লক্ষণ ঃ অজীর্ণ ও কোষ্ঠবদ্ধতা, অরুচি, আহারের পরে বমনেচ্ছা, আহারের পরক্ষণে বা ২৷১ ঘণ্টা পরে পেটে যন্ত্রণা ৰোধ হওয়া–এইগুলি রোগের লক্ষণ৷
কারণ ঃ পাকস্থলীর অর্ধজীর্ণ খাদ্য বা খাদ্যরস অধিকতর জীর্ণত্বের জন্যে ঊর্ধ্ব অন্ত্রে বা গ্রহণী নাড়ীতে প্রেরিত হয়৷ সেখানে পাচকরস যকৃতের পিত্তরস ও অগ্ণ্যাশয়ের (ত্ন্ত্রুন্তুব্জন্দ্ব্ত্রব্দ) পাচকপিত্তের সাহায্যে এই কার্য সম্পাদিত হয়৷ দেহযন্ত্রের ত্রুটির ফলে এখানেও খাদ্য যথাযথভাবে জীর্ণ না হ’তে পারলে পচে’ অত্যন্ত দূষিত হয়ে’ পড়ে ও তার সঙ্গে অজীর্ণ পাচকপিত্তরসও দূষিত হয়ে’ দেহাভ্যন্তরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে৷ এই দূষিত পাচকপিত্তই পাকস্থলীর ক্ষত ও আন্ত্রিক ক্ষতের কারণ৷ আহারান্তে বিশ্রাম না নিয়ে মস্তিষ্কের বা শারীরিক পরিশ্রমে রত হৰার ফলে পাকস্থলীতে ও গ্রহণী নাড়ীতে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ায় আন্ত্রিক ঝিল্লী সহজেই অম্লবিষে আক্রান্ত হয়ে’ পড়ে ও ক্ষত সৃষ্টি হয়৷
আমিষ জাতীয় খাদ্যবস্তুকে জীর্ণ করবার জন্যে অম্লরসস্রাবী গ্রন্থিগুলি যদি সক্রিয় থাকে অথচ কোষ্ঠবদ্ধতা, অজীর্ণ বা অন্য কোন প্রকার ব্যাধির ফলে ক্ষাররসস্রাবী গ্রন্থি দুর্ৰল হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে দেহাভ্যন্তরে নিঃসৃত ক্ষাররস অম্লরসের সঙ্গে সমতা রক্ষা করে’ চলতে পারে না ও উগ্র শক্তিশালী তথা বিষাক্ত অম্লরস অপ্রতিহত ভাবেই নিজের কাজ করে’ যেতে থাকে৷ এই উদ্বৃত্ত অম্লরস দেহের যেখানে সঞ্চিত হ’বার সুযোগ পায় সেখানেই ধীরে ধীরে ক্ষত উৎপন্ন করে৷ পাকস্থলীতে, গ্রহণী নাড়ীতে বা যেখানে ঝিল্লী বা আবরণীকে এরা আক্রমণ করে’ আহত করে’ দেয়, সেখানে তৈরী হয় ক্ষত ও এই ভাবেই পাকস্থলীর ক্ষত, অন্ত্রের ক্ষত ও দেহাভ্যন্তরে আরও নানান রকমের ক্ষত হ’তে পারে৷
অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রমে ও তৎসহ শারীরিক শ্রমের অভাবে, অতিরিক্ত বিষযুক্ত ঔষধ সেবনে (রক্তের রোগজীবাণুকে ধবংস করবার জন্যে সাধারণতঃ এই সকল বিষ ঔষধরূপে স্থূল মাত্রায় ব্যবহার করা হয়ে’ থাকে) অথবা রোগে বা রোগের সম্ভাবনায় বিষযুক্ত ঔষধ সূচিকা প্রয়োগে গ্রহণ করলে অথবা অতিরিক্ত অসংযমের ফলে রক্ত নিঃসার হয়ে’ গেলে সেই দুর্ৰল রক্ত আন্ত্রিক ঝিল্লীসমূহকে দুর্ৰল করে’ দেয়, আর তাই তারা সেই দুর্ৰলাবস্থায় সঞ্চিত অম্লরসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে অক্ষম হয় ও নিজেরা ক্ষতযুক্ত হয়ে পড়ে৷ এই ক্ষত যদি পাকস্থলীতে হয় সেক্ষেত্রে আহারের পরক্ষণেই রোগী যন্ত্রণা ৰোধ করে৷ কিন্তু ওই ক্ষত যদি অন্ত্রে হয় সেক্ষত্রে আহারের বেশ কিছুক্ষণ পরে রোগী যন্ত্রণা অনুভব করে৷ এই শেষোক্ত যন্ত্রণার সূত্রপাত হয় নাভির কিছুটা ডান দিক ঘেঁষে৷ পাকস্থলীর ক্ষততে খাদ্যবস্তু দেহাভ্যন্তরে থাকবার সুযোগ কমই পেয়ে থাকে, তাই এই রোগে রেগীর শরীর অল্পকালের মধ্যেই জীর্ণশীর্ণ হয়ে’ যায়৷ আন্ত্রিক ক্ষতে কিন্তু রোগীর চেহারায় বাহ্যিক পরিবর্তন আসতে বেশ সময় লাগে৷
