শ্বাসযন্ত্র সংক্রান্ত রোগ ও জ্বররোগে তুলসী

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

তুলসীর গুণাগুণ ঃ বাংলার গ্রামে রাধাতুলসী যতটা জনপ্রিয়, বাবুই তুলসী বা কৃষ্ণতুলসী ততটা জনপ্রিয় নয়৷ সব তুলসীর ঔষধীয় গুণ প্রচুর৷ তবে ঔষধীয় গুণে সবার সেরা রাধাতুলসী, তারপর বাবুইতুলসী, তারপরে চন্দন তুলসী, তারপরে কৃষ্ণতুলসী৷ রাধাতুলসী মানুষের বয়স যত কম থাকে তার ওপরে তত বেশী প্রভাব বিস্তার করে৷ যত বয়স ক্ষাড়ে রাধাতুলসীর ঔষধীয় প্রভাব তার তুলনায় তত কম হয়৷ মানুষের বয়স যত বেশী হবে কৃষ্ণতুলসীর ঔষধীয় গুণের প্রভাব তত বেশী কাজে লাগবে৷ আর বয়স যত কমতে থাকবে ঔষধীয় গুণের প্রভাব তত কমতে থাকবে ঙ্ম দ্রব্যগুণের ভিত্তিতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন বিশেষ রোগে যে প্রকার তুলসী বেশী কার্যকরী, তা না পাওয়া গেলে অন্য প্রকার তুলসী ব্যবহার করলে তত ফল না হলেও অনেকখানি ফল পাওয়া যায়ক্ষ৷

শিশুদের রোগে রাধাতুলসী ঃ প্রায় পঁচিশ প্রকার শিশু রোগের ঔষধ হচ্ছে এই তুলসী৷ সাধারণভাবে শিশুদের সর্দিজ্বরে ও সর্দিতে মধু সহ রাধা তুলসীর রস বিশেষ কার্যকরী৷ আতুরে শিশুর অসুখ (সর্দি–কাশি) হলে মধু সহ রাধাতুলসী (পাতার রস) খুব কার্যকরী হয়ে থাকে৷

তরুণ বয়সের রোগে রাধাতুলসী ঃ তরুণ বয়সের কয়েকটি ব্যাধির আশ্চর্যজনক ওষুধ হচ্ছে তুলসী, বিশেষ করে রাধাতুলসী৷ ১৬ থেকে ২৪ বৎসর বয়সের ছেলেদের অতি মাত্রায় শুক্রক্ষয়ে এক কনিষ্ঠাঙ্গুলি পরিমাণ রাধাতুলসীর মূল (আসল মূল বা শাখা মূল দুই–ই চলতে পারে অভাবে কৃষ্ণতুলসীর মূল) ছাঁচি পানের সঙ্গে (ক্ষোঁটা বাদে) খালি পেটে চিবিয়ে খেলে ঔষধটি চমৎকার কাজ দেয়৷ রোগের বাড়াবাড়ি অবস্থায় প্রত্যহ সেবন করতে হয়৷ রোগ সেরে যাবার পরেও চারটি রবিবার ভোরে উঠে খেতে হয়৷

হাঁপানি রোগে বাবুই তুলসী ঃ বাবুই তুলসীর রস শ্বাসরোগের ঔষধ৷ বাবুই তুলসীর গাছে এক ধরনের ছোট পোকা বাসা বাঁধে৷ বাসা সমেত ঐ পোকাটি লাল সুতোয় বেঁধে পুরুষ দক্ষিণ হস্তে ও নারী বাম হস্তে ধারণ করলে হাঁপানি কষ্টের উপশম হয়৷ যাদের মাতৃকুলে হাঁপানি রোগ আছে তাদের হাঁপানি রোগের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে৷ প্রাচীন কালের লোকের ধারণা ছিলো হাঁপানি রোগটি মাতৃকুল থেকেই আসে৷ যাই হোক যাদের মাতৃকুলে হাঁপানি রোগ আছে তাদের যদি পাঁচ থেকে পনের বছরের মধ্যে কখনও কোন ধরনের শ্বাসরোগের বা শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে ওই শিশু (বা বালক) প্রতি শনিবার খালি পেটে ভোরে এক চামচ বাবুই তুলসীর রস (পাতার রস, গাছের রস নয়) পান করলে তাই থেকে মাতৃকুল সঞ্জাত হাঁপানি রোগের পুনরুদয়ের সম্ভাবনা থাকে না৷

জ্বর রোগ ও যক্ষ্মায় চন্দন তুলসী ঃ যক্ষ্মা রোগের প্রাথমিক অবস্থাতে চন্দন তুলসী চমৎকার কাজ দেয়৷ ঘুসঘুসে জ্বরেও চন্দন তুলসীর বটিকা মধু সহ বিশেষ ফলপ্রদ৷ দীর্ঘকালীন জ্বর রোগ যা কোন অবস্থাতে ছাড়তে চায় না, অল্প সৈন্ধব লবণ সহ একত্রে দুই বটিকা চন্দন তুলসী মেড়ে খেলে ওই রোগ সেরে যায়৷ চন্দন তুলসী স্নায়ু রোগেও ঔষধের কাজ করে৷ চন্দন তুলসী অত্যন্ত ঝাঁঝালো ভেষজ৷ শিশুর স্নায়ু রোগে এ মন্ত্রবৎ কাজ করে ঙ্মপাতার রসক্ষ৷

বিষক্রিয়া ও কৃষ্ণ তুলসী ঃ বিষক্রিয়া নাশনের গুণ কৃষ্ণতুলসীর মধ্যে মুখ্যভাবে রয়েছে৷ অন্যান্য তুলসীতে এই গুণ গৌণভাবে রয়েছে৷

রাম তুলসী ঃ রাম তুলসীরও যথেষ্ট ঔষধীয় গুণ আছে৷

তুলসীর অন্যান্য ব্যবহার ও উপকার ঃ শাদাটে ধরনের রাধাতুলসী থেকে যে কাঠ পাওয়া যায় তা থেকে তুলসীর মালা তৈরী হয় ও কন্ঠী হিসেবে কোন কোন সম্প্রদায়ের দ্বারা ব্যবহূত হয়৷ প্রাচীন বাংলায় বাবুই তুলসীর কাঠ থেকে নানান ধরনের ছোট ছোট পণ্যও তৈরী করা হতো৷ তুলসী যেহেতু একটি সুগন্ধি উদ্ভিদ তাই এর থেকে নানান ধরনের এসেন্স তৈরি হতে পারে৷ তুলসীর হাওয়া খুবই স্বাস্থ্যপ্রদ৷ দু’বেলা বিশেষ করে সন্ধ্যাবেলায় এর বেদীতে প্রদীপ জ্বালার রীতি বাংলা ও ভারতে প্রচলিত৷  এই রীতির মাধ্যমে অন্য কোন পুণ্য না হলেও এর কাছ দিয়ে দু’বেলা যাওয়া আসা করলে এর হাওয়া শরীরের উপকার করে৷ তুলসীর ওপরে সূর্য ও চন্দ্রের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়৷ পূর্ণিমা রাত্রে তুলসীর ওপর চন্দ্রালোকের প্রভাব বেশী পরিলক্ষিত হয়৷