রামায়ণ পুরাণের শ্রীরামচন্দ্রকে যে কেউ ভগবান মানতে পারেন, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে শাসককে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি মেনেই চলতে হবে

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতবর্ষ নাকি সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে জগতের মানুষকে অধ্যাত্মবাদ ও মানবতাবাদের পীঠস্থান হিসাবে শিক্ষাদান করে আসছে৷ কিন্তু এই অত্যাধুনিক যুগে এসে দেখা যাচ্ছে এদেশের যারা দণ্ডমুণ্ডের কর্র্ত্ত হয়ে শাসনে এসেছে তাদের অনেকেরই তো সামান্যতম সৌজন্যবোধটুকু নেই যেটা অল্প বয়স্কশিশুদের আছে! তাহলে এই গুরুত্বপদে এলো তারা কি করে ? তাদের যারা এনেছে তারাই বা কেমন! তাই বলতেই হয় এই দেশের দলতান্ত্রিক শাসকগুলোই হলো সেই ধান্দাবাজ, মিথ্যাচারী, প্রকৃত মনুষ্য পদবাচ্যের মধ্যে আসে কী? তাই দেশ ও দলের কল্যাণে জনগণকেই তাদের বিতাড়িত করতে হবে! নচেৎ সর্বনাশ হবে দেশটারই৷

তাই আলোচনা প্রসঙ্গে প্রথমেই একটি কথা বলি সেই পবিত্রধর্ম ও ধর্মমত হলো সূক্ষ্মতম পবিত্রতম অতি পবিত্র অন্তরের সম্পদ যা আত্মার তৃপ্তি ঘটায় সেখানে স্থূল বস্তুজগতের আপেক্ষিকতার বিষয়ের সঙ্গে এক করে ফেলাটা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়৷ যারা সংকীর্ণ স্বার্থে রাজনৈতিক কারণে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক আবেগকে হাতিয়ার করে দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করে তাদের সম্বন্ধে জনগণকেই সচেতন হতেই হয়৷ মহান ভারতের সংবিধান কিন্তু সেটাই লক্ষ্য রেখেই ঘোষণা করেছে এই ধর্ম বা ধর্মমত নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে৷ সেটাই কিছু কিছু দলবাজ সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসক ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করে ভণ্ডামী করে চলেছে গায়ের জোরে৷ সেটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে বারংবার তাদের কুৎসীত আচরণে! সংবিধানের নির্দেশ পালন ও রক্ষার প্রতিশ্রুতি সবদল যারা শাসনে আসে তাদের ঘোষনা করতে হয় কিন্তু বাস্তবে সবদল করে না৷ মহান বিচার বিভাগের দায়িত্ব সংবিধানকে রক্ষা করা তাই সুপ্রিমকোর্ট নানা সময়ে রায়ে সেই কথা উল্লেখও করেন৷ কিন্তু ধান্দাবাজ নেতারা সেটা অমান্য করে দলীয় স্বার্থে৷ তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি সেই নাগরিকদের যাঁরা বোট দানে তাদের শাসনে পাঠান তাঁদের কিন্তু প্রধান দায়িত্ব হলো তাঁদের শিক্ষা দেওয়া সেই নির্বাচনে মত দান কালে তাদের প্রত্যাখান করা অর্থাৎ বোট না দেওয়াটাই হলো শিক্ষা দেওয়া ধর্ম বা ধর্মমতকে আপেক্ষিক জগতের শাসনকালে তাকে টেনে এনে জটিলতা সৃষ্টি করাটাকে যদি বোটারগন বন্ধ না করেন তা হলে দেশের পরিস্থিতিটা হয়ে যাবে ভয়ঙ্কর! এবার কথা প্রসঙ্গে বলি যে শাসকগণ শাসনে আসেন সকল নাগরিকদের সেবা করতে পারেন না৷ আর কোন ধর্মের পতাকা নিয়ে রাস্তায় নামতে পারেন না শাসকগণ!

এবারে নাকি এক কোটি লোক রামনবমীর দিনে সরকার রাস্তায় নামাবে৷ তারা এক কোটি লোক নামাতে পারেন কিন্তু শাসকদের সেটা জানানো তাদের কর্ত্তব্য যাতে সেটা রেখে রাস্তাঘাট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন৷ দেখা গেছে গতবারে এই দিনে এই পশ্চিম বাংলায় হিন্দুত্ববাদীরা হাতে অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে লাঠি সোঁটা নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল এমন ঘটনা কোন কোন জেলায় ঘটায় যাতে চরম অশান্তি সৃষ্টি হয় জনবহুল মিশ্র এলাকায়৷

যেভাবে কেন্দ্রীয় শাসক দলের রাজ্য নেতৃত্ব রাস্তায় লোক নামাবার হুমকী দিয়েছে তা কোন সভ্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলের আচরণ নয়, তা পাড়ার রকবাজ মস্তানদের আচরণ বিষয়টা রাজ্যের হলেও কেন্দ্রের শাসক দল উপেক্ষা করতে পারেন না৷ রাজ্যশাখা কোন অঘটন ঘটালে তার দায় কেন্দ্র এড়াতে পারবে না৷ আমরা বুঝিনা কিভাবে কেন্দ্রীয় শাসকদলের একটি রাজ্যের শাখা এভাবে সাম্প্রদায়িক হুমকী দেয় ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে!

এবার আসল কথায় আসা যাক৷ পৌরাণিক কাহিনী রামায়নের মুখ্যচরিত্র শ্রীরামচন্দ্র মহাকবি বাল্মিকির মানসপুত্র৷ বিশ্বকবি বলেছেন---‘‘কবি তব মনভূমি রামের জন্মস্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য? তার অর্থ শ্রীরাম হলেন ভক্ত মনের এ অনুভবের বিষয়৷ সাধনা জগতের সম্পদ৷ তাকে নিয়ে রাজনীতি না করাটাই রাজনৈতিক দলের দায়ীত্ব৷ মনে রাখতে হবে জনবহুল অঞ্চলে অশান্তি পাকাতে এন.ডি.এ শাসনে আসেনি৷ ধান্দাবাজদের সেটা মনে রাখতে হবে৷ নতুবা জনগণ ক্ষমা করবে না৷