শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী প্রবর্ত্তিত শিক্ষাপদ্ধতি বিজ্ঞান সম্মত ও সার্থক শিক্ষা-ব্যবস্থার চাবিকাঠি

লেখক
প্রভাত খাঁ

শিক্ষাব্যবস্থায়  ও শিক্ষা গ্রহণে  যদি  ত্রুটি থাকে  তাহলে সে শিক্ষায় যাইহোক না কেন প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ তৈরী হতে পারে না বা হয়না৷  কথায়  আছে মানব জমিন রহিলো পতিত আবাদ করলে  ফলতো  সোনা’’৷ তারই শিক্ষা বিশেষ  করে  সুশিক্ষাই  হলো সেই সুআবাদ, প্রতিটি মানুষের  জীবনে ৷  সেটার দারুণ অভাবের কারণে  প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ গড়ে  ওঠে না৷  সেই কারণে  শুধু  এদেশে  নয়  সারা পৃথিবীতে  প্রকৃত সুশিক্ষিত  মানুষের  অভাবে প্রকৃত রাষ্ট্রনায়ক, দেশসেবক  ও সুনাগরিকের  এমন কি ধর্মমতের জগতে দেখা দিয়েছে  দারুণ  সংকট৷  শুধু লোভ, হিংসা, ঘৃণা আর অন্ধ কুসংস্কার, অহংকারেই  সুন্দর এই পৃথিবীটা শ্মশানে পরিণত হয়ে চলেছে৷

এই কথাগুলি আনন্দমার্গের  মহান প্রবক্তা ও প্রাউট দর্শনের স্রষ্টা শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার   (যিনি মহাসম্ভূতি শ্রীশ্রীআনন্দমূত্তিজী নামে খ্যাত) উপলব্ধি করেছিলেন৷ এই বিশ্ববরেণ্য প্রতিভার অধিকারী সমগ্র বিশ্বের সার্বিক কল্যাণে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী Prince of creation) মানুষের প্রকৃত প্রয়োজন বুঝিতে পারেন৷ তাই তাঁর প্রধান  অবদান হলো এই পৃথিবীতে মানব কল্যাণে মহান  আনন্দমার্গ দর্শন  ও সার্বিক  সমাজকল্যাণমূলক  আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের প্রতিষ্ঠা করা৷ তিনি তাঁর সমাজ সেবামূলক কর্মে শিক্ষা, ত্রাণ ও জনকল্যাণ মূলক কাজকে  বিশেষ  গুরুত্ব দেন৷ এই কাজে তিনি  সমগ্র পৃথিবীতে  সুশিক্ষার  প্রবর্ত্তনে  ত্রিভাষা সূত্রকে  গ্রহণ করেন  ও প্রতিটি মানুষ যে আধ্যাত্মিক জীব (Spiritual being) সেটার উপর  বেশী গুরুত্ব দেন৷ প্রত্যেক  মানুষের  দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক  উৎকর্ষ সাধনের  উপর সমান গুরুত্ব দিয়েই  শিক্ষা ব্যবস্থা চালু  করেন৷ তিনি প্রকৃত মানুষ তৈরীর পরিকল্পনাকে  বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেন৷ তাই তাঁর শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে  বিশ্বের অধিকাংশ  দেশে সমাদৃত৷

মনে রাখতে হবে মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য কিন্তু আপেক্ষিত জগতের সে বৈচিত্র্য তাকে  স্বীকার করতেই  হবে৷  এই বৈচিত্র্যকে  নিয়ে  পৃথিবীতে  যে পরস্পরের মধ্যে লাঠালাঠি কাটাকাটি  চলছে  তাকে কখনোই মেনে  নেওয়া  যায় না,  আজকের এই স্বার্র্থন্বেষী দেশ নেতা ও অন্ধধর্মমতালম্বীদে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকে৷  সংসৃকতে বলা হয়েছে ‘‘সা বিদ্যা যা বিমুক্তয়ে৷’’  শিক্ষা লাভ করার অর্থ এই নয় যে কেবল স্থূল ভোগ লালসা চরিতার্থ করতে নিছক অর্থকরী শিক্ষা লাভ করা৷ নিছক ভোগবাদী ভাবনাই হলো প্রকৃত শিক্ষালাভের  পরিপন্থি৷ মানবিকমূল্যবোধকে  প্রত্যেক শিক্ষিতব্যষ্টিকে অবশ্যই  জাগ্রত করতে হবে৷  সবার উপরে  মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই৷ একথা যেন মানুষ  ভুলে না যায়৷ তাই  সেই সুশিক্ষা লাভই  প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া৷

