মন্দার মূল কারণ সরকার ও ব্যবসাদারদের চরম শোষণ

লেখক
প্রভাত খাঁ

সারা পৃথিবী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে  অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা গরিব দেশ গুলির এমন হলো  যার ফলে ভারতের মতো  বিরাট রাষ্টের অবস্থা শোচনীয় হলো উভয় দিক থেকে৷ ভয়ংকর দুর্ভিক্ষেরই কবলে পড়ে৷ তারপর শোষক সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকার অখণ্ড ভারতবর্ষকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে কয়েক টুকরো করে ভাগ করলে ভারতে উদ্বাস্তু  হিন্দুরা পাকিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নিলো প্রাণের দায়ে৷ লোক সংখ্যা বেড়ে গেল৷ একে এই ভারতবর্ষ গরিব দেশ তার ওপর লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু  আসায় অর্থনৈতিক সামাজিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠল৷ তখন বাজার এর অবস্থা হলো চরম অর্থনৈতিক মন্দা৷ অনাহারে মানুষ যে কতো মারা গেল তার ইয়ত্তা নেই৷ ধীরে ধীরে মন্দা কিছুটা কাটিয়ে উঠলো দেশ৷  কিন্তু স্বাধীন দেশের  গণতান্ত্রিক  সরকারকে কঠোর সংকটের মধ্যে চরম  অভাব ও অনটনকে  সহ্য করে সেদিনের সেই কোটি কোটি নিম্নমধ্যবিত্ত ও গরিবরা যাদের সংখ্যা সিংহভাগ ও তখন রেশনিং ব্যবস্থার জন্য কিছুটা প্রাণে বাঁচলো৷ তবু সেই অবস্থায় ধনী ও দরিদ্রদের হয়ে গেল বড়ই আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে পার্থক্য৷ তাছাড়া দেশের শাসনব্যবস্থার ভার গ্রহণ করেন যাঁরা তারা অধিকাংশই ধনী অবস্থা ঘরের সন্তানগণ৷ তাঁরাই দেশ শাসন করতে থাকে ইংরেজের ফেলে যাওয়া আইন ও সমাজ ব্যবস্থার  মধ্যে  থেকে৷ ভারতের সংবিধান তৈরী হয় অনেক চিন্তা ভাবনা করে৷ সেই সংবিধান কিন্তু বৃহত্তম সংবিধান৷ তাকে যাঁরা নির্বাচনের  মাধ্যমে শাসনভার নেয় সেটাকে কয়েক বছরের মধ্যে জনপ্রতিনিধিরা দলীয় স্বার্থে সংস্কার করে৷ তাতে দেখা গেল শাসকদলের ও ধনীদের  সুবিধা হলো কিন্তু সরকার শ্লোগান দিল গরিবী হঠাও৷ দেখা গেল গরিবরাই তাতে হঠছে অর্থাৎ তাদের  তেমন সুবিধা না হয়ে  জীবনযাপনটা কঠিনতর হচ্ছে৷ গরিবী হঠলো না  গরিবরাই ধবংস হয়ে গেল! মাঝে বাজার কিছুটা তেজী হয় কিন্তু মন্দার আগমণে দেশ ধনী ও গরিবের মধ্যে পার্থক্য বেড়েই চলে৷ এই যে মন্দা এর মূল কারণ হল গরিব তৃণমূল স্তর থেকে আর উচ্চতম স্তর পর্যন্ত দলতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রের শাসনে  পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত শাসনেই গরিব দেশের রাজকোষ শূন্য হতে থাকে৷ তাই সিংহভাগ গরিব মানুসের  উপর দেশের নির্বাচিত  সরকার এমন কর প্রয়োজনীয় জিনিসের উপর চাপাতে লাগলো তাতে গরিবরাই রক্তশূন্য হতে লাগলো৷ আর দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধিতে ও চরম বেকার সমস্যায় দেশ একেবারে ধবংসের দিকেই এগিয়ে চলেছে৷ মন্দা পুনরায় দারুণভাবে নানা কারণে এসে পড়েছে ও অদূর ভবিষ্যতে  অর্থনৈতিক  মন্দার কারণে সামাজিক অর্থাৎ ভৌতিকস্তরে, মানসিক স্তরে এমনকি আধ্যাত্মিক স্তরে চরম প্রভাব ফেলবে  ও ফেলছে৷ ফলে সমাজের ৭০/৭৫ শতাংশ যারা নিম্নমধ্যবিত্ত ও গরিব তারা শেষ হয়ে যাবার  অবস্থায় আসছে৷ তাই বলা হচ্ছে শাসক দলের  ত্রুটিপূর্ণ শাসনব্যবস্থা মন্দার জন্ম হয়৷ অর্থনীতিবিদগণ, তাই বলছেন যে শাসকদলকে শাসনব্যবস্থায় যে নীতি গ্রহণ করে চলছে সেই অর্থনৈতিক শোষন-এর নীতি৷ তাদের ঐ পথ পরিবর্তন করতে হবে তা হলে মন্দা কাটবে৷ তাই বলা হয় ধণতন্ত্র ভাতে মারে আর জড়বাদতন্ত্র (কমিউনিষ্ট) আঁতে মারে৷ তাই বাঁচতে হলে প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্বে আশ্রয় নিতেই হবে৷ মন্দার কারণ হলো লোভী শাসকদের  সর্বস্তরে শোষণ, প্রগতিশীল উপযোগতত্ত্বটাই হলো বাঁচার পথ৷ এই মন্দার  কারণে মানুষ হারিয়ে ফেলতে পারে,  জীবনের নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ৷ অভাবে তাদের ভালো স্বভাবটাই হারিয়ে যাবে৷ আজ সেই কারণে আচরণে এমন অবস্থায় এসেছে মানুস--- যাতে পশুরাই হাসে৷ গরিব হারিয়ে বসবে জীবনের সবকিছুই, এতে সমাজের সেবামূলক সংঘটনগুলি জনগণের আর্থিক সাহায্যে চলে সেগুলি দুর্বল হয়ে পড়বে৷ সাহায্য না পেলে আর অশ্লীল সাহিত্য, স্থূল চিন্তা ভাবনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষের  নৈতিকতা উদার মানবিকতাও ক্ষয় প্রাপ্ত হবে ফলে নিছক বাঁচার লড়াই এর জন্য  অসামাজিক কাজ  ঘটনা বেড়েই যাবে৷ এক জঙ্গলের  রাজ্য পরিণত হবে৷ শিক্ষা ব্যবস্থায় এসে দাঁড়াবে চরম অধঃপতন৷ সব ব্যাপারে মানুষকে মানুষ ঠকাবে, দেশের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটবে৷ দুর্গতি আরো বাড়বে সর্বস্তরে৷ প্রাকৃতিক  বিপর্যয়ও মন্দার আংশিক কারণ হতে পারে৷ বাজার তখনই চাঙ্গা যখন জনগণের  হাতে ক্রয়ক্ষমতা থাকে ও  বাজার ভোগ্যবস্তুতে পূর্ণ থাকে৷ যখন জিনিস কিনতে পারবে না আর অভাব মেটাতে পারবে না এটাই হলো মন্দার লক্ষণ৷ কলকারখানা উৎপাদন করতে পারবে না, লোকে আয়ের পথ  পাবে না৷  চারিদিকে এক হাহাকার  পড়ে যাবে৷ শোসকশ্রেণীর  চরম শোষণের  কারণই হলো মন্দা৷ এর হাত থেকে  দেশকে বাঁচাতে  হলে কল্যাণধর্মী সরকারকে স্বল্প মূল্যে রেশন দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে৷  তবে দেশের  চরম অভাবী লোক বাঁচবে৷ এটা হলো গণতান্ত্রিক সরকারের রাজধর্ম পালন৷ বর্তমান সরকারের সেই দিকে নজরই নেই৷ ---সরকারের লক্ষ্য শুধু সবদিক থেকে গরিবদের বাঁচার পথ বন্ধ করে  দলীয় স্বার্থে দেশ শাসনে মত্ত হওয়া৷ 

