কিছু মানুষ আছে যাদের কুকার্য ধরা পড়বার ভয়ে তারা তাদের সেই কুকার্যের সমর্থনে যুক্তি খোঁজে৷ তারা ‘খল’ পর্যায়ভুক্ত৷
আমি একজন চাটুজ্জে–গিণ্ণীকে জানতুম৷ তিনি দুর্গা পূজার সময় প্রায়ই পূজামণ্ডপে তো থাকতেনই, যেখানে ভোগ রান্না হত সেখানেও তাঁকে খুব বেশী ঘোরাফেরা করতে দেখা যেত৷ একবার তিনি শাড়ীর নীচে লুকিয়ে কী যেন একটা নিয়ে যাবার সময় স্বেচ্ছাসেবকের হাতে ধরা পড়লেন৷ স্বেচ্ছাসেবকদের সাহসই হল না তাঁর জিনিসটা তল্লাসী করার৷ তারা পূজা কমিটির সেক্রেটারী জনৈক ঘোষ মশায়কে ডাকলেন৷
ঘোষ মশায় আমাকে বললেন–কী করা যায় বলুন তো
আমি বললুম–জনৈক মহিলাকে ডেকে তল্লাসি করে দেখ কী জিনিসটা নিয়ে যাচ্ছেন মহিলা৷ ছানাবড়াও হতে পারে... ধোকার ডালনাও হতে পারে... পোলাউও হতে পারে, আবার রুই মাছের কাঁটাও হতে পারে৷
তল্লাসি করা হল৷ দেখা গেল, রয়েছে পোলাও আর পায়েস৷ ধরা পড়বার পর মহিলা চীৎকার করে গালি দিতে দিতে হাত–পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে বললেন–পাপীতে দেশটা ভরে গেল অধর্ম....অধর্ম....এই অধর্ম সইবে না৷ নারায়ণ, বৈকুণ্ঠ থেকে তুমি সবই দেখছ৷ ঘোর কলি.....ঘোর কলি.....এই অধর্ম কতকাল চলবে৷
ঘোষ মশায় বললেন–অধর্ম মানে আপনি চুরি করে লোকের ঘর থেকে জিনিস নিয়ে পালাবেন আর অধর্ম করলুম আমরা আপনার চুরি করা অধর্ম হল না, আমাদের ধরাটা অধর্ম হল
চাটুজ্জে গিণ্ণী বললেন–চুরি কোন হারামজাদা বলে চুরি আমি তো মায়ের প্রসাদ নিয়ে যাচ্ছিলুম৷ মায়ের প্রসাদ পেয়েই না আমি আজন্ম নয়, জন্ম জন্ম বেঁচে আছি৷ কোন হারামজাদা না মায়ের প্রসাদ পেয়ে বেঁচে আছে তোরা কি নিজের পায়সায় খাস? এত আস্পর্ধা যে ছোট মুখে বড় কথা বলে৷ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবাই মায়ের প্রসাদ পেয়ে বেঁচে আছে...আমিও আছি, তোরাও আছিস৷ একে বলছিস চুরি তোদের সব্বনাশ হবে....তোদের সব্বনাশ হবে৷
আমি ঘোষ মশায়কে বললুম–দেখ, তোমার সবর্বনাশ হয় হোক, তবুও তুমি সর্বসাধারণের সমক্ষেই চুরিরাণী চাটুজ্জের মুখোস খুলে দাও৷
আমি আর সেখানে দাঁড়াইনি কারণ তখন সেখানে ছুটে চলেছে গালির ফোয়ারা৷ (শব্দ চয়নিকা ১৪শ খণ্ড)