পরিচয় ঃ যদিও ভাবারূঢ়ার্থে গন্ধপত্র, গন্ধপত্রী, গন্ধপত্রা তিনই এক........তিনেরই মানে যার পাতায় গন্ধ আছে, কিন্তু যোগারূঢ়ার্থে তারা পৃথক৷ মেথী (মধুগন্ধী বা মেথিকা) বা যোয়ান (যমানী বা যমানিকা যা থেকে হিন্দীতে জমাইন) সুগন্ধী পত্রের জন্যে প্রাচীনকাল থেকে আদৃত৷ পাকস্থলীতে যম অর্থাৎ সংযম অর্থাৎ control আনে বলেই একে যমানী বা যমানিকা বলা হয়৷ যমানি>যঞাঁই>যোয়ান৷ হিন্দীতে ‘জ’ দিয়ে লিখতে হবে৷ বাংলায় লিখতে হবে ‘য’–দিয়ে৷ অনেকে বলেন নাম যমানী বা যমানিকা কিনা, তাই যমকে দূরে ঠেকিয়ে রাখে৷ যোয়ান একটি শীতের রবি ফসল৷ এর জন্যে আলাদা করে জমি নির্দিষ্ট করে রাখা যেতে পারে৷ আবার আলুর খেতে রন্ধনী (রাঁধুনী), কালো জিরে (হিন্দীতে মুংগরেলা) ও মেথী, মৌরী, ধনের সঙ্গেও লাগানো যেতে পারে৷
অজীর্ণ, বদহজম ও অন্যান্য উদররোগে যোয়ান
মেথী ও যোয়ান দুইয়ের গন্ধ রোগবিনাশকা৷ সম্ভবতঃ এই জন্যে প্রাচীন কাল থেকে পঞ্চস্ফোটন (পাঁচফোরন) এর মধ্যে মেথীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ আর যোয়ানের গুণের কথা তো সর্ব দেশেই বিদিত৷ যোয়ানের আরক বদহজমের উন্নত মানের ঔষধ৷ ভালভাবে ভাস্কর লবণ তৈরী করতে গেলে কৃষ্ণ লবণ (ৰীট নুন) ও অর্ধভর্জিত (অর্ধেক ভাজা) যমানী অবশ্যই ব্যবহার করতে হয়৷ কাশীর বিখ্যাত চুরণ–পাচকেও কৃষ্ণলবণের সঙ্গে যমানীর (যোয়ান) ব্যবহার ছিল, আজও হয়তো আছে৷ এই লবণ ভাস্কর অনেক নোতুনতর ঔষধ আবিষ্কৃত হবার পরে আজও ঔষধ রূপে আদৃত৷ অন্য দিকে উদরব্যাধির ঔষধ রূপে পরিচিত ‘অমৃতধারাতে’ও যোয়ানের আরক ব্যবহার করতে হয়৷ ভোজনের পর যাঁরা বদহজমে ভোগেন অথবা ভোজনের পর যাঁদের অম্লোদ্গার হয়, অল্প চোঁয়া ঢ়েকুর ওঠে, তাঁরা ভোজনের পর এক চামচ যোয়ানের সঙ্গে এক টিপ সৈন্ধব লবণ মুখে দিয়ে চিবিয়ে খেলে বেশ ভাল ফল পেতে পারেন৷ যাঁরা পান খান তাঁরা পানের সঙ্গে ওই জিনিস (যোয়ান) মিশিয়ে খেলে সুফল পাবেন৷ যাঁদের পুরাতন বদহজমের ব্যাধি, তাঁরা এক চামচ যোয়ানের সঙ্গে কয়েকটি টুকরো গড়ি নারকোল (খোলা ভাঙ্গা, কিন্তু নারকোল গোটা), কিম্বা অল্প শুকনো নারকোল (সাধারণ নারকোল, শাঁস্টা শুকিয়ে নেওয়া) মিশিয়ে খেলে সুফল পাবেন৷ ঙ্ম তাহলে দেখা গেল ৰ যোয়ানের অনেক গুণ৷
যোয়ানের ও মেথী পাতার গুণ ঃ বলা হয় যোয়ানের যা গুণ যোয়ানের পাতায় রয়েছে তার অর্দ্ধেক গুণ৷ ঠিক এই কথাটি বলা যায় মৌরী পাতা, মেথী পাতা, দেশী এলাচ পাতার সম্বন্ধেও৷ মূলোয় যা গুণ, পাতায় ততটা গুণ না থাকলেও অর্দ্ধেকের মত আছে৷
ঙ্ম ভোরে খালি পেটে মেথী–ভেজানো জল পান করলে মধুমেহ রোগী সুফল পাবেন৷ এই জল অল্প পরিমাণে মূত্র–কৃচ্ছতাতেও উপকারী৷ মেথী–চূর্ণও ডায়াবেটিস রোগে কার্যকর৷ মেথী–শাকের ব্যাঞ্জন বা মেথী–শাকের ৰড়া শুধু উপাদেয়ই নয়, ঔষধওৰ৷
গাঁদাল পাতা–Paederia foetida Linn. Ðঃ
পরিচয় ঃ গাঁদাল পাতার সংস্কৃত নাম খরগন্ধা/খরগন্ধিকা/খরগন্ধনিভা৷ তিনটে শব্দেরই অর্থ গাঁদাল পাতা৷ খর মানে ....... পায়খানার দুর্গন্ধ৷ যে পাতায় কতকটা ওই ধরণের গন্ধ রয়েছে তা খরগন্ধা৷ গাঁদাল পাতার অন্য সংস্কৃত নাম হচ্ছে–কৃষ্ণপল্লবি/কৃষ্ণপল্লবী/কৃষ্ণপল্লবিনী৷ [লৌকিক সংস্কৃতে ৰলা হয় গন্ধভাদালী ]৷ গাঁদাল একটি লতানে উদ্ভিদ৷
উদরাময় রোগে গাঁদাল ঃ গাঁদাল পাতা পেটের অসুখ বা ডায়ারিয়ার Diarrhoea মহৌষধ ঙ্মশুক্তোর সঙ্গে বা পাতলা তরকারীর ঝোলের সঙ্গেৰ৷ গন্ধটি ভাল না হোক, গুণে অপরিসীম হচ্ছে আমাদের গাঁদাল পাতা৷ পেট রোগা মানুষেরা, ভুক্তভোগী মানুষেরা দেখেছেন দুর্গন্ধ যুক্ত এই গাঁদাল পাতার কী সৌজন্যগত মহিমা
কোষৰৃদ্ধি, শ্লীপদ রোগে ও বাতরোগে গাঁদাল ঃ গাঁদাল পাতা চাটুতে সেঁকে রোগগ্রস্ত স্থানে দৃঢ় ভাবে ৰেঁধে রাখলে কোষৰৃদ্ধি Hydrocele ও গোদ রোগের (শ্লীপদ) উপশম হয়৷ গাঁদাল পাতা ভেজে খেলে তা বাত রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে৷