রাষ্ট্র সংঘের গুরুত্বকে মর্যাদা দেওয়ার সময় হয়েছে

লেখক
প্রভাত খাঁ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ঙ্কর পরিণতির পর যাতে আর পৃথিবীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়ঙ্কর বিশ্ব যুদ্ধ না ঘটে তার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি জড়বাদভিত্তিক সমাজবাদী শক্তি একত্রিত হয়ে ইউ.এন.ও ঘটন করে৷ সেই রাষ্ট্র সংঘে বর্তমান পৃথিবীর ছোট-বড় অধিকাংশ রাষ্ট্রই সদস্য৷ বর্তমানে রাষ্ট্র সংঘের কাজ অনেক বেড়েছে৷ আর অনেক সমস্যার সমাধান করছে রাষ্ট্রসংঘ৷ তবে এখানে দেখা যাচ্ছে বর্তমানে পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোই যারা রাষ্ট্রসংঘকে নিয়ন্ত্রণ করে অধিকাংশ ব্যাপারে নিজেদের স্বার্থ বজায় রাখতে একাধিক গোষ্ঠী বানিয়েছেন ও বিভিন্ন বিষয়ে মতদানের সময় সার্বিক কল্যাণের চিন্তা না করে গোষ্ঠীর স্বার্থই বেশি করে  ভাবে৷ তাই রাষ্ট্রসংঘ সবসময় যথাযতভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে না৷ বর্তমান পৃথিবীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইংল্যাণ্ড ও ফ্রান্সই রাষ্ট্রসংঘের নিয়ন্ত্রক শক্তি৷

রাষ্ট্রসংঘে উপরিউক্ত রাষ্ট্রগুলোই বেশী করে নিজ নিজ  প্রভাব খাটায় ও অনেকক্ষেত্রে জল ঘোলা করে৷ দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় পৃথিবীর প্রধান ব্যষ্টিরা সকলেই মনে করেন রাষ্ট্রসংঘের বয়স অনেক হলো৷ তাই এবার রাষ্ট্রসংঘকে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করতে কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী৷ বিশেষ করে অস্ত্রব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও  মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে কতকগুলি নিয়মকে কঠোরভাবে মান্যতা দেবার জন্য সকল রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে হবে৷ আজ পৃথিবীর মানুষের অস্ত্র নয় বেঁচে থাকা নূ্যনতম রসদের প্রয়োজন রাষ্ট্রসংঘকে তার সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে দিয়ে সেই কাজ করাতে হবে৷

পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশে রাষ্ট্রসংঘের স্থায়ী কার্য্যালয় থাকাটা জরুরী,তাতে ইউ.এন.ও-এর মর্যাদাও গুরুত্ব বাড়বে৷ আই.এম.এফ.এর- অর্থভান্ডারকে আরো বাড়াবার দিকে সকল রাষ্ট্রকে নজর দিতে হবে৷

সর্বপরী পৃথিবীতে কোন সদস্য রাষ্ট্র যেন নাগরিকত্ত্ব আইন ও মানবিক মূল্যবোধকে সংকীর্ণ স্বার্থে অবহেলা না করে তার দিকে নজর দিতে হবে৷ কঠোরভাবে রাষ্ট্র সংঘকে আজ পৃথিবী থেকে দারিদ্র মোচন ও রোগমুক্তির শপথ নিয়ে এগোতে হবে৷ মানবতাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়ার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে মহান রাষ্ট্রসংঘকে৷ কারণ পৃথিবীর প্রতিটি নরনারী ও শিশু মহান রাষ্ট্রসংঘের সন্তান বিশেষ, কারণ সকল মানুষই হলেন---সেই অমৃতের সন্তান৷ মানুষের পরিচয় হলো তাঁরা মানুষ৷ এক মানব জাতি৷

শুধু তাই নয় সমগ্র মানব সমাজের ও রাষ্ট্রগুলির পবিত্র দায়িত্ব হোক পৃথিবীর বুকে সকল জীবজন্তু, গাছপালা যেন ধবংসপ্রাপ্ত না হয় তার জন্য ব্যাপকভাবে PCÁP (Prevention of cruelty against Animals and Plants) আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে হবে৷ অর্থাৎ প্রাণী ও গাছপালা নিষ্ঠুরভাবে ধবংসের বিরুদ্ধে আন্দোলনটি যাতে সার্থক হয়৷

স্মরণে রাখা দরকার, সৃষ্টির ভারসাম্যকে রক্ষা করার দায় দায়িত্ব হলো সমগ্র মানব সমাজের৷ মানবজাতি হলো  বিশ্বস্রষ্ঠার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি৷ আজ সমগ্র পৃথিবীতে ঐক্যবদ্ধভাবে মানব সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করেই সেই মহান বিশ্বৈকতাবোধের নবজাগরণ আনতেই হবে বিশ্বস্রষ্ঠার কল্যাণধর্মী সৃষ্টিকে সার্থক বিকাশের এষণায়৷ পৃথিবী রক্ষা পাবে যখন সেই এক বিশ্বরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে সমস্ত আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলি যৌথভাবে সার্বিক  কল্যাণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলবে৷ তাই আশু প্রয়োজন নব্য মানবতাবাদের জাগরণ যা মানব সমাজকে এক জাতি এক প্রাণ ও একতার মহামন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করবে৷

বাঙলার কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ঘোষণা করেছেন---

‘জগৎজুড়িয়া একজাতি আছে সে জাতির নাম মানব জাতি,

একই পৃথিবীর স্তন্যে পালিত একই রবিশশী মোদের ,সাথী’’৷

আজ অত্যন্ত আনন্দের কথা  শ্রদ্ধেয় মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর সামাজিক,অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রাউটের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে সমগ্র মানব জাতিকে  বিশ্বৈকতাবাদের পথে চলার প্রেরণা দিয়েছেন৷ সেই চলার পথে শুধু মানুষই নয়, পশু,পাখী, তরুলতা সবাই তার সাথী হবে কারণ সবার কথাই মানুষকে ভাবতে হবে৷ সেটাই হবে নব্যমানবতাবাদের পথ,  আঞ্চলিকতার পথ ধরে বিশ্বৈকতার পথে এগিয়ে চলার পথ৷ এরই সন্ধান দিয়ে গেছেন প্রাউট প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার৷ আর সেইপথেই প্রাউটিষ্টরা এগিয়ে চলেছেন সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যেই৷  (চলবে)