সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রতি আণুগত্যের অভাব

লেখক
প্রবীর সরকার

এই প্রতিবেদনটি লিখতে বসে বার বার যাঁদের কথা স্মরণে আসছে তাঁরা হলেন রাশিয়ার প্রাক্তন দু’জন দেশ নেতা ও শাসক৷ তাঁদের নাম মাননীয় ক্রশ্চেভ ও বুলগ্যানিন৷ তাঁরা ভারতে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে  আসেন৷ গত শতাব্দীর ছয় দশকের প্রথম দিকে৷ তাঁরা বলেছিলেন দেশ স্বাধীন করতে আমাদের সন্তানদের হারিয়েছি৷ আজ বড়ো কষ্ট হয়৷ আমাদের নেতারা জন্মভূমিকে ইংরেজের সঙ্গে বোঝাপড়া করে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তি ভাগ করে শাসন ক্ষমতা কায়েম করেন৷ কংগ্রেস জওহরলাল নেতৃত্বে মুসলীমলীগ জিন্না সাহেবের নেতৃত্বে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান এর শাসন ক্ষমতা লাভ করে৷ এইভাবে দেশ ভাগের তেমন বিরোধিতা হয়েছিল বলে শোনাই যায় না৷ কমিউনিষ্ট দল তখন আন্দোলন করেনি কারণ তারা রাশিয়ার পক্ষে ছিল৷ বরং পঞ্চম বাহিনীর কাজ করতো বলে কংগ্রেস দেওয়া নামটি হলো পঞ্চম বাহিনী৷  বর্ত্তমানে যে কংগ্রেস (ইন্দিরার) দলছুট কংগ্রেস৷  কংগ্রেস কিন্তু বর্ত্তমানে সেই দলছুট কংগ্রেস নির্বাচনে সেই দলছুট কমিউনিষ্ট দলের সিপিএমের সঙ্গে আঁতাত করে এই রাজ্যে (পশ্চিম বাংলায়)৷

ঠিক তেমন সারা ভারতে বর্ত্তমানে যে দল ভেঙ্গে বিভিন্ন দল হয়েছে৷ দক্ষিণ ভারতে ডি.এম.কে ভেঙ্গেই এ.আই.এডিএম কে দল হয়৷ জনতা দল ভেঙ্গেই যেমন ভারতীয় জনতাদল, বিহারে লালুর দল৷ তাই দলাদলিটা আর গদীর লড়াইটাই হলো মূলতঃ ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্য৷ যখন যেমন তখন তেমনভাবে এটা চলে৷ জনসেবা বলতে যা বোঝায় সেটা করাটা এদের প্রধান উদ্দেশ্য নয়৷ এরা ঠিক করেই নিয়েছে আগে গদী লাভ তারপর যা করার করা হবে৷ তাই দলছুট হওয়া,দল ভাঙ্গাভাঙ্গী করে নোতুন দল গড়ার কাজে এরা ওস্তাদ৷ ধান্দাবাজিটাই হলো মূল উদ্দেশ্য কখনও৷ দেখা গেল না সব দল মিলিত হয়ে কিভাবে হত দরিদ্র দেশটির কল্যাণ করা যায় তার প্রচেষ্টা করতে৷ ধনীরা কিন্তু যে দলের যেমন শক্তি তাদের সেই হিসাবে, অর্থ সাহায্য করে৷ নিজেদের প্রভাব রাজনীতিতে বজায় রাখতে তাদের মতো ধুরন্ধর কেউ নেই৷

তাই এক একটা ধনী গোষ্ঠীর এম.এল.এ ও এমপি সারা ভারতের  কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে অবস্থান করছে৷ মূলতঃ তাঁরাই রাজনীতির খেলায় নিয়ন্ত্রক৷ তাই তো গরীব শোষন করাটাই হলো এদেশের শাসকদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য৷ প্রফেশনাল রাজনীতিতে বিভিন্ন দলীয় ক্যাডাররা এদেশে খুবই চতুর৷ দুর্ভাগ্যের কথা দেশ সেবকগণ আজ রাজনীতিতে আসেন না কারণ এদেশের রাজনীতিতে প্রচণ্ডভাবে দুর্নীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে৷ তাই ভারতকে বাঁচাতে সৎও নীতিবাদী তরুণ তরুণীদের এগিয়ে আসতেই হবে৷ ২০২০-২০২১ সালে ভারত ভয়ঙ্কর করোনা বাইরাসে আক্রান্ত একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়৷ এই সময় কোটি কোটি হত দরিদ্র ভারতীয়দের যে দশা সেটা অবর্ণনীয়৷ লক্ষ লক্ষ মানুষ এই বাইরাসে আক্রান্ত হয় কিন্তু প্রতিষেধক খুব কমই ভাগ্যবান পান৷ রুজি রোজগার একেবারে প্রায় বন্ধ হয়৷ দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলির যে কি দশা হয় সেটা ভুক্তভোগীরাই জানে৷ মানুষ ঘর বন্দী হয়৷ ভিনরাজ্যে কর্মরত শ্রমিকগণ চরম হেনস্থা ও দুর্দ্দশায় পড়েন৷ অকালে অনেকেই চরম সংকটে ও অবহেলায় মারা যান৷ কিন্তু ক্ষমতা দখলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নির্বাচনী খেলায় মাতেন৷ বর্ত্তমান কেন্দ্রের শাসক প্রধানগণ যথা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিম বাংলার রাজ্য নির্বাচনে করোনাবিধি প্রায় ভঙ্গ করে পশ্চিম বাংলায় প্রচারে এসেছিলেন৷ পশ্চিম বাংলাকে জয় করার জন্য সবকিছু করেছেন যেগুলি ছিল একধরণের দৃষ্টি কটু আচরণ৷ জনগণ তাই তাঁদের দলকে প্রত্যাখ্যান করেন আর পুরাতন বিরোধী দলগুলিকে একেবারেই বর্জন করেন৷ এটাতে বোঝা যায় এদেশে যারা  রাজনৈতিক দলে নেতা হিসাবে নিজেদের জাহির করেন তাঁরা কতোটা বোটারদের কাছে অপছন্দের ও তাদের আচরণ কতটা তাঁদের দৃষ্টিতে বিরক্তিকর৷ নির্বাচনে পর শাসকগণ যা আচরণ করছেন নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশেষ করে পশ্চিম বাংলা রাজ্য সরকারের সঙ্গে সেটা সংসদীয় গণতন্ত্র সুলভ বলে কেউ মনে করতেই পারছেন না৷ কেন্দ্র সরকারের আচরণটা যেন প্রতিহিংসামূলক বলেই মনে করেন৷ জনগণের রায়ই হল গণতন্ত্রের শেষ কথা তাকে মর্য্যাদা দেওয়াটাই হলো নির্বাচিত শাসকদের পবিত্র কর্ত্তব্য কর্ম৷ কিন্তু দেখে শুনে মনে হচ্ছে কেন্দ্রীয় শাসকদল কিছু যেন তোয়াক্কাই করেন না৷ তাই এদেশের জনগণ এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিনযাপন করছেন, যেখানে গণতন্ত্রের মূল আদর্শটা অগ্রাহ্য হচ্ছে শাসকদের আচরণের ও ব্যবহারের সৌজন্যের অভাবে৷

গণতন্ত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ সংবিধান মোতাবেক কাজ করবেন এটাই কাম্য৷ কিন্তু যতোদিন যাচ্ছে এদেশে যেন সেটারই অভাব বোটারগণ লক্ষ্য করছেন অসহায়ভাবে!