প্রকৃত শিক্ষিত ব্যষ্টির অন্তর হবে আকাশের  মতো বিরাট৷ সেই মনে যেন  সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত মানসিকতার স্থান না থাকে৷ শিক্ষা ব্যবস্থায় সুপ্রাচীনকাল থেকে এমন এক  সম্প্রদায়ের  প্রভাব সারা পৃথিবীতে  ছিল যাঁদের  সংকীর্ণতার  দরুণ সকল শিশু (পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে) শিক্ষালাভের  সুযোগ পেতো না৷  এমনকি মহিলারা তো নয়ই৷ উচ্চবর্ণের মধ্যে শিক্ষাসীমাবদ্ধ ছিল৷ রেনেসাঁর  (নবজাগরণের) ফলে ধীরে ধীরে  এই কুসংস্কার উঠে যেতে থাকে৷  আজ শিক্ষাব্যবস্থার  সুফল  প্রায় প্রতিটি  শিশু নরনারী নির্বিশেষে লাভ করার সুযোগ পাচ্ছে৷  প্রাচীন  ভারতবর্ষে  কিন্তু বলা হতো  কন্যা শিক্ষনীয়া চ পালনীয়া পুত্রবৎ৷ বর্ত্তমানে তাই হয়ে চলেছে৷

EDUCATION  - এর বাংলা হলো শিক্ষা আবার  শিক্ষাদান হয়৷ এখন প্রশ্ণ শিক্ষা দেওয়া ও শিক্ষা নেওয়ার  মধ্যে ‘সু’ ও ‘কু’ বর্ত্তমান৷ যে শিক্ষা মানুষকে  কল্যাণের  ও সেবার  এমনকি বৃহৎ  ভাবনায়  ভাবিত  মানুষ  করে সেই শিক্ষা হলো  সুশিক্ষা৷  আর তা যদি  না হয় সে শিক্ষাই  হলো  কুশিক্ষা৷  দ্বিতীয়টার  সংখ্যাই বেশী কারণ  শিক্ষা ক্ষেত্রে  অন্ধ কুসংস্কার  এর  প্রভাবটাই বেশী৷ তাই মহান দার্শনিক  ও জগৎ গুরু  মহাসম্ভূতি  শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী যিনি শ্রদ্ধেয়                    শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার  এই EDUCATION  শব্দের  যে ব্যাখা দিয়েছেন  তা হলো সম্পূর্ণ একেবারে  নোতুন৷

E = Enlargement of mind  (মনের ব্যাপকতা

D = ( DESMEP)  এর অর্থ হলো---

    D  =  Discipline (শৃঙ্খলা

    E   = Etiquette (শিষ্টাচার)

    S  = Smartness (প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব)

    M =Morality (নীতিবোধ)

    E  =English (ইংরাজি)

    P =Pronunciation ( সঠিক উচ্চারণ)

U = Universal out look (বিশ্বৈকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি)

C = Character  (চরিত্র নির্র্মণ)

A= Active Habit (কর্মনিষ্ঠা)

T =  Trust worthiness (বিশ্বাসযোগ্যতা)

I = Idiation of great (supreme) (পরমসত্তার ভাবনা)

O = Omniscients grace  (সর্বজ্ঞের কৃপা)

N = Nice temperment (সুন্দর মেজাজ)

উপরিলিখিত শব্দটি প্রতিটি অক্ষরের যে মানে  দিয়েছেন  সেগুলিকে অক্ষরে অক্ষরে  মান্যতা দেওয়া ও পালন করার মধ্যে রয়ে  গেছে  তাঁর  শিক্ষাব্যবস্থার  পদ্ধতি৷  এ কাজ  সদ্গুরু ছাড়া কারোর পক্ষে সম্ভব নয়৷

আজ পৃথিবীতে যদি কোনো কিছুর বেশী অভাব থাকে  তা হলো সার্থক  সুশিক্ষায় শিক্ষিত  ব্যষ্টির৷ আর  এরই অভাবে সারা পৃথিবীর সুন্দর  সৃষ্টিটাই  আজ লোভী চতুর, স্বার্থান্ধ নেতানেত্রীদের লালসার  আগুনে ধবংস হয়ে যাচ্ছে!

সমগ্র জগতের সার্বিক কল্যাণ সাধনের সংকল্প নিয়ে মহাসম্ভূতি শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী যিনি মহান দার্শনিক ও শিক্ষাগুরু শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার নামেও সমধিক পরিচিত৷ যিনি এই মর্ত্যভূমে আবির্ভূত হয়ে  সর্বাঙ্গ সুন্দর বিশ্বরচনার পথ দেখিয়েছেন৷ বিশ্ববাসীকে আজ সে পথ অনুসরণ করে  জগৎকে সার্বিক  কল্যাণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে নোতুন সমাজ তথা নোতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে ৷