ত্রিপুরার প্রকৃত ইতিহাস জানুন

লেখক
এইচ.এন.মাহাত

ত্রিপুরা রাজ্যটি মূলতঃ সুবেবাঙলা বা গৌড়বঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ ১৮৭২ সালের ব্রিটিশ ভারতে বাঙলার সীমানা ছিলো উত্তরে নেপাল, ভুটান ও সিকিম হিমালয়ের পাদদেশ, দক্ষিণে ছিলো মাদ্রাস প্রদেশ ও বঙ্গোপসাগর, পূর্বে ব্রহ্মদেশের টেকনাফ নদী ও চীন সীমান্ত আর পশ্চিমে যুক্তপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ৷ অর্থাৎ পরেশনাথের পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগর, মেঘাশিনি পাহাড় থেকে হিমালয় পর্যন্ত বিস্তৃত৷ এই চৌহদ্দির মধ্যে আজকের ত্রিপুরা নামক রাজ্যটির অবস্থান৷ অতীতে নাম ছিলো চাকলা রোশনাবাদ, পরবর্তীতে একে শ্রীভূম বলে অভিহিত করা হতো৷ ব্রিটিশ আমলে রাজ্যটি সমতল ও  পার্বব্য ত্রিপুরায় ভাগ ছিলো৷ রাজ্যটি বিস্তারিত ছিলো পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম  নোয়াখালী (ভুলুয়া), ত্রিপুরা (কুমিল্লা), শ্রীহট্ট জেলার মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, পার্বত্য ত্রিপুরা নিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যটি৷ রাজ্যটিতে তখন থেকে ভূমিপুত্র বাঙালীরা সংখ্যা গরিষ্ঠ ছিলো এখনো আছে৷ অতীতে ত্রিপুরা রাজ্যে কোন মঙ্গোলিয়ান জনজাতির বসতি ছিল না৷ এই মঙ্গোলিয়ানরা ৫৫০ বছর আগে ব্রহ্মদেশ থেকে খাদ্যের অভাবে বঙ্গদেশে এসে ছিলো ও পার্বত্য ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়েছিল৷ বাঙালীরা এই জনজাতিদের অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা করেছিল সাথে সাথে তাদেরকে শিক্ষা, আচার-আচরণ, পোশাক পরিচ্ছদ সকল দিক থেকে উন্নত করতে সচেষ্ট হয়েছিলো৷ জনজাতিরা বাঙালীদের অতিরিক্ত সাহায্যের সুযোগ নিয়ে হিন্দু রাজাকে পরাজিত করে রাজ্যটিকে দখল করে নেয়৷

ত্রিপুরার জনজাতি রাজারা বাঙালী সমৃদ্ধ ভাষা সংস্কৃতিকে সম্মান প্রদর্শন করে রাজ ভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠা দিয়ে নিজেদের গর্বিত মনে করেছিলো৷ রাজনীতিবিদরা বলেন কমিউনিষ্টরা ত্রিপুরায় আসবার আগে বাঙালী ও জনজাতির মধ্যে মিলন ভূমি ছিলো ত্রিপুরা৷ আমি আমার নিজের পিসিকে দেখেছি বিয়ে হয়েছে স্থানীয় জনজাতি পরিবারের সঙ্গে সম্মন্ধ করে৷ তাদের সন্তানরা উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠাত হয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে আছে৷ তৎকালীন আমলে এমন অনেক পরিবার পাওয়া যাবে৷

