর্বোৎকৃষ্ট৷ রাজস্থানী খেজুরও উন্নত মানের৷ দক্ষিণী খেজুর সাধারণ মানের আর গাঙ্গেয় খেজুরের আঁটির (সংস্কৃত ‘অস্থি’ শব্দ থেকে প্রাকৃতে ‘অট্ঠি’ শব্দ এসেছে৷ তার থেকে ৰাংলায় ‘আটি’ ও ‘আঁঠি’ দু-ই চলতে পারে)৷ গায়ে খোলা (আগেই ৰলেছি, কলকাতার ৰাংলায় আমরা ‘খোসা’ শব্দ ব্যবহার করি না৷ তবে ৰাঙলায় স্বীকৃত রীতি হচ্ছে--- আবরণটা কঠোর হলে তাকে ৰলা হয় ‘খোলা’ আর নরম হলে ৰলা হয় ‘খোসা’৷ যেমন নারকোলের খোলা কিন্তু আঁৰের খোসা৷ কলকাতার ৰাংলায় দুটোকেই খোলা বলা হয়৷) লেপ্ঢে থাকে৷ অর্থাৎ শাঁস ৰলতে বিশেষ কিছুই নেই৷ কিন্তু এই গ্যাঞ্জেলাইটিস্ প্রজাতির খেজুরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গাছগুলো একেবারে রসে টইটম্বুর৷ এই গাছগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে তাড়ি ও রস উৎপন্ন হয়ে থাকে৷ এখানেও সেই তালগুড়ের মত ব্যাপার৷ সাধারণতঃ বৈষ্ণব ও মুসলমানেরা তাড়ি খান না৷ তাই তাঁরা খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরী করতে উৎসাহী৷ খেজুর গুড়ের মিষ্টতা ইক্ষু গুড়ের (ৰাংলায় ইক্ষু থেকে ‘আখ’ ও কুশেরুকা থেকে ‘কুশিয়ার’ শব্দ এসেছে৷ দু’টোই সংস্কৃতজাত তদ্ভব) চেয়ে তো কমই, তালগুড়ের চেয়েও কম৷ কিন্তু স্বাদে গন্ধে মনোরম৷ গুণের দিক দিয়ে তালগুড়ের চেয়ে কম হলেও কেবলমাত্র শীতকালীন পণ্য ৰলে গণ্য হলেও এর আকর্ষণ অপ্রতিরোধ্য৷ এছাড়া খেজুর গাছের একটা মহা সুবিধা হচ্ছে এই যে তাল বা নারকোলের মত এর কান্দি থেকে রস বের করতে হয় না৷ গা চেঁছে রস বের করতে হয়৷ তাই তাল ও নারকোলের কেবল পুরুষ ও স্ত্রী গাছেই কান্দি হয় আর তা থেকেই রস পাওয়া যায়৷ আর বন্ধ্যা গাছে কান্দি না থাকায় রস পাওয়া যায় না৷ কিন্তু খেজুরের গা চেঁছে পাওয়া যায় ৰলে ৰন্ধ্যা গাছ থেকেও রস পাওয়া যায়৷
খেজুরের রস ও গুড় গরম হাওয়া সহ্য করতে পারে না ৰলে এর রস টানা ও গুড় তৈরী করা শীতকালেই সম্ভব৷ কিন্তু গা চেঁছে রস পাওয়ার একটা কুফল এই যে মানুষ অতি লোভে গাছের স্বাস্থ্যের কথা না ভেবে যত পারে রস নিতে থাকে৷ তার ফলে গাছের অকালমৃত্যু তো হয়ই, যারা বেঁচে থাকে তারাও ফল দিতে পারে না৷ দিলেও তা নিষৃকষ্ট মানের দিয়ে থাকে৷ খেজুর গাছগুলোকে এই সর্বনাশা লোভের হাত থেকে বাঁচবার জন্যে এই সম্পর্কে আইনগত বা সমাজগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার৷
খেজুরের তাজা রস কৃমি ব্যাধির, লিবারের ব্যাধির, শোথ রোগের ও মুত্রস্তম্ভের ঔষধ৷ এই রস গেঁজে গেলে তাড়ি হয়৷ শুদ্ধ বৈয়াকরণিক বিচারে এই গেঁজানো রসকে ‘তাড়ি’ না ৰলে ‘খর্জুরী’ বলা সঙ্গত কারণ তাড়ি তো হবে তাল থেকে৷ ---শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত গ্রন্থ থেকে