শামিয়ানা নেতা

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

‘কেণিকা’ শব্দের একটি অর্থ হল শামিয়ানা৷ শব্দটি ফার্সী৷ এ ক্ষেত্রে বাঙলার নিজস্ব শব্দ ‘কেণিকা’৷ রোদ ও অল্প বারিপাতের হাত থেকে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানকে বাঁচাবার জন্যে শামিয়ানার ব্যবহার হয়ে থাকে৷ এই ‘শামিয়ানা’ শব্দটি বাংলা ভাষায় এসেছে বড় জোর ৪০০ বছর৷ ছোটবেলায় আমি একজন শামিয়ানা–নেতার নাম শুনেছিলুম৷ তোমরা নিশ্চয় জানো, নেতা হবার জন্যে অনেকের সখের প্রাণ গড়ের মাঠ হয়ে থাকে৷ যোগ্যতা নেই, তবু নেতা হতে হবে৷ তাই তারা অনেক সময় অন্যকে দিয়ে ভাষণ লিখিয়ে নিয়ে নিজেরা তা কতকটা মুখস্থ করে জনসভায় ছেড়ে দেয়৷ হাততালির ব্যবস্থা আগে থেকেই করা থাকে৷ এদের জন্যে ‘শামিয়ানা–নেতা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়৷

আমার জানা জনৈক শামিয়ানা–নেতা কয়েকবারই ম্যাট্রিকে ঘায়েল হয়ে শেষ পর্যন্ত নেতা হবার পদটি নিরাপদ মনে করে সেটিকেই বেছে নিলেন৷ বলা বাহুল্য, লিখিত ভাষণ মুখস্থ করে তার ভালই চলছিল৷ কিন্তু যতিচিহ্ণের (Punctuation) জ্ঞান না থাকায় ভাষণ একটু ওলট–পালট হয়ে যেত৷ তাঁর সহকর্মীরা একদিন তাকে বললেন–‘‘দেখিয়ে, আপ্ পাঙ্ক্চুয়েশন শিখ লিজিয়ে৷’’

তিনি বললেন–প্রোনাউন ঔর প্রপার নাউন তো মুঝে মালুম হৈ (হ্যায়)৷ বহী চীজ না৷

সহকারীরা বললেন–পাঙ্কচুয়েশনভী ঐসা হী হৈ, পর্ থোড়া ইধ্র্–উধ্র্৷ জৈসা ‘বাটার’ (water) ঔর ৰাটার (butter)–দোনো করীব করীব এক হী হৈ, দোনো হী তরল হৈ৷ মগর থোড়া ফারাক্ ভী রহতা হৈ৷

তাঁরা তখন শামিয়ানা–নেতাকে যতিচিহ্ণ বোঝালেন৷ বললেন–জব হমলোগ কমা লিখেঙ্গে উস্কে বাদ আপ্কো বান্ (ওয়ান) বল্নে কা টাইম ছোড়না পড়েগা৷ জব্ ফুলিষ্টপ্ লিখেঙ্গে তব্ আপ্কো বান, টু, থীরী (ওয়ান, টু, থ্রী) কা টাইম ছোড়না পড়েগা৷

শামিয়ানা–নেতা বললেন–হান্ জী, ম্যায় সমঝ্ লিয়া৷

সহকারীরা লিখে দিলেন–প্যারে সজ্জনোঁ, মুঝে আজ কাফী হর্ষ্ হৈ, কি ম্যায় আপলোগোঁকা পাশ্ পঁহুচ গ্যয়া৷ মগর কহ্না যহী হৈ কী শীর্ফ আজ হী কে লিয়ে নহীঁ, বল্কি অনন্তকালকে লিয়ে ম্যায় আপলোগোঁকা পাশ আনা চাহতা হুঁ–, ঔর অনন্তকাল তক্ আপ্লোগোঁকো সাথ রহনা চাহতা হু৷’’ শামিয়ানা–নেতা কমা, ফুলষ্টপ, আর বান–টু–থীরীর হিসাব ভালভা্বে শিখে নিলেন৷ এবার তিনি শামিয়ানার নীচে দাঁড়িয়ে ভাষণ শুরু করলেন–

