মানুষের অস্তিত্ব ত্রি–স্তরীয় অর্থাৎ এর তিনটে স্তর ত্রব্ধব্জ্ত্রব্ধব্ভপ্প রয়েছে– শারীরিক ত্নড়ম্ভব্দন্ন্তুত্রপ্ত্, মানসিক ত্নড়ম্ভন্তুড়ন্ন্তুগ্গ ও আধ্যাত্মিক ত্রহ্মন্ব্জন্ব্ধব্ভ্ত্রপ্৷ এই যে তিনটে স্তর এদের কোনটিকেই অবজ্ঞা করা যায় না৷ শারীরিক স্তরের চেয়ে মানসিক স্তরের মহত্ত্ব অধিক, কিন্তু তাই বলে শারীরিক স্তরটাকেও ত্নড়ম্ভব্দন্ন্তুত্রপ্ত্ ব্দব্ধব্জ্ত্রব্ধব্ভপ্প উপেক্ষা করা যায় না৷ ঠিক তেমনি মানসিক স্তর ত্নব্দম্ভন্তুড়ন্ন্তু ব্দব্ধব্জ্ত্রব্ধব্ভপ্প অপেক্ষা আধ্যাত্মিক স্তরের ত্রহ্মন্ব্জন্ব্ধব্ভ্ত্রপ্ ব্দব্ধব্জ্ত্রব্ধব্ভপ্প গুরুত্ব বেশী কিন্তু মানসিক স্তরটাও ত্নব্দম্ভন্তুড়ন্ন্তু ব্দব্ধব্জ্ত্রব্ধব্ভপ্প অবহেলার জিনিস নয়৷ তাই তারও চর্চা আবশ্যক৷ তেমনি যারা আধ্যাত্মিক চর্চা করে না, কেবল শরীর ও মনেরই চর্চা করে তারা দেখতে মানুষের মত হলেও তাদের মানসিকতা স্থূল হয়ে পড়ে৷ আর কেউ যদি শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির চেষ্টা করে কিন্তু মনোজাগতিক বিকাশের জন্যে চর্চা করে না, সেও ধীরে ধীরে জড়ত্বে পর্যবসিত হবে৷ দেশ ও সমাজের সামগ্রিক বৌদ্ধিক বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যাবে৷ অনুরূপ ভাবে মানুষ যদি শারীরিক উন্নতির জন্যে প্রয়াসশীল না হয় তাহলে গোটা সমাজটায় সুস্থ, সবল মানুষের অভাব দেখা দেবে৷ সেটাও বাঞ্ছনীয় নয়৷ তাই তিনটে স্তরেই সমানভাবে চর্চা হওয়া উচিত আর তিনের মধ্যেই একটু সুষ্ঠু সামঞ্জস্য থাকা উচিত৷ ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক–তিনটে স্তরেই উন্নতির জন্যে যথেষ্ট চেষ্টা করবে৷ তারা যেমন লেখাপড়া করে বৌদ্ধিক ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করবে তেমনি কিছুক্ষণের জন্য বাপ–মায়ের সঙ্গে বসে জপ–ধ্যান–ভজন করে নেবে অর্থাৎ তাদের আধ্যাত্মিক চর্চাটাও হয়ে যাচ্ছে–যখন বড় হবে তখন আচার্যের কাছে দীক্ষা নেবে৷ সাধনা করবে, জপ–ধ্যান–আসন–প্রা অভ্যাস করবে, পড়াশোণা করবে ও সব কিছুর চর্চা করবে৷ একটা সামঞ্জস্য, একটা সন্তুলন থাকা চাই৷ এই তিন স্তরে সামঞ্জস্য না থাকলে ব্যষ্টি সত্তার যেমন ক্ষতি হয়, সমাজেরও তেমনি ক্ষতি হয়৷
তোমাদের জন্যে যে তাণ্ডব নৃত্যের ব্যবস্থা রয়েছে তা একাধারে শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির সহায়ক৷ তাই আমার বক্তব্য হ’ল, অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক লোক এই তাণ্ডব নৃত্যের অভ্যাস করুক৷ যাদের বয়স একটু অধিক, তারা দু’বেলা সাধনার সময় এটা অভ্যাস করবেন৷ যারা যুবক তারা এটা পুরোপুরি অভ্যাস করুক, পরস্পরের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা চলুক৷
তাণ্ডব অভ্যাস নারীদের পক্ষে ঠিক নয় কারণ তাদের মধ্যে কিছু শারীর–বৈজ্ঞানিক অসুবিধা রয়েছে৷ কিন্তু তাদের জন্যেও তো কিছু চাই৷ তাই আমি পটনাতে থাকাকালীন এক ধরণের নোতুন নৃত্যের (কৌশিকী নৃত্য) উদ্ভাবন করেছিলুম৷ এই কৌশিকী নৃত্য উপকারের দিক থেকে তাণ্ডবের প্রায় সমান৷ তাণ্ডবের মত অত ফলপ্রদ না হলেও তাতে বেশ কিছুটা সুফল তো অবশ্যই পাওয়া যাবে৷ কৌশিকী নৃত্য নারী–পুরুষ উভয়ের জন্যেই উপকারী৷
