শিক্ষাব্যবস্থায় ও শিক্ষা গ্রহণে যদি ত্রুটি থাকে তাহলে সে শিক্ষায় যাইহোক না কেন প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ তৈরী হতে পারে না বা হয়না৷ কথায় আছে মানব জমিন রহিলো পতিত আবাদ করলে ফলতো সোনা’’৷ তারই শিক্ষা বিশেষ করে সুশিক্ষাই হলো সেই সুআবাদ, প্রতিটি মানুষের জীবনে ৷ সেটার দারুণ অভাবের কারণে প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ গড়ে ওঠে না৷ সেই কারণে শুধু এদেশে নয় সারা পৃথিবীতে প্রকৃত সুশিক্ষিত মানুষের অভাবে প্রকৃত রাষ্ট্রনায়ক, দেশসেবক ও সুনাগরিকের এমন কি ধর্মমতের জগতে দেখা দিয়েছে দারুণ সংকট৷ শুধু লোভ, হিংসা, ঘৃণা আর অন্ধ কুসংস্কার, অহংকারেই সুন্দর এই পৃথিবীটা শ্মশানে পরিণত হয়ে চলেছে৷
এই কথাগুলি আনন্দমার্গের মহান প্রবক্তা ও প্রাউট দর্শনের স্রষ্টা শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার (যিনি মহাসম্ভূতি শ্রীশ্রীআনন্দমূত্তিজী নামে খ্যাত) উপলব্ধি করেছিলেন৷ এই বিশ্ববরেণ্য প্রতিভার অধিকারী সমগ্র বিশ্বের সার্বিক কল্যাণে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী Prince of creation) মানুষের প্রকৃত প্রয়োজন বুঝিতে পারেন৷ তাই তাঁর প্রধান অবদান হলো এই পৃথিবীতে মানব কল্যাণে মহান আনন্দমার্গ দর্শন ও সার্বিক সমাজকল্যাণমূলক আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের প্রতিষ্ঠা করা৷ তিনি তাঁর সমাজ সেবামূলক কর্মে শিক্ষা, ত্রাণ ও জনকল্যাণ মূলক কাজকে বিশেষ গুরুত্ব দেন৷ এই কাজে তিনি সমগ্র পৃথিবীতে সুশিক্ষার প্রবর্ত্তনে ত্রিভাষা সূত্রকে গ্রহণ করেন ও প্রতিটি মানুষ যে আধ্যাত্মিক জীব (Spiritual being) সেটার উপর বেশী গুরুত্ব দেন৷ প্রত্যেক মানুষের দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের উপর সমান গুরুত্ব দিয়েই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেন৷ তিনি প্রকৃত মানুষ তৈরীর পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেন৷ তাই তাঁর শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে সমাদৃত৷
মনে রাখতে হবে মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য কিন্তু আপেক্ষিত জগতের সে বৈচিত্র্য তাকে স্বীকার করতেই হবে৷ এই বৈচিত্র্যকে নিয়ে পৃথিবীতে যে পরস্পরের মধ্যে লাঠালাঠি কাটাকাটি চলছে তাকে কখনোই মেনে নেওয়া যায় না, আজকের এই স্বার্র্থন্বেষী দেশ নেতা ও অন্ধধর্মমতালম্বীদে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকে৷ সংসৃকতে বলা হয়েছে ‘‘সা বিদ্যা যা বিমুক্তয়ে৷’’ শিক্ষা লাভ করার অর্থ এই নয় যে কেবল স্থূল ভোগ লালসা চরিতার্থ করতে নিছক অর্থকরী শিক্ষা লাভ করা৷ নিছক ভোগবাদী ভাবনাই হলো প্রকৃত শিক্ষালাভের পরিপন্থি৷ মানবিকমূল্যবোধকে প্রত্যেক শিক্ষিতব্যষ্টিকে অবশ্যই জাগ্রত করতে হবে৷ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই৷ একথা যেন মানুষ ভুলে না যায়৷ তাই সেই সুশিক্ষা লাভই প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া৷
