রাঢ়ের মানুষ একদিকে যেমন দার্শনিক চিন্তা করেছে, অন্যদিকে তেমনি হালকা মেজাজে হাসি–তামাসা–নৃত্য–গী উচ্ছল হয়ে উঠেছে৷ রাঢ়ের মানুষ মজলিশী, মিশুক ও খোসমেজাজী৷ দারিদ্র্যভারে জীর্ণ হলেও সে মানুষকে ডেকে খাওয়ায়–খাওয়ায় তা–ই যা সে নিজে খায়–ভাত, কলাইয়ের ডাল (রাঢ়ী বাংলায় ‘বিরি’), বড়ি–পোস্ত আর কুমড়োর তরকারি (রাঢ়ী বাংলায় ‘ডিঙ্লা’)৷ তার আচরণে–ব্যবহারে কোনো দারিদ্র্যগত সংকোচ নেই৷ বিনা কষ্টেই সে স্পষ্ট কথা বলে থাকে৷ রাঢ়ের মানুষের সরলতার একটি নিদর্শন ঃ
জনৈক সরলৰুদ্ধি অশিক্ষিত রাঢ়ী কর্ষককে১ বিচারক নাকি জিজ্ঞাসা করেছিলেন–‘‘হাঁ রে, তু যে বলছিস জমিনটা তুর তা তু বলত্যে পারিস জমিনটাতে ক’টা আল আছে?’’ অশিক্ষিত কর্ষক সে প্রশ্ণের উত্তর দিতে পারলে না৷ সে আকাশ পানে চেয়ে রইল৷ বিচারক শুধোলেন–‘‘কী ভালছিস (দেখছিস) বটেক?’’ কর্ষক তখন শুধোলে–‘‘হাঁ রে সাহেব, তু যে ই ঘরটাতে অনেকদিন ধর্যে ম্যাজিসটারি করছিস তা তু উপরদিকে না তাকাইঁ বল না কেনে ঘরে ক’টা কড়ি–বরগা আছে৷’’ তখন বিচারক শুধোলেন–‘‘তু যে ই কথাগুলান বললি ইটা তুকে কে শিখাইঁ দিইছিল?’’ কর্ষক বললে–‘‘কেউ শিখাইঁ নাই, মু লিজেই বললম, বাকী কথাগুলান উকিলবাবু শিখাইঁ দিইছিল৷ মু ল্যাজ্য কথা বললম, তু ল্যাজ্য বিচার কর্৷’’২
রাঢ়ের মানুষ এমনই সহজ সরল৷ তাই রাঢ়ের গ্রাম্যজীবনে যেমন উৎসবের অন্ত নেই, তেমনি আমোদ–প্রমোদের উপকরণেরও অন্ত নেই৷ সস্তা ও সাধারণ বিলাস–ব্যসন রাঢ়ের মজ্জাগত৷ তবে তাকে কিছুতেই রাঢ়ের সহজ সরল জীবনের পরিপন্থী হতে দেওয়া হয়নি৷
১৷ ‘কৃষক’ শব্দটি বৈয়াকরণিক বিচারে অশুদ্ধ৷
২৷ ঘটনাটি সম্ভবতঃ জামতাড়া আদালতে ঘটেছিল৷