দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ঙ্কর পরিণতির পর যাতে আর পৃথিবীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়ঙ্কর বিশ্ব যুদ্ধ না ঘটে তার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি জড়বাদভিত্তিক সমাজবাদী শক্তি একত্রিত হয়ে ইউ.এন.ও ঘটন করে৷ সেই রাষ্ট্র সংঘে বর্তমান পৃথিবীর ছোট-বড় অধিকাংশ রাষ্ট্রই সদস্য৷ বর্তমানে রাষ্ট্র সংঘের কাজ অনেক বেড়েছে৷ আর অনেক সমস্যার সমাধান করছে রাষ্ট্রসংঘ৷ তবে এখানে দেখা যাচ্ছে বর্তমানে পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোই যারা রাষ্ট্রসংঘকে নিয়ন্ত্রণ করে অধিকাংশ ব্যাপারে নিজেদের স্বার্থ বজায় রাখতে একাধিক গোষ্ঠী বানিয়েছেন ও বিভিন্ন বিষয়ে মতদানের সময় সার্বিক কল্যাণের চিন্তা না করে গোষ্ঠীর স্বার্থই বেশি করে ভাবে৷ তাই রাষ্ট্রসংঘ সবসময় যথাযতভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে না৷ বর্তমান পৃথিবীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইংল্যাণ্ড ও ফ্রান্সই রাষ্ট্রসংঘের নিয়ন্ত্রক শক্তি৷
রাষ্ট্রসংঘে উপরিউক্ত রাষ্ট্রগুলোই বেশী করে নিজ নিজ প্রভাব খাটায় ও অনেকক্ষেত্রে জল ঘোলা করে৷ দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় পৃথিবীর প্রধান ব্যষ্টিরা সকলেই মনে করেন রাষ্ট্রসংঘের বয়স অনেক হলো৷ তাই এবার রাষ্ট্রসংঘকে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করতে কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী৷ বিশেষ করে অস্ত্রব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে কতকগুলি নিয়মকে কঠোরভাবে মান্যতা দেবার জন্য সকল রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে হবে৷ আজ পৃথিবীর মানুষের অস্ত্র নয় বেঁচে থাকা নূ্যনতম রসদের প্রয়োজন রাষ্ট্রসংঘকে তার সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে দিয়ে সেই কাজ করাতে হবে৷
পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশে রাষ্ট্রসংঘের স্থায়ী কার্য্যালয় থাকাটা জরুরী,তাতে ইউ.এন.ও-এর মর্যাদাও গুরুত্ব বাড়বে৷ আই.এম.এফ.এর- অর্থভান্ডারকে আরো বাড়াবার দিকে সকল রাষ্ট্রকে নজর দিতে হবে৷
সর্বপরী পৃথিবীতে কোন সদস্য রাষ্ট্র যেন নাগরিকত্ত্ব আইন ও মানবিক মূল্যবোধকে সংকীর্ণ স্বার্থে অবহেলা না করে তার দিকে নজর দিতে হবে৷ কঠোরভাবে রাষ্ট্র সংঘকে আজ পৃথিবী থেকে দারিদ্র মোচন ও রোগমুক্তির শপথ নিয়ে এগোতে হবে৷ মানবতাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়ার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে মহান রাষ্ট্রসংঘকে৷ কারণ পৃথিবীর প্রতিটি নরনারী ও শিশু মহান রাষ্ট্রসংঘের সন্তান বিশেষ, কারণ সকল মানুষই হলেন---সেই অমৃতের সন্তান৷ মানুষের পরিচয় হলো তাঁরা মানুষ৷ এক মানব জাতি৷
শুধু তাই নয় সমগ্র মানব সমাজের ও রাষ্ট্রগুলির পবিত্র দায়িত্ব হোক পৃথিবীর বুকে সকল জীবজন্তু, গাছপালা যেন ধবংসপ্রাপ্ত না হয় তার জন্য ব্যাপকভাবে PCÁP (Prevention of cruelty against Animals and Plants) আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে হবে৷ অর্থাৎ প্রাণী ও গাছপালা নিষ্ঠুরভাবে ধবংসের বিরুদ্ধে আন্দোলনটি যাতে সার্থক হয়৷
স্মরণে রাখা দরকার, সৃষ্টির ভারসাম্যকে রক্ষা করার দায় দায়িত্ব হলো সমগ্র মানব সমাজের৷ মানবজাতি হলো বিশ্বস্রষ্ঠার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি৷ আজ সমগ্র পৃথিবীতে ঐক্যবদ্ধভাবে মানব সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করেই সেই মহান বিশ্বৈকতাবোধের নবজাগরণ আনতেই হবে বিশ্বস্রষ্ঠার কল্যাণধর্মী সৃষ্টিকে সার্থক বিকাশের এষণায়৷ পৃথিবী রক্ষা পাবে যখন সেই এক বিশ্বরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে সমস্ত আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলি যৌথভাবে সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলবে৷ তাই আশু প্রয়োজন নব্য মানবতাবাদের জাগরণ যা মানব সমাজকে এক জাতি এক প্রাণ ও একতার মহামন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করবে৷
বাঙলার কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ঘোষণা করেছেন---
‘জগৎজুড়িয়া একজাতি আছে সে জাতির নাম মানব জাতি,
একই পৃথিবীর স্তন্যে পালিত একই রবিশশী মোদের ,সাথী’’৷
আজ অত্যন্ত আনন্দের কথা শ্রদ্ধেয় মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর সামাজিক,অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রাউটের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে সমগ্র মানব জাতিকে বিশ্বৈকতাবাদের পথে চলার প্রেরণা দিয়েছেন৷ সেই চলার পথে শুধু মানুষই নয়, পশু,পাখী, তরুলতা সবাই তার সাথী হবে কারণ সবার কথাই মানুষকে ভাবতে হবে৷ সেটাই হবে নব্যমানবতাবাদের পথ, আঞ্চলিকতার পথ ধরে বিশ্বৈকতার পথে এগিয়ে চলার পথ৷ এরই সন্ধান দিয়ে গেছেন প্রাউট প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার৷ আর সেইপথেই প্রাউটিষ্টরা এগিয়ে চলেছেন সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যেই৷ (চলবে)
- Log in to post comments