বিশেষ দ্রষ্টব্য ঃ
এই কৌশিকী নৃত্যের উপকারিতা হ’ল ঃ–
(১) এই নৃত্যে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ও গ্ল্যাণ্ডগুলোর ব্যায়াম হয়৷ (২) মানুষের দীর্ঘায়ু হয় (৩) সুূপ্রসবে সাহায্য করে (৪) মেরুদণ্ডের নমনীয়তা রক্ষা করে৷ (৫) মেরুদণ্ড, ঘাড়, কোমর ও শরীরের অন্যান্য সন্ধিস্থলের বাত (আর্থারাইটিস) রোগ ভাল হয়৷ (৬) মেরুদণ্ড, ঘাড়, হাত ও কোমরের বাত নিরাময় হয়৷ (৭) মনের দৃঢ়তা ও প্রখরতা বৃদ্ধি পায়৷ (৮) মেয়েদের অনিয়মিত ঋতুস্রাবজনিত ত্রুটি দূর করে৷ (৯) গ্রন্থিরস ক্ষরণ–প্রক্রিয়া ব্দন্দ্বন্তুব্জন্দ্বব্ধ নিয়মিত হয়৷ (১০) ব্লাডার ও মূত্রনালীর রোগ নিরাময় করে৷
(১১) দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণ আসে৷ (১২) মুখমণ্ডল ও চর্মের ঔজ্জ্বল্য ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির সহায়তা করে৷ (১৩) চামড়ার কুঁচকানো ভাবকে ঠিক করে দেয়৷ (১৪) অলসতা দূর করে দেয়৷ (১৫) নিদ্রাল্পতা রোগ সারিয়ে দেয় (১৬) হিষ্টিরিয়া রোগ ভাল করে দেয়৷ (১৭) ভীতন্মন্যতা দূর করে দেহে–মনে সাহস জাগায়৷ (১৮) নৈরাশ্য দূর করে৷ (১৯) নিজের প্রকাশ–ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে (২০) মেরুদণ্ডের বক্রতা, অর্শ, হার্নিয়া, হাইড্রোসিল, স্নায়ু যন্ত্রণা ও স্নায়ুদৌর্বল্য দূর করে৷ (২১) কিডনি, গলব্লাডার, গ্যাষ্ট্রাইটিস, ডিসপেপসিয়া, এসিডিটি, ডিসেন্ড্রি, সিফিলিস, গণোরিয়া, স্থূলতা, কৃশতা ও লিভার সংক্রান্ত ত্রুটি দূর করতে সহায়তা করে৷ (২২) ৭৫–৮০ বৎসর বয়স পর্যন্ত শরীরের কর্মদক্ষতা বজায় থাকে৷
এখন জগতে যা কিছু বস্তু রয়েছে, মানুষ জেনেশুনে বা না জেনে সেই বস্তুটির রঙেতে আকৃষ্ট হয়৷ যেমন মানুষের চোখ সবুজ রঙ, চকোলেট রঙ–এগুলোতে চোখ ভাল থাকে, ঠাণ্ডা থাকে৷ তোমরা বোধ হয় জান, কৌশিকী নৃত্যের জন্যে ওই দু’টো রঙ বেছে নেওয়া হয়েছে৷ তাতে চোখ ভাল থাকে৷ সব জিনিসেই রঙের প্রভাব আছে৷ যখন মানুষ মনকে এমন মজবুত করে নেয় যে অন্য কোন বস্তুর রঙের দ্বারা সে আর প্রভাবিত হচ্ছে না, তখন সেই অবস্থাটাকে বলা হয় ‘বৈরাগ্য’৷
(‘‘বৈরাগ্যমেবাভয়ম্’’, ‘আনন্দবচনামৃতম্’, ৪থ খণ্ড)
১৯৭৮ সালের ৬ই ডিসেম্বর তারিখে আমি কৌশিকী নৃত্যের উদ্ভাবন করেছি৷ এই নৃত্য যেমন এক ধরণের ব্যায়াম তেমনি এটি বাইশ প্রকার রোগের ঔষধও৷ বলতে পার প্রায় সকল স্ত্রীব্যাধিরই এটা এক ধরণের ফলপ্রদ ঔষধস্বরূপ৷ সেই সঙ্গে অল্পবয়স্ক ছেলেদের বেশ কতকগুলো রোগের নিরাময়েও সাহায্য করবে৷ মানুষের লিভার বা যকৃতের নানান রোগের প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করবে৷ প্রসূতির নিরাপদ সন্তান প্রসবে ও মানুষের বার্দ্ধক্যের গতিকে বিলম্বিত করতে সাহায্য করবে৷ তাই বলছিলুম, কৌশিক নৃত্য যেমন এক ধরণের ব্যায়াম তেমনই অনেকগুলি রোগ নিরাময়ে সাহায্যকারীও৷
(‘‘পরমপিতার বিশেষ দায়িত্ব আছে’, ‘আনন্দবচনামৃতম্, ৬ষ্ঠ খণ্ড)