যে কোন কারণেই হোক না কেন, শরীরাভ্যন্তরে ক্ষত উৎপন্ন হ’লে সেই ক্ষত নিঃসৃত রক্ত বহির্গমনের পথ খোঁজে ও এই পথ সে করে নেয় বমন অথবা মলদ্বার বা মূত্রদ্বারের মাধ্যমে৷ পাকস্থলীর ক্ষত বা আন্ত্রিক ক্ষতের রোগীর তাই রোগের বাড়াবাড়ি অবস্থায় বমনেচ্ছা থাকে৷ বমনের পরে রোগী কিছুটা সুস্থ ৰোধ করে৷ কখনও কখনও বমনের সঙ্গে ঈষৎ কালচে ধরণের রক্তও নির্গত হয় (এই লক্ষণ রক্তপিত্ত রোগেও আছে)৷ রোগের বাড়াবাড়ি অবস্থায় মল অবশ্যই কালো রঙের হয়ে’ থাকে৷ এমনকি, রোগের যখন বাড়াবাড়ি অবস্থা নেই তখনও মল ঈষৎ গুট্লে গুট্লে ধরণের হয়ে’ থাকে ও তার রঙও কিছুটা কালচে ধরণের হয়ে থাকে৷ এই রোগের আক্রমণ সাধারণতঃ প্রথম যৌবনেই হয়ে’ থাকে ও যৌবনের শেষে বা প্রৌঢ়ত্বে মানুষকে ধবংস করে’ দেয়৷
চিকিৎসা ঃ প্রাতে ঃ–উৎক্ষেপমুদ্রা, যোগাসন, দীর্ঘপ্রণাম, ভুজঙ্গাসন, অগ্ণিসার, পদহস্তাসন, আগ্ণেয়ীমুদ্রা বা আগ্ণেয়ী প্রাণায়াম৷
সন্ধ্যায় ঃ সর্বাঙ্গাসন, মৎস্যমুদ্রা, নৌকাসন, পশ্চিমোত্তানাসন, কর্মাসন, অগ্ণিসার ও উড্ডয়ন৷
পথ্য ঃ এই রোগের বাড়াবাড়ি অবস্থায় অধিক পরিমাণে জল ও অম্লমধুর ফলের রস ছাড়া অন্য কিছুই খাওয়া উচিত নয়৷ রক্ত বমন হ’লে সেদিন রোগীকে দুর্ৰার রস বা কুক্সিমা পাতার রস ছাড়া আর কোন কিছুই খেতে দেৰে না৷ পরে কিছুটা সুস্থ হ’লে অল্প পাতলা দুধ সামান্য মধুর সঙ্গে পান করতে দেৰে৷ মল যতদিন কাল্চে থাকে ততদিন রোগীকে বিভিন্ন ধরণের অম্ল–মধুর ফলের রস, পাকা টমেটোর ছাঁকা রস, মিষ্টি নেবুর রস অথবা আলু উত্তমরূপে সিদ্ধ করে ভালভাবে চট্কে পাতলা দুধের সঙ্গে খেতে দেবে৷
রোগের বাড়াবাড়ি অবস্থা কেটে যাবার পরে রোগীকে আলু, পটোল, ঝিঙে, ধুন্দুল প্রভৃতি লঘুপাক তরিতরকারীর ঝোল বা ষ্টু (ব্দব্ধন্দ্বভ্র), পুরাতন চালের ভাত প্রভৃতি খেতে দেবে৷ এই অবস্থায় ভাত বা তাজা রুটির সঙ্গে অল্প পরিমাণে খাঁটি ঘি (গরম) বা মাখন খাওয়া বাঞ্ছনীয়৷ রোগের লেশমাত্র যতদিন অবশিষ্ট থাকে ততদিন পর্যন্ত রোগী যেন কিছুতেই এক সঙ্গে অনেকটা খাদ্য গ্রহণ না করে, অর্থাৎ একটু একটু করে’ দিনে যেন অনেক বার খায়৷ এই রোগের আরোগ্য পথ্যের উপর সর্বাধিক নির্ভর করে৷ তাই রোগমুক্তির পরেও দু’বৎসর খাদ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত৷
বিধিনিষেধ ঃ অম্লদোষ এই রোগের প্রধান কারণ৷ তাই যে সকল খাদ্যে অম্লদোষ বাড়তে পারে সেগুলিকে সযত্নে পরিহার করা বাঞ্ছনীয়৷
এই ধরণের রোগীর পক্ষে তাই আমিষ খাদ্য ও সর্ববিধ নেশার জিনিস ত্যাগ করতে হৰে৷ পাকস্থলীকে উত্তেজিত করে’ দিতে পারে এমন খাদ্যও বর্জন করতে হৰে৷ সুতরাং অতিরিক্ত মিষ্টি, ঝাল বা নোনতা খাদ্য এই ধরণের রোগীর পক্ষে কুপথ্য৷ রোগী মোটামুটি বিচারে সুস্থাবস্থায় এসে গেলে ক্ষারধর্মী খাদ্য গ্রহণের ফল ভালই হৰে৷ তবে ছিবড়া–যুক্ত খাদ্য রোগ সেরে’ যাবার পরও ব্যবহার না করাই ভাল৷ মোটামুটিভাবে সুস্থ হয়ে যাবার পরে রোগীর খাদ্য তালিকায় পালং, বেতো, মটর বা নালতে (পাটশাক) শাক থাকলে তাতে করে কোষ্ঠ পরিষ্কারে ও রক্তবমন দূরীকরণে বিশেষ সাহায্য করে৷ ঘি–য়ে ভাজা শুশুনি শাকও এই রোগের উত্তম ঔষধ৷ এই রোগীর পক্ষে জল বা দুধের সঙ্গে দিনে সবশুদ্ধ দু’তিন চামচ মধু খাওয়া দরকার৷ আহারান্তে কিছুটা বিশ্রাম না নিয়েই শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রমে রত হওয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর৷