দেখে আশ্চর্য লাগে দলগুলো জনগণের  সেবা না করে তাদের পাশে না থেকে শুধু গদীর লড়াইয়ে অর্থাৎ গদী লাভের  জন্য পরস্পর পরস্পরকে সমালোচনা করে চলেছে৷ আর কুৎসা রটনা করে টিভিকেই ট্রায়ালে রায় দান করছে মহামান্য বিচারকের বিচারের জন্য অপেক্ষা না করেই৷ জনসংযোগই নেই রাজনৈতিক দলগুলোর৷ শাসনে যারা জনগণের কল্যাণধর্মী সেবামূলক কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি বিক্রি করে দিচ্ছে ধনীদের  হাতে! এ কেমন গণতন্ত্র? টাকা দিয়ে এম.এল.এ  এমপি কিনে জনগণের  নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়া তো নয়, সেটা  এক৷ দেশদ্রোহীতা কি নয়? তাই মন্দার সব বিরোধী দলগুলিকে এক হয়ে একে  নিয়ন্ত্রণ করার কাজে লাগা ও অসৎ ব্যবসাদার লোকদের  থেকে জনগণকে  রক্ষা  করার কাজে  সময় দেওয়া৷ তাই বলতেই হয় বাজার নিয়ন্ত্রণ করা দ্রব্যমূল্যের দাম বেঁধে দেওয়া৷ বাহির থেকে জিনিস আমদানী করে দেশকে  বাঁচানো৷ আমদানী বন্ধ করে অভাব সৃষ্টিটাতো দেশদ্রোহীতা৷ অর্থনীতিতে কেন্দ্রীকরণ বন্ধ করে বিকেন্দ্রীকরণ নীতি গ্রহণ করে ও সমবায়প্রথাকে উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থায় কাজে লাগিয়ে কর্মক্ষম জনগণকে আর্থিক দিক থেকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাই হবে স্বার্থক গণতন্ত্রের কাজ৷ তা না পারলে  সেই শাসক গণতান্ত্রিক নয়৷ প্রচণ্ড  আন্দোলনে তাকে উচ্ছেদ করা হবে জনগণের কর্তব্য৷ তাতে দেশ বাঁচবে৷