‘‘প্যারে সজ্জনোঁ কমা বান মুঝে আজ কাফী হর্ষ্ হৈ কমা কি ম্যায় আজ আপ্লোগোঁকা পাশ্ পঁহুচ্ গয়া ফুলিষ্টপ বান, টু, থীরী (ওয়ান, টু, থ্রী) মগর কহ্না যহী হৈ কমা বান শীর্ফ্ আজ হী কে লিয়ে নঁহী বল্কি অনন্তকালকে লিয়ে ম্যায় আপ্লোগোঁকা পাশ আনা চাহতা হুঁ কমা ঔর অনন্তকাল তক্ আপ্লোগোঁকা সাথ রহনা চাহতা হুঁ ফুলিষ্টপ বান টু থীরী৷

শ্রোতা–জনতা সোল্লাসে হাততালি দিয়ে তাঁকে সম্বর্দ্ধনা জানালেন৷ নেতা তো হাততালিই চাইছিলেন৷ তাঁর ভাষণটা প্রদত্ত হয়েছিল সম্ভবতঃ অল ইণ্ডিয়া চোর এ্যাণ্ড ডাকু কন্ফারেন্সে (নিখিল ভারত চোর ও ডাকাত সম্মেলন)৷ তাহলে তোমরা বুঝলে শামিয়ানা–নেতা কাদের বলে৷

*      *      *      *

ওই রকম একজন নেত্রীও ছিলেন৷ তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের জনৈক দেশীয় রাজ্যের মহারাণী৷ তাঁর ভাষণ লিখে দিতেন ভারতের জনৈক নামজাদা ব্যারিষ্টার৷ একবার এলাহাবাদে সর্বভারতীয় মহিলা সম্মেলন হয়েছিল৷ ব্যারিষ্টার সাহেবের লেখা ভাষণটি মহারাণী ভালভাবেই পড়ে নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সভাস্থলে দাঁড়িয়ে বিপুল জনসমাবেশ দেখে মহারাণীর মাথা ঘুরে যায়......ভিরমি যাবার উপক্রম হয়, সমস্ত ভাবনাই তাঁর তখন গুবলেট হয়ে যায়৷ মহারাণী ছিলেন শামিয়ানা–নেত্রী৷ সুতরাং  ভাষণের সুযোগ তিনি তো ছাড়বেন না, তা মুখস্থ থাক, বা না থাক বলবেনই৷ তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিন–চার বার বললেন–ম্যায় ক্যা কহুঁ...ম্যায় ক্যা কহুঁ...ম্যায় ক্যা কহুঁ৷ তারপর রুমাল দিয়ে সযত্নে টিপ বাঁচিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন–বড্ডী গরম...বড্ডী গরম...বড্ডী গরম৷ তারপরে মহারাণীর গলার স্বর আর বেরুল না, আগাগোড়া ভাষণটি ভুলে গেলেন আর কি ‘‘এক গেলাস পানী’’ বলে ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লেন৷

এক্ষার ব্যারিষ্টার ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন৷ তিনি বললেন–আজ যে সকল বিদুষী মহিলা এই সভায় এসে ভাষণ দিয়ে আমাদের কৃতার্থ করলেন তাঁদের অন্যতমা হচ্ছেন আমাদের এই মহারাণী৷ সত্যিই এঁর ভাষণের তুলনা ভারতে কেন, সমগ্র বিশ্বে বিরল৷ এখন আমাদের খতিয়ে দেখার দিন এসেছে যে ভারতের মহিলারা আজ কত দুঃখে আছেন আর তাঁদের সেই দুঃখ দেখে মহারাণীর কোমল প্রাণ আজ কী পরিমাণ বিগলিত হয়েছে কী পরিমাণ দ্রবিত হয়েছে৷ মহারাণী প্রথমেই বললেন–‘‘ম্যায় ক্যা কহুঁ ম্যায় ক্যা কহুঁ ম্যায় ক্যা কহুঁ’’ অর্থাৎ ভারতীয় নারীর দুঃখ–দুর্দশার ইতিকথা এত পর্বতপ্রমাণ যে মহারাণী এর কোন্খানটা বলবেন আর কোন্খানটা না বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না৷... ভারতীয় নারীর দুঃখের ইতিহাস মহারাণীর কোমল প্রাণকে এমন ওতঃপ্রোতভাবে গলিয়ে দিয়েছে যে মহারাণী ভেবে পাচ্ছেন না যে কোন্খানটি থেকে তাঁর বর্ণনা শুরু করবেন আর কোথায় বা হবে তার পরিসমাপ্তি৷ তাই মহারাণীর দরদী মন বলছে, ‘‘ম্যায় ক্যা কহুঁ...ম্যায় ক্যা কহুঁ...ম্যায় ক্যা কহুঁ’’৷ উঃ ভাবতেই পারছি না মহারাণীর কী অপূর্ব মমতা...মহীয়সী নারীর কী বিরাট হৃদয়বত্তা তারপর মহারাণী বললেন...মহারাণী কী বললেন...বললেন–বড্ডী গরম...বড্ডী গরম...বড্ডী গরম৷ অর্থাৎ অত্যাচারের নাগপাশে আজ ভারতীয় নারী পিষ্ট৷ শুধু যে রান্নাঘরের আগুনের উত্তাপেই তারা জ্বলেপুড়ে মরে যাচ্ছে তাইই নয়, অত্যাচারের নাগপাশের উষ্ণতাতেও তাদের দম বন্ধ হবার উপক্রম৷ সেই রান্নাঘরের উত্তাপ, সেই নাগপাশের দাবদাহ মহারাণীর কোমল মনকে স্পর্শ করেছে৷ মহারাণীর ওষ্ঠের মধুর হাসি মরুভূমির মারব জ্বালায় হারিয়ে গেছে৷ মহারাণী তাঁর অন্তরের বিদগ্ধ অনুভূতি, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন কবির মাধুর্য্যময় মুন্সীয়ানায় ছোট্ট কয়েকটি শব্দে বললেন–‘‘বড্ডী গরম...বড্ডী গরম...বড্ডী গরম’’ অর্থাৎ এ অত্যাচারের অনল জ্বালা আমি সহ্য করতে পারছি না......এ উষ্ণতার ক্লেশ আমার কাছে অসহনীয়৷

