এক দেশ এক ভোট যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী
২০১৪ সালে শপথ নেবার আগেই নরেন্দ্র মোদী জোর গলায় ঘোষনা করেছিলেন--- ‘আচ্ছা দিন এসে গেছে’৷ সুইস ব্যাঙ্কের কালোটাকা, শূন্য এ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ, দুর্নীতিমুক্ত দেশ--- সব কথার কথা নোট বন্দি রাম মন্দিরে ঢাকা পড়ে যায়৷ তবে ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বড় ঘা খেয়েছে মোদি ম্যাজিক৷ ৪০০ পারের হুঙ্কার দিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছিলেন৷ ভোটের ফলে ৪০০ পার তো দুরের কথা একক গরিষ্ঠতাও পায়নি৷ ২৪০-এই থেমে যেতে হয়েছে৷ যোগী রাজ্যে ভরাডুবি হয়েছে৷ মোদি নিজেও গতবারের তুলনায় অনেক কম মার্জিনে জয়ী হয়েছে৷ এই অবস্থায় জনগণের দৃষ্টি ঘোরাতে এক দেশ এক ভোটের স্লোগান৷
গত ১৮ই সেপ্ঢেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার বৈঠকে এক দেশ এক ভোট প্রস্তাব অনুমোদিত হয়৷ তার আগে কেন্দ্রীয় সরকার ঘটিত রামনাথ কোবিন্দ কমিটি এক দেশ এক ভোট বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে৷ কমিটির কাছে মোট ৪৭টি দল মতামত জানায়৷ ১৫টি দল বিপক্ষে মত দেয় বাকী ৩২টি দল সমর্থন করেন৷ কেন্দ্রীয় সরকার মনে করে সমস্ত আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে ২০২৯ সালে চালু করা সম্ভব হবে এই ব্যবস্থা৷
ইন্ডিয়া জোট এই ব্যবস্থা মানবে না একথা তারা আগেই জানিয়েছে৷ এখন ইন্ডিয়া জোটের বক্তব্য মোদি সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে নূতন ইস্যুর দিকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছে৷ এই প্রক্রিয়ার দ্বারা স্বৈরাচারী মোদী সরকার রাজ্যগুলির ক্ষমতাকে আরও বেশী করে কেন্দ্রীকরণ করতে চাইছে৷ বর্তমান লোকসভা ও রাজ্যসভায় আসনের নিরিখে শাসক দল ও বিরোধী দলের যে অবস্থান তাতে এই বিল পাশ করাতে সরকারকে অনেক বেশী কাঠ খড় পোড়াতে হবে৷ এই বিল পাশ করাতে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন৷ কিন্তু লোকসভায় শাসক জোটের সদস্য সংখ্যা ২৯৩, প্রয়োজন ৩৬২ জন সাংসদের৷ একই ভাবে রাজ্য সভায় দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেতে হলে ১৬৪জন সদস্যের সমর্থন দরকার৷ কিন্তু সরকারের হাতে আছে মাত্র ১১৫৷ তাই উভয় কক্ষেই শাসকদল দুই-তৃতীয়াংশ থেকে অনেক দুরে৷ এই অবস্থায় দেখার প্রয়োজন এই বিল পাশ করাতে ‘অপারেশন লোটাস’ কতদুর যায়৷
আমরা বাঙালীর কেন্দ্রীয় কমিটির সংঘটন সচিব তপোময় বিশ্বাস এক প্রেস বার্র্তয় জানান--- যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আজ আর সেই পরিস্থিতি নেই এক দেশ এক ভোট করার৷ বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল ক্ষমতায়৷ স্বাধীনতার পর প্রথম এক দশক একবারই ভোট হতো৷ তখন গোটা দেশে একপ্রকার একদলেরই শাসন ছিল৷ বর্তমানে জোর করে এক দেশ এক ভোট আইন চাপিয়ে দিলে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে সংহতি বিপন্ন হবে৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে৷ ভারতের পরিণতি শোভিয়েত ইয়ূনিয়নের মতো হতে পারে, তাই এই নীতি প্রয়োগের আগে সরকারকে অনেকবার ভাবতে হবে৷