তোমরা অনেকেই নিশ্চয় পোয়াল ছাতু দেখেছ–অনেকেই হয়তো বা খেয়েছ৷ রাঢ়ের এটি একটি জনপ্রিয় সুখাদ্য৷ পোয়াল ছাতুকে কোথাও কোথাও ভুঁইফোঁড়ও বলা হয়৷ ইংরেজীতে বলা হয় mushroom. শীতপ্রধান–গ্রীষ্মপ্র্ নির্বিশেষে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই এই ছত্রাক বর্গীয় বস্তুটি কোথাও সোজাসুজি খাদ্য হিসেবে, কোথাও বা মাংসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ সংস্কৃতে এর নাম ‘কবক’৷ জিনিসটি নিরামিষ হলেও মাংসের গুণসম্পন্ন৷ তাই সাত্ত্বিক আহার যাঁরা করেন, তাঁদের পক্ষে এটি খাওয়া নিষিদ্ধ৷ রাঁধলে স্বাদও হয় মাংসের মত৷ পৃথিবীর কোথাও কোথাও জিনিসটিকে না জানিয়ে মাংসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷
কাঠ, খড়, কিছুটা পচে যাওয়া উদ্ভিদের ওপর এটা আপনা–আপনি জন্মায়৷ সব ছত্রাকের স্বভাব এই৷ বর্ষার শেষের দিকে ও শরতের প্রাক্কালে পোয়াল অর্থাৎ খড়ে এরা আপনা থেকেই জন্মায়৷ পোয়ালে এরা জন্মায় বলে এদের বলে পোয়াল ছাতু৷ বিচালি ৰড় হয়ে পেকে শুকিয়ে যায়, তখন তাকে অল্প ফাঁক ফাঁক করে বিছিয়ে দিয়ে পচবার সুযোগ করে দেওয়া হয়৷ তখন তার ওপরে এই ছাতু বা কবক জন্মায়৷ তাকে বলে বিচালি ছাতু৷ গোবর পচে গেলে তার ওপরেও এই ছাতু জন্মায়৷ তাকে বলে গোবর ছাতু৷ গোবর ছাতু অভক্ষ্য৷ কিছু কিছু বিষ–দোষ যুক্ত বস্তুতে এই ছাতু জন্মায়৷ সেই ছাতুও অভক্ষ্য৷ মানব শরীরে তাদের বিষক্রিয়া হয়৷ যে ছাতুগুলি দুর্বল ও ছোট, আঙ্গুলে ধরলেই গলে যায়, সেগুলিও অভক্ষ্য৷ কথ্য ৰাংলায় বলি ব্যাঙের ছাতা৷ এগুলি হাতে–পায়ে বেশী লাগলে গরল–ঘা (eczema) হবার সম্ভাবনা থাকে৷ আশ্বিনে দুর্গাপূজার প্রাক্কালে অর্ধেক পচে যাওয়া উদ্ভিজ্জের ওপর যে বিশেষ ধরনের ছাতু দেখা যায়, বর্দ্ধমানের গ্রামে তাকে দুর্গাছাতু বলে৷ দুর্গাছাতু কেউ খায়, কেউ খায় না৷ যাঁরা খান তাঁরা অল্প তেঁতুল জলে সেদ্ধ করে, তারপর জলটা ফেলে দিয়ে সেটা রান্না করেন ও রান্নায় ঝাল একটু বেশী দেন৷ বর্ষায় শেষে উই–ঢ়িবির ওপরে যে ছাতু জন্মায়, হুগলী–বর্দ্ধমানে তাকে রুই ছাতু বলা হয়৷
হ্যাঁ, শেষের দিকে আবার বলে রাখি, ছত্রাক জাতীয় সমস্ত খাদ্য (কবক, পোয়াল ছাতু) খাদ্য হিসেবে পুষ্টিকর হলেও, সবদিক দিয়ে মাংসের গুণসম্পন্ন ও মাংসের দোষসম্পন্ন৷ তাই যাঁরা সাত্ত্বিক আহার করতে চান, বা সত্ত্বগুণের অনুধাবন করতে চান, তাঁদের পক্ষে কবক বা পোয়াল ছাতু না খাওয়াই ভাল৷ যদি কোন গৃহস্থের কবকের প্রতি অত্যধিক আকর্ষণ থাকে, তবে দিনের বেলায় (আকাশে যখন সূর্য আছে সেই সময়) কবক খেতে পারেন৷ সূর্য ডোবার পর কিছুতেই খাবেন না৷ সূর্য ডোবার পরে কবক খেলে গলিত কুষ্ঠ হয়–প্রাচীনকালে আয়ুর্বেদের ঋষিদের এই ধরনের ধারণা ছিল৷
(দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য)