সময়োচিত কিছু কথা

লেখক
বিশ্বদেব মুখার্জী

সম্প্রতি বহুল প্রচারিত এক সংবাদপত্রের পশ্চিম মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম পাতায় মাঠে পড়ে বেহুঁশ কিশোরী’’ শীর্ষক এক সংবাদ বের হয়৷ এই খবর পড়লে যে কোনও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের মনকে নাড়া দেবেই৷ শুধু এই ঘটনাটিই নয়, বর্তমান সময়ে কিশোর কিশোরীদের সাথে ঘটে যাওয়া এমন কিছু কিছু খবর আমাদের নজরে আসছে যা দেখে শুনে সকলেই স্তম্ভিত৷ অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্মানের কথা ভেবে স্থানীয় মানুষজন এসব খবর ধামাচাপা দিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে অনেক পরিবারই নিরাপদ নয়৷

সংবাদে প্রকাশ একটি খেলার মাঠে রাতের বেলা নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে বন্ধুদের সঙ্গে মদ্যপান করে বেহুঁশ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়৷ যৌন নিগ্রহ হয়ে থাকতে পারে ভেবে রাজনীতির কারবারীরা ছুটে গিয়েছিল ঘটনাস্থলে৷ পুলিশও খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিল৷ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কিশোরীর পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চিকিৎসকগণ জানিয়ে দেন যৌন নিগ্রহ হয়নি, অতিরিক্ত মদ্যপান করার ফলেই কিশোরীটির এমন অবস্থা হয়েছিল৷ রাজনীতির কারবারিরা স্থান ত্যাগ করে, কারণ তারা যে কারণে গিয়েছিল তাদের হাতে সেরকম অস্ত্র কিছু উঠে এল না৷ ফলে তাদের আর তেমন কাজ ছিল না! এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরীটির বাবা অবশ্য জানায় দোলের দিনও সে এমনভাবেই মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে এসেছিল৷ মদসহ অন্যান্য নেশার উপকরণ এত সহজলভ্য হয়ে যাওয়ার কিশোর কিশোরীরা এই ফাঁদে পা দিয়ে দিচ্ছে৷ এ ব্যাপারে অভিভাবকদের আরও বেশি সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার৷ নাহলে নবমশ্রেণীতে পড়ছে এমন এক কিশোরী বন্ধুদের সঙ্গে টিউশন যাওয়ার নাম করে ঘর থেকে বেরিয়ে মদ্যপান করে বেহুঁশ হয়ে যায়৷ একদিনে সে এই পর্যায়ে এসে পৌঁছায়নি৷ বাড়ির লোকজন একটু সতর্ক থাকলে হয়তো এই বয়সে এতটা বেপরোয়া হতে পারতো না৷ এই বয়সটায় অভিভাবকদের সন্তানদের উপর কড়া নজর রাখা জরুরী৷ একবার ভুল পথে পা বাড়ালে তার সারাটাজীবন যে নষ্ট হয়ে যেতে পারে এই সহজ সত্যটা সবার আগে বুঝিয়ে দিতে পারে তার অভিভাবকগণ৷ এরপরেই যাঁদের দায়িত্ব তাঁরা হলেন মাননীয় শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ৷ লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের  চরিত্র ঘটনের শিক্ষাও তো তাঁদের দেওয়ার কথা৷ আদর্শ মানুষ হিসেবে ছাত্র ছাত্রীদের  গড়ে তুলতে সমাজগুরু রূপী শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ আরও দায়িত্ববান হলে বর্তমান সময়ের সমস্যার অনেকটাই সমাধান হতে পারে বলে আশা করা যায়৷

সবশেষে প্রশাসনকে বলব কোষাগার ভরানোর জন্য মদ সহ অন্যান্য নেশার উপকরণ এত সহজলভ্য করবেন না৷ যে আগুন জ্বলতে শুরু হয়েছে সেই আগুনে কোন্‌ কোন্‌ পরিবার যে ছারখার হয়ে যাবে কেউ বুঝতেও পারবে না৷ বরং চেষ্টা করা হোক ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চার উপ বিশেষ গুরুত্ব দিতে৷ সবকিছু নিয়ে রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি বন্ধ হোক৷ পরিবার, রাজনৈতিক দল, শিক্ষক সম্প্রদায়, প্রশাসন সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় সামাজিক এইসব সমস্যা দূর হতে পারে৷ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও বর্তমান সামাজিক সমস্যা দূর করতে সক্রীয় ভূমিকা নিতে  পারে৷ নাহলে গভীর সংকটে পড়ব সকলেই৷