তা যাই হোক আসল কথায় আসা যাক৷ তখন আমাদের শহরে বেগুনের দর এক পয়সা পসুরী – দু’আনায় মণ অর্থাৎ এক পয়সায় পাঁচ সের৷ মণ্ডামোহন মুখুজ্জে জনৈক কুজরাকে ( বিহারের যারা তরকারী বেচে তাদের বলা হয় কুজরা আর যারা তরকারী উৎপাদন করে তাদের বলা হয় কোইরী৷ কোইরীরা ধর্মে হিন্দু আর কুজরারা মুসলমান৷ আমাদের ওখানকার কুজরাদের মাতৃভাষা অঙ্গিকা৷ তাদের নাম হত মহারাজ কুজরা, শনিচারা কুজরা, এতবারী কুজরা ইত্যাদি) এক পয়সার বেগুন দিতে বলল, কুজরা পাঁচ সের বেগুন দিয়ে আট–দশটা বেগুন ফাউ দিয়ে দিল৷ মণ্ডামোহন বললে, – ‘তোর ফাউয়ের বেগুনেই আমার চলবে৷ বেগুন কিনতে আর হবে না৷ আমার পয়সাটা ফেরৎ দে৷’
বলা বাহুল্য মাত্র, মোহগ্রস্ত লোক অন্যের ঘৃণার পাত্র হয়৷ নিজেও অন্যকে ভয় পায়৷ মণ্ডামোহন তাই হয়ে উঠেছিল সবাইকার ঘৃণার পাত্র৷
* * * *
সেবার পাড়ায় জাঁক–জমক করে কালীপূজো হচ্ছিল৷ পাড়ার ছেলেরা থিয়েটারের রিহারর্স্যাল দিচ্ছে৷ কারও কারও পকেট খরচার পয়সায় টান পড়েছে৷ আগে বাড়ীর বাজার খরচার পয়সা থেকেই কমিশন টানত৷ কিন্তু এখন খরচা বেশী হয়ে যাচ্ছে দেখে বাপ নিজেই বাজার করা শুরু করে দিয়েছে৷ তাই কমিশনের পয়সা কম হয়ে যাওয়ায় কয়েকটি অতি–উৎসাহী ছেলে চাঁদার খাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল৷ সবাই যে যেমন পারল চাঁদা দিলে৷ মণ্ডামোহনের কাছে চাঁদা চাওয়া মাত্রই সে চোখ কপালে তুলে বললে – ‘‘ওরে বাবা কালী সে তো রণবাই চণ্ডী৷ আমরা পরম বৈষ্ণব৷ কালীপূজো আমাদের করতে নেই, পূর্ব–পুরুষের মানা আছে৷’’
ছেলেরা ভাবলে – সত্যিই বুঝি মানা আছে৷ তাই তারা ফিরে গেল৷ পরের দিন পাড়াশুদ্ধ লোককে বসিয়ে ভাল করে কালীর মহাপ্রসাদ দেবার ব্যবস্থা করা হল৷ দেখা গেল প্রথম পঙ্ক্তিতে প্রথম মানুষ যিনি পাত পেতে বসেছেন তিনি শ্রীযুক্ত বাবু মণ্ডামোহন মুখুজ্জে৷ বন্ধুরা বললে – ‘‘হ্যাঁরে মণ্ডামোহন, তুই যে বললি তোকে কালীপূজো করতে নেই৷’’
মণ্ডামোহন বললে – ‘আমি তো বলেছি পূজো করতে নেই কিন্তু পেসাদ খেতে নেই এমন কথা তো বলি নি৷ মায়ের পেসাদ না খেয়ে হাতী–ঘোড়া দূরের কথা, কীট–প্রতঙ্গও কি একদিনও বাঁচতে পারে? আমি ও তোমরা সবাই অর্থাৎ আমরা সবাই বেঁচে আছি কি করে দু’বেলা মায়ের পেসাদ পাচ্ছি বলেই না৷ এখন তোমরাই বল আমি এখানে পাত পেতে কী অন্যায়টা করলুম৷ এ যেন সেই ঃ
‘‘আমি বেহায়া পেতেছি পাত৷
কোন্ বেহায়া না দেয় ভাত’’৷৷