প্রকৃত শিক্ষিত ব্যষ্টির অন্তর হবে আকাশের মতো বিরাট৷ সেই মনে যেন সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত মানসিকতার স্থান না থাকে৷ শিক্ষা ব্যবস্থায় সুপ্রাচীনকাল থেকে এমন এক সম্প্রদায়ের প্রভাব সারা পৃথিবীতে ছিল যাঁদের সংকীর্ণতার দরুণ সকল শিশু (পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে) শিক্ষালাভের সুযোগ পেতো না৷ এমনকি মহিলারা তো নয়ই৷ উচ্চবর্ণের মধ্যে শিক্ষাসীমাবদ্ধ ছিল৷ রেনেসাঁর (নবজাগরণের) ফলে ধীরে ধীরে এই কুসংস্কার উঠে যেতে থাকে৷ আজ শিক্ষাব্যবস্থার সুফল প্রায় প্রতিটি শিশু নরনারী নির্বিশেষে লাভ করার সুযোগ পাচ্ছে৷ প্রাচীন ভারতবর্ষে কিন্তু বলা হতো কন্যা শিক্ষনীয়া চ পালনীয়া পুত্রবৎ৷ বর্ত্তমানে তাই হয়ে চলেছে৷
EDUCATION - এর বাংলা হলো শিক্ষা আবার শিক্ষাদান হয়৷ এখন প্রশ্ণ শিক্ষা দেওয়া ও শিক্ষা নেওয়ার মধ্যে ‘সু’ ও ‘কু’ বর্ত্তমান৷ যে শিক্ষা মানুষকে কল্যাণের ও সেবার এমনকি বৃহৎ ভাবনায় ভাবিত মানুষ করে সেই শিক্ষা হলো সুশিক্ষা৷ আর তা যদি না হয় সে শিক্ষাই হলো কুশিক্ষা৷ দ্বিতীয়টার সংখ্যাই বেশী কারণ শিক্ষা ক্ষেত্রে অন্ধ কুসংস্কার এর প্রভাবটাই বেশী৷ তাই মহান দার্শনিক ও জগৎ গুরু মহাসম্ভূতি শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী যিনি শ্রদ্ধেয় শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার এই EDUCATION শব্দের যে ব্যাখা দিয়েছেন তা হলো সম্পূর্ণ একেবারে নোতুন৷
E = Enlargement of mind (মনের ব্যাপকতা
D = ( DESMEP) এর অর্থ হলো---
D = Discipline (শৃঙ্খলা
E = Etiquette (শিষ্টাচার)
S = Smartness (প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব)
M =Morality (নীতিবোধ)
E =English (ইংরাজি)
P =Pronunciation ( সঠিক উচ্চারণ)
U = Universal out look (বিশ্বৈকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি)
C = Character (চরিত্র নির্র্মণ)
A= Active Habit (কর্মনিষ্ঠা)
T = Trust worthiness (বিশ্বাসযোগ্যতা)
I = Idiation of great (supreme) (পরমসত্তার ভাবনা)
O = Omniscients grace (সর্বজ্ঞের কৃপা)
N = Nice temperment (সুন্দর মেজাজ)
উপরিলিখিত শব্দটি প্রতিটি অক্ষরের যে মানে দিয়েছেন সেগুলিকে অক্ষরে অক্ষরে মান্যতা দেওয়া ও পালন করার মধ্যে রয়ে গেছে তাঁর শিক্ষাব্যবস্থার পদ্ধতি৷ এ কাজ সদ্গুরু ছাড়া কারোর পক্ষে সম্ভব নয়৷
আজ পৃথিবীতে যদি কোনো কিছুর বেশী অভাব থাকে তা হলো সার্থক সুশিক্ষায় শিক্ষিত ব্যষ্টির৷ আর এরই অভাবে সারা পৃথিবীর সুন্দর সৃষ্টিটাই আজ লোভী চতুর, স্বার্থান্ধ নেতানেত্রীদের লালসার আগুনে ধবংস হয়ে যাচ্ছে!
সমগ্র জগতের সার্বিক কল্যাণ সাধনের সংকল্প নিয়ে মহাসম্ভূতি শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী যিনি মহান দার্শনিক ও শিক্ষাগুরু শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার নামেও সমধিক পরিচিত৷ যিনি এই মর্ত্যভূমে আবির্ভূত হয়ে সর্বাঙ্গ সুন্দর বিশ্বরচনার পথ দেখিয়েছেন৷ বিশ্ববাসীকে আজ সে পথ অনুসরণ করে জগৎকে সার্বিক কল্যাণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে নোতুন সমাজ তথা নোতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে ৷
- Log in to post comments