সংস্কৃতে ‘গঠন’ বলে কোন শব্দই নেই–আছে ‘ঘটন’৷ এই ‘ঘটন’ শব্দ বিকৃত হয়ে ‘গঠন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তাই শুদ্ধভাবে লিখতে গেলে ‘সংঘটন’ লেখাই সমীচীন৷
সংঘটন শব্দটি (সম্–ঘট্ + ল্যুট) আমরা এই ‘ঘট্’ ধাতু থেকে পাচ্ছি যাকে ভুল করে আমরা ‘সংগঠন’ বলি বা লিখে থাকি৷ আবার এই ‘সংগঠন’–কে ঠিক ভেবে আমরা ‘সংগঠিত’, ‘গঠনাত্মক’, ‘সুসংগঠিত’,‘সংগঠনী শক্তি’, ‘গঠনমূলক কার্য’ প্রভৃতি শব্দগুলি অবলীলাক্রমে ব্যবহার করে থাকি৷ বুঝি না গোড়াতেই ভুল৷ ‘সংগঠন’ শব্দটি ভুল৷ আসলে ঠিক শব্দটি হ’ল ‘সংঘটন’৷ ঘটন>ঘডন>ঘ৷ একটি কবিতাতেও দেখেছিলুম–
‘‘তার উপরে মুখের গঠন অনেকটা ঠিক প্যাঁচার মতন৷’’
‘ঘটন’ শব্দের কথ্য বাংলা রূপ ‘গড়ন’৷ তদ্ভব শব্দ হিসেবে বাংলায় ‘গড়ন’ ব্যবহার ভুল মনে করি না কিন্তু ‘গড়ন’কে মার্জিত রূপ দিতে গিয়ে ‘গঠন’ ব্যবহার মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়৷
‘সৃজন’ শব্দটি ভুল, হবে ‘সর্জন’
তোমরা ভালভাবেই জান ‘সৃজন’ শব্দটি ভুল৷ ‘সৃজ’ ধাতু ল্যুট করে পাই ‘সর্জন’–‘সৃজন’ নয়৷ কারও মধ্যে সৃজনী প্রতিভা থাকে না–থাকে সর্জনী–প্রতিভা৷ আমরা ‘উৎসর্জন’, ‘বিসর্জন’–এর ‘সর্জন’ শব্দটি ঠিকই ব্যবহার করি৷ কেবল শব্দটি উপসর্গ রহিত অবস্থায় থাকলে গোলমাল করে থাকি–বলে ফেলি ‘সৃজন’, ‘সৃজনী’৷ এবার থেকে ‘সৃজন’ শব্দটি ব্যবহার কোরো না৷
‘ছাত্রী’ শব্দটি ভুল, হবে ‘ছাত্রা’
‘ছদ্’ ধাতুর অর্থ আচ্ছাদন দেওয়া৷ যে বস্তু আচ্ছাদন দেয় তা–ই ‘ছত্র’৷ গুরুর ছত্রছায়ায় যে আশ্রিত তাকে ছত্র + অণ করে ‘ছাত্র’ বলা হয়৷ ‘ছাত্র’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গে দু’টি রূপ রয়েছে–‘ছাত্রী’ ও ‘ছাত্রা’৷ ‘ছাত্রী’ মানে ‘ছাত্রের পত্নী’৷ তিনি নিজে পড়ুয়া হতেও পারেন, নাও হতে পারেন৷ ‘ছাত্রা’ মানে যিনি নিজে পড়ুয়া কিন্তু তিনি কারও স্ত্রী হতেও পারেন, নাও পারেন৷ (সূত্র ঃ ‘প্রভাতরঞ্জনের ব্যাকরণ বিজ্ঞান’)