নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর যে সব হিন্দু বাঙালী আশায় উৎফুল্ল হয়েছিল তাদের আশার গুড়ে যে বালি মেশান আছে সেটা টের পায়নি৷ এই সব গড়পড়তা বাঙালী আইনের খুঁটি-নাটি নিয়ে বিচারও করে না, খুঁটিয়ে দেখার মত দৃষ্টিও তাদের নেই৷ তারা শুধু নেতাদের ভাষন শুণেই আবেগে উদ্বেলিত হয়ে উঠে৷ বাস্তব নিয়ে ভাবার মত সময় ও সামর্থ্য তাদের নেই৷
দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর একটি বিশেষ গুন উনি যেটা ভাবেন বা বলেন ঠিক সেটাই করেন না৷ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে উনি অসমে প্রচারে গিয়ে বলেছিলেন বিজেপি ক্ষমতায় এলে অসমের সব ডিটেনশন ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে৷ কিন্তু কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অসমের গোয়ালপাড়ায় বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরী হয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রীর কথায় কাজে গরমিলের তালিকা দীর্ঘ করার প্রয়োজন নেই, নাগরিক সংশোধনী আইন বলবৎ হওয়ায় কিছু হিন্দু ডবল উপহারের আশায় নাচছে অর্থাৎ এই আইনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মুসলিম সম্প্রদায়, লাভবান হবে হিন্দু বাঙালীরা৷ স্পষ্ট বিভাজনের ইঙ্গিত৷ বাস্তব চিত্র কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত৷ অসমে নাগরিকত্ব পঞ্জীকরণের চূড়ান্ত তালিকা থেকে ১৯ লক্ষ বাদ পড়েছে৷ তার মধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালী৷
হিন্দুরা যদি ভেবে থাকেন তারা শরণার্থী নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন আর মুসলিমরা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী সেই সুবিধা পাবে না, তাদের ভাবনায় ভুল হবে যার খেসারত একদিন হিন্দু বাঙালীদেরই দিতে হবে৷
প্রথমত---নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে ভারতীয় সংবিধানের সাম্যের অধিকারকে অমান্য করা হয়েছে৷ দ্বিতীয়ত---এই আইনের মূল লক্ষ বাঙালী জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে বিভাজন সৃষ্টি করা৷ তাই শরণার্থী অনুপ্রবেশকারী তত্ত্ব খাড়া করা হয়েছে৷ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীর কোন হিসেব সরকারের হাতে নেই৷ এই পরিস্থিতিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন করে নিজেকে নাগরিক নয় বলে স্বীকার করে নেওয়া৷ এরপর নাগরিকত্ব দেওয়া না দেওয়া বা এন.আর.সি চালু করা সবটাই সরকারের হাতে৷
আবেদনপত্রের সঙ্গে নিজেকে শরণার্থী প্রমাণ করতে যে সব নথি চাওয়া হয়েছে যেমন ---আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের পাসপোর্ট, বার্থ সার্টিফিকেট, স্কুল সার্টিফিকেট, জায়গার দলিল বা ভাড়াটে থাকার দলিল বা যে কোনও ধরনের পরিচয়ের প্রমাণপত্র বা মা- বাবা, ঠাকুরদা-ঠাকুমার ওই সব দেশের বাসিন্দা থাকার প্রমাণপত্র বা ভারতের বিদেশি হিসেবে নথিভুক্ত থাকার প্রমাণপত্র৷ এ ছাড়াও মা-বাবার জন্মের তারিখের প্রমাণ, যেমন মা-বাবার বার্থ সার্টিফিকেট বা পাসপোর্ট৷ আর এগুলো না থাকলে আবেদনকারীর বার্থ সার্টিফিকেটে মা-বাবার ওইসব দেশের নাগরিকত্বের স্পষ্ট উল্লেখ থাকতেই হবে৷ এ সব কাগজপত্র ক’জনের আছে?
তা কজনের পক্ষে জমা দেওয়া সম্ভব?
কেন্দ্রীয় শাসকদলের বঙ্গীয় নেতাদের দাবী অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে৷ অর্থাৎ আবার সেই বিভাজনের রাজনীতি৷ আসলে শাসক যখন সাম্রাজ্যবাদী ধনিক শ্রেণীর প্রতিভু হয় তার চরিত্র একই থাকে সে স্বদেশী বা বিদেশী যাই হোক৷
এই নাগরিকত্ব আইনের মূল লক্ষ্য বিভাজন সৃষ্টি করা, সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করা, নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ও বিদ্বেষ বিষ ছড়িয়ে দেওয়া৷ তাই সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে জনগণের সঙ্গ চূড়ান্ত প্রতারনা৷
- Log in to post comments