শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের প্রকাশ বয়স অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে৷ এমনকি এক শিশুরোগী থেকে অন্য শিশুতে উপসর্গের নানা অমিল লক্ষ্য করা যায়৷ ইনফ্যাণ্ঢ বা অল্পবয়সী শিশুতে এ রোগের চেহারা চিনতে পারা তত সহজ নয়৷ যেমন, এ অসুখে ভুগছে অথচ তার প্রকাশভঙ্গী অন্য রকম৷ এক থেকে পাঁচ দিনের জ্বর, গলায় প্রদাহের নমুনা, সর্দি ও সামান্য কাশি৷ মনে হবে হয়তো বা শিশুটি অন্যান্য ভাইরাসজনিত সর্দিজ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরণের কোনো অসুখে অক্রান্ত৷ তবে বড় শিশুর ক্ষেত্রে এ রোগের প্রকাশভঙ্গীটি কিছু স্বচ্ছ যেমন হঠাৎ করে জ্বর এল৷ বেশী জ্বর ১০৩০ থেকে ১০৬০ ফারেনহাইটের মধ্যে৷ সঙ্গে সাধারণত মাথার সামনে ও চোখের গর্তে গর্তে খুব ব্যথা অনুভূত হয়৷ স্বল্পস্থায়ী র্যাশ এ পর্যায়ে অর্থাৎ জ্বরের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্ঢার মধ্যে সারা শরীরে দেখা যেতে পারে৷ সাধারণ নিয়মে জ্বরের উচ্চমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হৃদস্পন্দন হারও বাড়ে, কিন্তু জেঙ্গু জ্বরের হার্টরেট তুলনায় শ্লথ থাকে৷ মাংসপেশী ও অস্থিসন্ধির ব্যথা বেশীরকমের অসহ্য হয়ে উঠতে পারে৷ দুই থেকে ছয় দিনের দিন জ্বর, বমি বমি ভাব ও বমির আধিক্য লক্ষিত হয়৷ বেশী জ্বরজনিত কারণে কোনো কোনো শিশুতে খিচুনি হতে দেখা যায়৷ শরীরের গ্লাণ্ডগুলোও ফুলে যেতে পারে৷
এই যে ডেঙ্গু ভাইরাস, কমপক্ষে এদের চারটি সেরাটাইপ দেখা গেছে৷ মশার কামড়ে যদি একসঙ্গে বা পরপর একাধিক সেরাটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাস শিশুর দেহে প্রবেশ করে তবে মারাত্মক কখনো বা জীবন সংহারক রোগের আবির্ভাব ঘটে৷ দেহে কেপিলারি রক্তনালীতে লিক দেখা দেয়৷ আপনা আপনি রক্তপাত ঘটে দেহের বিভিন্ন স্থান থেকে৷ শকে চলে যায় শিশু৷ এর নাম ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার৷ ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দেওয়ার দুই থেকে পাঁচ দিন পর শিশুর অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকে৷ হাত–পা খুব শীতল, কপালে ও পায়ে–হাতে রক্তদানার বিন্দু দেখা যায়৷ র্যাশ দেখা দিতে পারে৷ এ সময় নাড়ী খুব দুর্বল ও চঞ্চল হয়ে ওঠে৷ অন্ত্রনালী থেকে রক্তক্ষরণ ঘটে কোনো কোনো সময়৷ বুকে জল জমে৷ ডেঙ্গু জ্বরে রক্তে শ্বেতকণিকার ভাগ খুব কমে যেতে পারে৷ সেরোলজিতে রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করে৷ ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে প্লেটলেট কাউণ্ঢ কমে যায়, হিমেটোক্রিট ২০ শতাংশ বা তারও বেশী বেড়ে যায়৷ প্রলম্বিত হয় ব্লিডিং টাইম৷ রোগের চিকিৎসা শুধু ডেঙ্গু জ্বরে তেমন বিপদ নেই৷ বিশ্রাম, প্যারাসিটামল ও কোল্ড স্পঞ্জিংয়ের সাহায্যে জ্বরের মাত্রা কমানো, বিশেষত যেন তা ১০৪০ ফারেনহাইটের নিচে তাঁকে৷ শিশুকে জলপান ও তরল খাবার দেওয়ার সাহায্যে দেহের জলীয়ভাগ স্বাভাবিকে বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ এতে করে শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে৷ ব্যথা লাঘবে সামান্য ঘুমের ওষুধ দেওয়া যায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো৷ অন্যদিকে ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার মনে হলে কালবিলম্ব না করে হাসপাতালে শিশুকে নিয়ে আসা৷ হিমোরেজিক ফিভার হয়ে শকের কারণে মৃত্যু হার প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের মতো থাকে৷ কিন্তু আগেভাগের সফল চিকিৎসায় ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভারে তা ২ শতাংশে নামিয়ে আনার মতো তথ্য রয়েছে৷ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুকে কখনই, (এসপিরিন জাতীয়) ওষুধ দেওয়া যাবে না৷ আশারকথা বছর কয়েকের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধক ভ্যাকসিন মানুষের হাতে এসে যেতে পারে৷
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণসমূহ
নিচের দুই বা ততোধিক লক্ষণ ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায়–
(১) মাথাব্যথা (২) চোখের পিছনে ব্যথা (৩) মাংসপেশীতে ব্যথা
(৪) গাঁটে ব্যথা (৫) চামড়াতে কালচে ছোপ ছোপ দাগ (৬) রক্তক্ষরণ, (দাঁতের মাড়ি, কাশির সঙ্গে) (৭) কালো রংয়ের মল৷
ডেঙ্গু রোগের সাধারণ চিকিৎসা
(১) বমি ও প্রচণ্ড জ্বরের কারণে তৃষ্ণা ও জল শূন্যতার সৃষ্টি হয়৷ সুতরাং, প্রচুর পরিমাণ জল খেতে হবে৷
(২) ওরস্যালাইন অথবা ফলের রস অধিক কার্যকর৷
(৩) জ্বর কমানোর জন্যে প্যারাসিটামল অধিক ফলদায়ক৷ নিম্নোক্ত মাত্রা অনুসরণ করুন যখন শরীরের তাপমাত্রা ১০২০ ফারেনহাইটের অধিক থাকবে–
১ বছরের নীচে–৬০ মিঃগ্রাঃ/মাত্রা
১ থেকে ৩ বছর–৬০–১২০ মিঃগ্রাঃ/মাত্রা
৩ থেকে ৬ বছর– ১২০ মিঃগ্রাঃ/মাত্রা
৬ থেকে ১২ বছর– ২৪০ মিঃগ্রাঃ/মাত্রা
২৪ ঘণ্ঢার মধ্যে ৬ বারের অধিক প্যারাসিটামল সেবন করা যাবে না৷
(৪) যদি ২ বছরের নীচে শিশুকে ওরস্যালাইন দেওয়া হয়, সঙ্গে ফলের রস অথবা জল দেওয়া উচিত ওরস্যালাইনের অর্ধেক৷
(৫) ১ লিটার জলে ২ প্যাকেট ওরস্যালাইন গুলিয়ে ২ বছরের নীচে শিশুকে ১ চা চামচ করে ১–২ মিনিট পর পর খাওয়ান৷
(৬) কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চাদের অস্থিরতা কমানোর জন্যে ঘুমের ওষুধ প্রযোজ্য৷ এক মাত্রায় ক্লোরাল হাইড্রেট মুখ দিয়ে অথবা পায়ু পথে প্রয়োজ্য৷ (১ গ্রাঃ–এর অধিক নয়৷
- Log in to post comments