তৃতীয় ধরনের কপটাচরণও আমরা কম দেখি না৷ শুনেছিলুম, আমেরিকায় এক ভদ্রলোক একটি প্রচণ্ড রকমের মদ্যপান–বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন৷ এক জনসভায় মদের অপকারিতা সম্বন্ধে তিনি ওজস্বিনী ভাষায় ঠায় এক ঘণ্টা বত্তৃণতা করেছিলেন৷ তারপর বললেন–উঃ, উঃ গলা শুকিয়ে গেছে, এক গ্লাস ব্র্যাণ্ডি দাও৷
* * * * * * * *
সেবার আমি সাহেৰগঞ্জ থেকে দুমকা যাচ্ছি৷ সুদীর্ঘ পথ৷ সাহেৰগঞ্জ শহর পার হবার পরই শুরু হল পাহাড় আর জঙ্গল৷ পশ্চিম রাঢ়ের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি রমণীয়৷ ইচ্ছে হ’ল, এই পাহাড়–জঙ্গলের মধ্য দিয়ে মাইল খানেক পায়ে হাঁটি৷ গাড়ি থেকে নেৰে পড়লুম..........হাঁটতে শুরু করলুম৷ কিছু দূর যাবার পর দেখছি, পায়ে নতুন জুতো–পরা সাত–আট বছরের একটি ন্যাংটো ছেলে কঞ্চি দিয়ে মাঠের একটি গর্ত্তের মধ্যে খোঁচা দিচ্ছে৷ আমি তাকে জিজ্ঞেস করলুম–তুর নাম কী বটেক
সে বললে–রামকৃষ্ণ তুরী বটেক গো৷
আমি বললুম– কী করছিস বটেক
ছেলেটি বললে–ইন্দুর ধরছি৷
আমি জিজ্ঞেস করলুম–ইন্দুর লিয়ে কী করবি
সে বললে–পুড়াই খাব৷
আমি জিজ্ঞেস করলুম–ব্রাহ্মণ–কায়স্থরাও খায়
সে বললে–হঁ, উয়ারা নুকাইঁ নুকাইঁ খায়৷
এই ‘নুকাইঁ নুকাইঁ খাওয়া’ লোকের সামনে নিজের ত্রুটি ঢ়াকার অপচেষ্টা৷ এটাও এক ধরনের কপটতা৷
ধরা আর সরা
দেশজ শব্দে ‘ট’ যথাযথভাবেই বজায় থাকে৷ আর ‘ড’ বা ‘ড়’ মৌলিক শব্দ হিসেবেই থেকে যায়৷ যেমন, আজ ভুলোর সঙ্গে ভোঁদার আড়ি হয়ে গেল৷ ওরা বলছে, ওরা আর একসঙ্গে মার্ৰেল খেলবে না, একটা পেয়ারাও আর কামড়াকামড়ি করে খাবে না৷ গোপনে কান পেতে শোনাকেও আড়িপাতা বলে৷ এটিও বাংলা দেশজ শব্দ৷
সেই যে একজন মহিলা আহ্লাদে আটখানা হয়ে তার এক ৰন্ধুকে বলেছিল–তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ায় আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে তা ভাষায় বলতে পারছি না৷ ৰন্ধু বলেছিল, তোমার যে কী আনন্দ হচ্ছে তার একটু আভাস আমায় দাও৷ মহিলাটি বলেছিল, আহ্লাদের আতিশয্যে আমার এখন ধরাকে সরা মনে হচ্ছে৷ সেই সময় হয়েছে কী, একজন চাষীর গোরু হারিয়ে গেছে৷ সে গোরু খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হয়ে যে বাড়ির বারান্দায় বসেছে সেই বাড়িরই ঘরের ভেতর ওই মহিলাটি বলছে– আমি আনন্দের আতিশয্যে ধরাকে সরা মনে করছি৷ চাষী আড়ি পেতে কথাটা শুনে নিলে৷ এবার সেও আনন্দের আতিশয্যে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে ঘরের বাইরে থেকে ওই মহিলাটিকে গড় করে বললে–মা লক্ষ্মী, এই বিরাট ধরাটা যখন তোমার কাছে সরা হয়ে গেছে তখন দয়া করে বলে দাও, ওই সরার কোন্খানটিতে আমার গোরুটা রয়েছে৷