নির্ভীক বাঙালী ব্যরিষ্টার

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

নোয়াখালিতে এসেছেন এক বাঙালী ব্যরিষ্টার৷ আসামীর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ৷ আসামীর পক্ষ নিয়ে তিনি এসেছেন৷ বিপক্ষে কারগিল সাহেব৷

বাঙালী ব্যরিষ্টার---সে আবার কেমন ধারা প্রাণী--- বিশেষ করে যে সাহেবের সঙ্গে লড়তে আসে? কৌতূহল হলো গ্রামবাসীদের৷ কৌতূহল চরিতার্থ করবার জন্য তারা দলে দলে আদালত প্রাঙ্গনে এসে ভীড় জমালো৷ বেলা হবে বলে কাপড়ের কোণে চিড়ে মুড়ি বেঁধে আনলো৷

শুরু হলো মামলা৷ শুরু হলো জেরা৷ অভাবনীয় ব্যাপার৷ মূহূর্ত্তে সকলের দৃষ্টি কারগিলের থেকে সরে গিয়ে পড়লো বাঙালী ব্যরিষ্টারের ওপর৷

বাঙালী ব্যরিষ্টার যেন অক্টোপাশ৷ কারগিল অক্টোপাশের ঘেরাজালে যেন পোকার মতো ধরা পড়েছে৷ আষ্টেপৃষ্টে বাঙালী ব্যরিষ্টার ঠেসে ধরলেন কারগিলকে৷ জেরার পর জেরা.. তার ওপরে জেরা...পালাবার পথ নেই যম আছে পিছে৷

হিমশিম খেয়ে গেলেন কারগিল৷ ঘাম ছুটে গেল সারা শরীরে৷ এত সহজেই নেটিভ ব্যরিষ্টারের কাছে হার স্বীকার অসম্ভব৷ তিনি শুরু করলেন জেরা৷ কিন্তু তা কতক্ষণ? ক্ষুরের কাছে ব্লেড কতক্ষণ? নাস্তানাবুদ হয়ে পড়লেন কারগিল৷ কালো ব্যরিষ্টারের প্রতি ঘৃণায় সারা শরীর বিষিয়ে উঠলো তাঁর৷ তারপর? তারপর বাচ্ছা ছেলেরা হেরে গিয়ে কি করে? গালাগালি দিতে শুরু করে বিপক্ষকে৷ প্রথম থেকেই কারগিল বাঙালী ব্যরিষ্টারকে ‘বাবুবাবু’ বলে সম্বোধন করছিলেন৷ হেরে গিয়ে এবার যেন আরো বাড়াবাড়ি শুরু করলেন৷ কারণে অকারণে ‘বাবু’ সম্বোধনে বাঙালী ব্যরিষ্টারকে হেয় প্রতিপন্ন করতে লাগলেন৷ নিয়ম হচ্ছে ‘মিস্টার’ বলে সম্বোধন করার৷

প্রথম প্রথম বাঙালী ব্যরিষ্টার খেয়াল করলেও প্রতিবাদ করবার অবকাশ পাননি৷ এবার তিনি হুংকার দিয়ে উঠলেন, ‘বাবু’ আপনি কাকে বলছেন?

তাও কি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? ভ্রূ কুঁচকে জবাব দিলেন কারগিল৷

বাঙালী ব্যরিষ্টার বললেন, আমি জানতাম কারগিল সাহেব এক শিক্ষিত লোক৷ এখন দেখছি তিনি সামান্য ভদ্রতা বা নিয়মটুকুও জানেন না৷

আদালতের সকলের দৃষ্টি যেন এবার হুমড়ি খেয়ে পড়লো কারগিলের ওপর৷

কারগিল লজ্জায় অপমানে রাগে লাল হয়ে উঠলেন৷ ঝাঁঝিয়ে বলে উঠলেন, তা আপনাকে কি বলে সম্বোধন করতে হবে?

কেন, আপনার দেশই ইংল্যাণ্ড আর এখানে হাইকোর্টে জজেরা ‘মিস্টার দাশ’ বলেই আমাকে সম্বোধন করেন৷ ব্যরিষ্টারের প্রতি ব্যরিষ্টারের সম্বোধনের ওটাই রীতি৷ আপনিও সেইভাবে সম্বোধন করবেন৷ ধীরে সুস্থে অথচ বেশ জোর দিয়েই কথাগুলো বললেন বাঙালী ব্যারিষ্টার৷

কী, এতবড় স্পর্ধা! খাড়া হয়ে উঠলেন কারগিল৷ ভাবটা এইরকম--- আদালতের বাইরে হলে তোমায় দেখে নিতাম৷

বাঙালী ব্যরিষ্টার মৃদু হাসলেন৷ তিনি যেন বলতে চান--- সাহেব, তোমার ওই আস্ফালনই সার৷

কে জানো এই নির্ভীক বাঙালী ব্যরিষ্টার? ইনিই হলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ৷ দেশের জন্য যিনি সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছিলেন৷