শ্রোতা–জনতা করধ্বনি দিলেন৷ ব্যারিষ্টার সাহেব শামিয়ানা–নেত্রীকে অদ্রিতুঙ্গে উঠিয়ে দিলেন৷

*      *      *      *

তোমরা একজন শামিয়ানা–নেতার পরিচয় পেলে–একজন নেত্রীর পরিচয়ও পেলে৷ কেমন লাগল

 

আগামী ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যাণ্ড সফরের আগেই পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেন জানালেন---ঋদ্ধিমান

ক্রীড়াপ্রতিনিধি ঃ গত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেষ্টে আঙুলে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন ঋদ্ধিমান৷ ভারতে প্রথম গোলাপি বলে দিন-রাতের  টেস্ট শেষ হওয়ার পরের দিনই মুম্বই উড়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসা করাতে৷ ডাক্তার  বলেছিলেন, আঙুলে চিড় ধরেছে৷ তাই অস্ত্রোপচার করাতে হতে পারে৷ এমতাবস্থায় দ্রুত শহরে ফেরেন ঋদ্ধি ও অপারেশন হয় তার৷

এখন আপাতত তিনি সুস্থ, কিন্তু ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন আছে তার তাই তিনি প্লাস্টার করা হাত দিয়ে অর্র্থৎ ঋদ্ধিমানের অনামিকায় প্লাস্টার করা হয়েছিল, সেটি নিয়েই রীতিমতো নেট প্র্যাকটিশে আসছেন তিনি৷  কখনও ইডেন, কখনও কালীঘাট মাঠ, কখনও সল্টলেক, ডিসেম্বরের শেষের দিকে এই প্লাস্টার কাটা হবে ডাক্তাররা জানিয়েছেন৷ এর পরেই তাকে পরীক্ষা করাতে যেতে হবে মুম্বাই৷ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় ক্রিকেট এ্যাকাডেমিতে  রিহ্যাবিলিটেশন শুরু হবে৷’’

কবে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হবেন? এটি এখন সকলেরই প্রশ্ণ ? ঋদ্ধিমান সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন  যে, তিনি জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়-এর মধ্যেই সুস্থ হতে চান, কারণ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ থেকে শুরু উইলিয়মসনদের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট৷

তিনি আরও জানান কিভাবে তিনি নিজেকে সুস্থ করবেন--- এখনও  কিছু ঠিক হয়নি৷  তবে নিউজিল্যাণ্ড যাওয়ার আগে  চেষ্টা করব বাংলার হয়ে দুটো রঞ্জি খেলার, পুরোটাই নির্ভর করছে আমার সুস্থ হওয়ার ওপরে দেখা যাক জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে কত দিনের মধ্যে ফেরা যাবে৷