ত্রিপুরায় সিপিএম নামক এক হিংস্র, মানবতা বিরোধী, বিষবৃক্ষ স্বরূপ পার্টিকে রোপন করেছিলেন বাঙালী বিদ্বেষী নৃপেন চক্রবর্ত্তী৷ তিনি জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরেছেন শুধু জনজাতির ৩০ শতাংশ ভোটকে সিপিএমের পক্ষে আদায় করার জন্য৷ তিনি মূখ্যমন্ত্রী হয়েই জমি ফেরত আইন, এডিসি থেকে শুরু করে একাধিক বাঙালী বিদ্বেষী আইন করেছিলো৷ জনজাতিদের উগ্রপন্থী তৈরী করে বাঙালী গণহত্যা সাধিত করেছিলো৷ এপ্রসঙ্গে তাঁর একটা বিখ্যাত উক্তি হোল, উপজাতির ঘরে  জন্ম নিলে আমিও উগ্রপন্থী হতাম৷’ সিপিএম ও টিএনভির নেতা বাঙালী হত্যার নায়ক বিজয় রাঙ্খেলের নেতৃত্বে ১৯৮০-র ৮ই জুনে আঘাত হানে বাঙালী জাতির উপর৷ মান্দাই থেকেই বাঙালী একতরফা গণহত্যার একতরফা যে কাজটি শুরু করেছিলেন সমগ্র ত্রিপুরাতে তা ছড়িয়ে পরে৷ ত্রিপুরায় সেই সময়ের সংবাদ জগতের ভাষ্য অনুযায়ী ৬ হাজারেও অধিক বাঙালীর  মৃত্যু হয়েছিলো৷ লক্ষ্যাধিক বাঙালী গৃহহীন হয়েছিলো৷ কত বাঙালী মায়ের সন্মান ভুলুন্ঠিত  হয়েছে তার কোন হিসাব কোন সরকারের খাতায় নেই৷ মাতৃহারা, পিতৃহারা, সন্তানরা বাঙালী ত্রিপুরার এপ্রান্তে ওপ্রান্তে আজো ঘুরে চলেছে একটি স্থায়ী ঠিকানার জন্য৷ সিপিএম সরকার সেই গৃহহীন বাঙালীকে কোন প্রকারের আর্থিক ও আইনের সাহায্য করেন নি, বরং নৃপেনবাবু কোলকাতা বিমানবন্দরে  সাংবাদিকদের বলেছিলেন বাঙালী গণহত্যার  কোন তদন্ত ও আইনের পদক্ষেপ নেবেন না৷ অদৃষ্টের কি নিষ্ঠুর পরিহাস চলতি এডিসির নির্বাচনে সিপিএম একটিও আসন পায়নি৷ সিপিএমের জনজাতির প্রতি মোহভঙ্গ হওয়ায় এবার বাঙালীদের ভোট টানতে  জনজাতি বিদ্বেষী বক্তব্য রেখে বাঙালী তোষণ নীতির মাধ্যমে ছলোনার  আশ্রয় নিচ্ছে৷

সাবধান! বাঙালী সাবধান! আজ আবার জনজাতিদের অধুনা গজিয়ে উঠা সংগঠন তিপ্রামোথার নেতৃত্ব চাইছে ইতিহাস বিকৃতি করে ত্রিপুরাকে বাঙালী মুক্ত জনজাতি রাজ্য বানাতে৷ গত ৪০ বছর ধরে এডিসি তৈরী হওয়ার পর থেকে বাঙালীর করের টাকায় ও কেন্দ্রীয় কোষাগার থেকে কোটি কোটি  টাকা খরচ হয়েছে অথচ প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো খাদ্য, পানীয় ,শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থান কোন কিছুই তৈরী হয়নি৷ জবাব দেবেন কী  জনজাতির নেতৃত্ব? জনজাতির নেতৃত্বের কাছে রাজনৈতিক স্বার্থ ছাড়া কোনো অর্থনৈতিক সমাধান নেই৷ তাই কোটি কোটি টাকা তচনচ করে জনজাতি নেতারা পকেট ভর্তি করছে৷ সাধারণের কোন কল্যাণই হয়নি৷

ত্রিপুরাকে সার্বিকভাবে আর্থিক উন্নত করতে চাই অর্থনৈতিক গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো৷ সেই পরিকাঠামো আছে মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের সামাজিক অর্থনৈতিক  দর্শন ‘প্রাউট’ তত্ত্বে৷ ত্রিপুরার সার্বিক ভাবে কর্মসংস্থান ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কয়েক দশক ধরে আন্দোলন করে আসছে একমাত্র ‘আমরা বাঙালী’’দল ৷ আসুন বাঙালী জাতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বাঁচাতে ও জনজাতির  মধ্যে বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী কংগ্রেস, সিপিএম,বিজেপি ও তৃণমূল দলের ছত্রছায়ায় আর নয়৷ আর নয় বাঙালী বঞ্চনা৷ আর সইবো না অত্যাচার৷ এখন থেকেই আওয়াজ উঠুক ২০২৩শে ‘‘আমরা বাঙালী’’র সরকার৷