(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
কর্ষকদের ঊর্ধশ্বাসের মাত্রাবৃদ্ধি একদিকে আর অপরদিকে ফড়ে-দালাল প্রমুখ মধ্যস্বত্বভোগীদের কালোবাজারী রমরমা বেকারত্বের স্বপ্ণভঙ্গজনিত নিরাশায় ডুবে যাওয়া ইত্যাদির অপ্রতিরোধ্য করালগ্রাসে নিমজ্জিত রাষ্ট্রের মুষ্টিমেয় কুবের ধনপতিদের ছাড়া বাকী জনগণ৷ সুতরাং, বর্তমানে ১৩০ কোটি লোকের দেশটায় এভাবে প্রায় সোয়াকোটি মানুষই যেক্ষেত্রে দারিদ্রের খোঁয়াড়ে আটক পড়েছে, সেক্ষেত্রে ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা সবার প্রিয় ‘হমারা ভারত মহান’ বা ‘শাইমিং ও রাইজিং ইন্ডিয়া’ আর ‘সারে জ’হাসে অচ্ছা হিন্দুস্তাঁ হমারা---র সুশ্রী মুখমণ্ডলে কালিমালেপন হতে বাকী রইল কোথায়?
তবে হ্যাঁ, স্বল্প পরিমাণ হলেও কালো কালি লাগার ফাঁকে ফাঁকে যে-সব মুখাংশগুলো ফাকা রয়েছে, সব -ফাঁকা জায়গাগুলোতেও আবার কেন্দ্র ও রাজ্য সমূহের নানাবিধ হঠকারী পলিটিক্যালইটিজের কারণে মড়াচূনের প্রলেপও লাগতে শুরু করেছে৷ অবশ্য এরূপ বার্নিশ লাগানোর দক্ষ রাজমিস্ত্রীরা অতীতে কংগ্রেসী আমলে জনাব নেহরুর সময় থেকেই ‘অপনা কিসমত বনানে কে বাস্তে’ ঠিকেদারির দায়িত্বটা লুফে নিয়েছিল৷ আর, পোড়া দেশটার?? ও ‘জনমতকে লিয়ে রূপেয়া’-র যোগানদার ধনকুবেরদের মদতপুষ্ট উক্ত রাজমিস্ত্রীদের পুত্রকন্যা আর পৌত্র-পৌত্রী ও দৌহিত্র এখনও বহাল তবিয়তে আছে
দেশভাগ ক্রিয়ার যজ্ঞসমাপ্তির পর, সম্পাদিত নেহরু -লিয়াকত-চুক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নেহরু-তনয়া ইন্দিরাজী করেছিলেন ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি ও এর অন্যতম মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালী-হেনস্তা করা৷ উক্ত কারণেই ভারতভূমি থেকে বাঙালী বিতাড়নের গ্যাঁড়াকল সদৃশ ভিত্তিবছর ধরা হয়েছিল ১৯৭১ সাল৷ পরবর্তীকালে ইন্দিরা-তনয় একই উদ্দেশ্যে সম্পাদন করলেন রাজীব-অগপ চুক্তি (অসমে) ও রাজীব রাঙ্খল চুক্তি (ত্রিপুরায়)৷ ব্রিটিশদের দ্বারা নেপাল থেকে গোর্খাদের নিয়ে পলিটিক্যাল বাজীমাত করার জন্যে গেইমটা শুকু করেছিলেন কমরেড জ্যোতি বসু৷ পরে, সেই গেইমে নামলেন অন্যান্যরা৷ এরই সুবাদে এখন পঃবাঙলার বাঙালীদের তথা সমগ্র বাঙালী জনগোষ্ঠীটারই শান্তির নীড়ে আগুন ধরে গেল৷ বর্তমানে পশ্চিমবাঙলাকে গিলতে চেয়ে সেই গোর্র্খদেরই বড়শীর ‘আধার’ বানিয়েছে কেন্দ্রের শাহেনশা গোষ্ঠী বিজেপি৷ শুধু তাই নয়৷ সমগ্র ভারতেই গৈরিকায়ন করার নেশা ধরে গেছে শাহ-মোদীর জুটিতে৷ তাই উঃপূর্বাঞ্চল থেকেই কীভাবে বাঙালীদের বিতাড়ন করা যাবে,সেই দাবার গুটিচালনা এখন জমে উঠছে৷ ছয়-সাতদশক ধরে যে বাঙালীরা অসমে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন ও যাদের বোটে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারে ও অসম রাজ্য সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রয়েছেন, সেইসব বাঙালীদের ২য়/৩য় শ্রেণীর নাগরিক বানাতেই শুধু নয়, তাদের পুরোদস্তুরভাবে রাষ্ট্রহীন ‘‘নোতুন ইহুদী’’বানাতেই অসমের গোয়ালপাড়ায় কোটি কোটি রাজকোষের অর্থবরাদ্দ করা হচ্ছে ডিটেনশন-ক্যাম্প তথা বাঙালী জব্দ করার খোঁয়াড় বানাতে৷
এদিকে মিজোরামেরই বাসিন্দা প্রায় ৩০/৩৫ হাজার উপজাতিদের মিজোরাম-সরকার তাড়িয়ে দেবার পর ওরা গত দু’দশকেরও বেশী সময় ধরে শরণার্থী হয়ে রয়েছে৷ ওরা মানুষ হিসেবে মানুষের সঙ্গে সহাবস্থান করলে কারোরই আপত্তির কারণ দেখা দিত না৷ কিন্তু, ওদের জীবনধারা আশানুরূপ নয় বলেই (কারণ অজানা ও সম্ভবত রহস্যজনক) স্থানীয় জনসাধারনের ওদের নিয়ে প্রবল আপত্তি জেগে উঠেছে৷ ত্রিপুরা সরকার, মিজোরাম সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার--- তিনের বৈঠকে এক তরফা ভাবে ত্রিপুরা-সরকার রাজ্যে তাদের পুনর্বাসনের ঠিকেদারি নিয়ে নিলেন৷ তাই, প্রশ্ণ দেখা দিল ঃ--- (১) মিজোরাম সরকার তাদের ঠাঁই দিলেন কেন? (২) শুধু ত্রিপুরাই বা এ দায়িত্ব একা বহনে রাজী হবে কেন? (৩) পাশ্ববর্তী অসম-রাজ্যে প্রচুর খালি জমি জায়গা পড়ে থাকতে সেখানেও তাদের পাঠানোর চিন্তা কেন করা হল না? (৪) মিজো উপজাতি যদি রিয়াং উপজাতিকে ‘আপন’ করে নিতে চায়, সেই অবস্থায় ত্রিপুরায় তিপ্রারাই বা তাদের নিয়ে এতটাই আগ্রহী হবার পেছনে কী রহস্য লুকানো রয়েছে? ইত্যাদি৷
- Log in to post comments