আমাদের চারপাশের জলবায়ু, গাছপালা, মাটি, অন্যান্য প্রাণী, মানুষ, জৈব ও অজৈব সমস্ত কিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ৷ পৃথিবীর পরিবেশ জীব বিকাশের পক্ষে অনুকূল বলেই এই পৃথিবীতে মানুষের বাস৷ অথচ সৌরজগতের আর কোথাও বা বিশ্বব্রহ্মান্ডের কোথাও এখন মানুষ জীবের সন্ধান পাচ্ছে না৷ হয়তো বিশ্বব্রহ্মান্ডের কোথাও না কোথাও জীব আছে৷ হয়তো, দূরবর্তী কোনো নক্ষত্রের সংসারে৷ যেমন এ সূর্যের সংসারে পৃথিবী--- এমনি কোনো পৃথিবী আছে সেখানে হয়তো মানুষ আছে, কিন্তু এখনো আমাদের বিজ্ঞানীদের জানার বাহিরে৷ তাই এখন আমরা বলতে পারি, এ সুবিশাল বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে একমাত্র পৃথিবীর পরিবেশ মনুষ্য বসবাসপোযোগী৷ এর বাইরে মানুষের বাঁচবার বেড়ে ওঠবার কোন স্থান নেই৷
কিন্তু আমাদের অবিমৃশ্যকারিতার জন্যে এই পৃথিবীর পরিবেশ ক্রমশইঃ দূষিত হয়ে যাচ্ছে--- মনুষ্যবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে৷
জল দূষণ,বায়ূদূষণ,মাটি দূষণ, সবকিছুকেই আমরা দূষিত করে চলেছি৷ কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যপদার্থ, মানুষের দৈহিক বর্জ্যপদার্থ---মল-মুত্র, পচা-গলা পশুদেহ বা মনুষ্য দেহ--- এসবই নিয়মিত জলকে দূষিত করছে৷ পতিত পাবনী গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার জন্যে এখন ‘মাষ্টার প্ল্যান’ নিতে হচ্ছে৷ কিন্তু কাজ খুব একটা এগুচ্ছে না৷
গাছপালা বায়ুতে অক্সিজেনের জোগান দেয়, বায়ুর ধূলা, ধোঁয়া প্রভৃতি শুষে নেয়, বৃষ্টি ঘটায়৷ কিন্তু মানুষ অতিলোভের বশবর্তী হয়ে বনজঙ্গল দ্রুত ধবংস করছে ও নানান পশুপাখীও ধবংস করছে৷ এই পশুপাখীরাও প্রাকৃতিক ভাবে পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে৷ আমাদের রসনাকে পরিতৃপ্ত করতে পশুপাখী মেরে খেয়ে ফেলছি৷ যার ফলে আসলে আমরা নিজেদের সভ্যতার মূলেই কুঠারাঘাত করছি৷
মূলতঃ আমাদের দোষেই বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ বায়ুদূষণ বাড়ছে৷ তার সঙ্গে আমাদের অতিলোভের ফলে খাদ্যে দূষণ , পানীয়ে দূষণ৷ কিছুই প্রায় দূষণমুক্ত নয়৷ ফলে নানান কঠিন কঠিন ব্যাধি জন্ম নিচ্ছে৷
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালে সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগে ষ্টকহোমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সম্মিলিত হয়ে এই সমস্যার থেকে বাঁচবার জন্যে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন৷ পরিবেশ দূষণ বিশ্বের সমস্ত মানুষের কাছে বিপদ ডেকে আনছে৷ তাই একে মোকাবিলা করার জন্যে বিশ্বের সব রাষ্ট্রকে তথা বিশ্বের সমস্ত জনসাধারণকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে৷ সেই বিশ্ব সম্মেলনে পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলবার জন্যে প্রতিবছর ৫ই জুনকে ‘পরিবেশ দিবস’ হিসাবে পালন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ ৫ই জুন ‘পরিবেশ দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়৷ এই দিনে বিভিন্ন মিটিং, মিছিল, আলাপ-আলোচনা ও কর্মসূচীর মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করা হয়৷
পরিবেশকে বিশুদ্ধ করার জন্যে আমাদেরকে সংকল্প নিতে হবে, আর বন, সেই থেকে প্রতি বছর ধবংস নয়, বরং বনসর্জন চাই৷ সেক্ষেত্রে নিতান্ত যদি প্রয়োজনে কোনো একটি গাছ কাটতেই হয়, তাহলে তার পরিবর্তে যেন দশটি গাছ লাগাই৷ এছাড়াও প্রতি বছর ব্যাপকভাবে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিতে হবে৷ জল পরিবেশের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান ৷ বলা হয় জলের অপর নাম জীবন৷ জল পানীয়ের জন্যেও যেমন প্রয়োজন, কৃষিকার্যের জন্যেও জল প্রয়োজন৷ আমাদের পানীয় জলের অভাব মেটাতে ও কৃষিকার্যের জন্যে আমরা সহজে ভূগর্ভ থেকে জল তুলছি৷ এটা ভবিষ্যতের জন্যে অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিচ্ছে৷ তাই মাটির নীচের জলভান্ডারে হাত না দিয়ে প্রকৃতি বৃষ্টিরূপে যে বিপুল জনসম্পদ দান করেন, সে জলকে সংরক্ষণ করতে হবে৷
১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে বা মানুষকে বৃহত্তর আদর্শে উদ্ধু দ্ধ করে নদী, নালা, খাল-বিলকে সংস্কার করে তাদের জলধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে৷ তাতে বন্যার প্রকোপও হ্রাস পাবে৷ গ্রামে গ্রামে ব্যাপকভাবে জলাশয় বানাতে হবে৷ ‘জল ধরো, জল ভরো’ --- এক শ্লোগানটিকে কেবল রাজনৈতিক শ্লোগান না রেখে যথার্থ ভাবে কাজের কাজ করতে হবে৷ বৃষ্টির জলকেই আটকে রেখে সারা বছরের কৃষিকাজে লাগাতে হবে ও তাকে শোধন করে পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করতে হবে৷
মোটকথা মানব সভ্যতার রক্ষার স্বার্থে এই পৃথিবীর মনুষ্যবাসোপযোগী পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে৷
সবচেয়ে বড় কথা, যে মানুষ এই পরিবেশ রক্ষা করবে--- বিশুদ্ধ করবার মহান দায়িত্ব বহন করবে, সে মানুষের মনকে আগে বিশুদ্ধ করবার চিন্তা করতে হবে৷ কেননা ভালমন্দর সবকিছুর সৃষ্টি আগে মানুষের মনে৷
- Log in to post comments