অর্বাচীনে ভরে গেছে এদেশের রাজনৈতিক দলগুলি

লেখক
প্রভাত খাঁ

বর্তমানে আমরা এক মারাত্মক  পরিস্থিতির  মধ্যে  হাজির হয়েছি৷ সেটা  বেশ বোঝা যায় বর্তমানে রাজনৈতিক , সামাজিক, অর্থনৈতিক  দিক থেকে চরম বিপর্যয়ের  মধ্যে দেশ অবস্থান করছে৷

যারা বয়স্ক তারা সকলেই দেখেছে স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষের দিকে দেশের দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থী নেতা নেত্রীদের  আচার ব্যবহার কেমন ছিল, আর তাদের জন সংযোগ, কর্ত্তব্যবোধটাও কিছুটা ছিল৷ কিন্তু  বর্ত্তমানে অনেক দল ও  অনেক নেতা- নেত্রীর সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু  তাঁদের  আচার ব্যবহার, কথাবার্র্ত জনসংযোগ সব কিছুতেই ফাঁকি৷ তাই দেশের উন্নয়ন সম্বন্ধে তাদের কোন ধারণা নেই, কোন প্রচেষ্টাও নেই৷  মোদ্দাকথা দেশ সেবার দিকে  তাদের নজরই নেই৷ তাছাড়া রাজনৈতিক গুনগত মানটিও অনেক খানি  নিম্নমানের, দুর্নীতিতে দেশ সর্বস্তরে  আক্রান্ত৷  ভাবলে দুঃখ ও আশ্চর্য হতে হয় যখন  নির্বাচিত এম.পি ও মন্ত্রীরা দেশের সম্মানীয় ব্যষ্টিদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন সতীদাহ উচ্ছেদ করেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর! তিনি এটাও  জানেন না যে ভারত পথিক, রাজা রামমোহন রায়ই ইংরেজ শাসনে ভয়ংকর নিষ্টুর সতীদাহ প্রথা রদ করেন৷ সংবাদে প্রকাশ একজন কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থানকারী মন্ত্রী  জনগণের  কাছে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলছেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বীরভূমের  তারাপীঠে জন্মগ্রহণ করেন৷  আর একজন একটি রাজনৈতিক  দলের সভাপতি যিনি বড্ড বেশী কথা বলেন,  সেই নেতা বলেন যে,  সহজপাঠ  ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন৷ তাছাড়া বর্তমানে রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের বড্ড বেশী মূল্য দিতে  গিয়ে , এমন সব অবান্তর উক্তি করেন যেটা সমগ্র ভারতের  কাছে বড়ই  বিষদৃশ্য ও লজ্জার৷

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্রমোদীকে ‘‘ভারতের  জনক’’ আখ্যা দেন নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জে সাধারণ সভা চলাকালীন৷ ট্রাম্প গালভরা প্রশংসা করেন মোদির৷ তিনি বলেন, ভারতের অতীতের কথা স্মরণে আছে৷

সেখানে অনেক মতানৈক্য ছিল৷ অনেক লড়াই ছিল৷ একজন পিতার  মতই সবকিছু  এক করে দিয়েছেন৷ আমরা তাঁকে দেশের জনক বলতে পারি৷ এটি একজন  বিদেশের রাষ্ট্রনেতার উক্তি৷ একে কেন্দ্র করে  কেন্দ্রীয়মন্ত্রী অনেক ধাপ এগিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য  করে বসেন মোদিকে ‘‘ভারতের  জনক’’ না মানলে  আপনি ভারতীয় নন৷ এ কেমন কথা? ১৩০ কোটি দেশের জনক ঠিক করার অধিকার অন্য কোনও দেশের রাষ্ট্র প্রধানের নেই৷

আমেরিকায় মোদী প্রায় ৫০ হাজার ভারতীয়দের সমাবেশে ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন৷ শুধু তাই নয় তিনি  বলেন ‘‘যাঁরা প্রবাসে  থাকেন তারা আজ ভারতীয় হওয়ার জনগর্বিত৷  এটা  সম্ভব হয়েছে  প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিত্বও প্রচারের জন্য৷ ভারতবর্ষের অর্বাচীন নেতাদের মুখ যতটা ফোটে মাথা ততটা কাজ করে না৷ তাই মিঃ সিং একবার ও ভেবে মন্তব্য করলেন না! মন্ত্রীর জানা উচিত ছিল ভারত বর্ষের জাতির জনক হওয়ার একমাত্র অধিকার ভগবান সদাশিবের৷ তিনি সভ্যতারও জনক৷

ভারত মূলতঃ আধ্যাত্মিক ঐক্যে ও মানবতায় বিশ্বাসী৷ ভারতের  মুনিঋষিগণ বিশ্বাস করেন যে সমগ্র মানবজাতিই হলো সেই ‘অমৃতের পুত্র৷ এখানে মানুষে মানুষে কোনও  ভেদাভেদ নেই৷ কারণ সকলেই পরমপিতারই সন্তান৷

যে কোন মানুষ সকলের পিতা হতে পারেন না৷  এটা এক ধরণের  আত্মম্ভরিতা৷ তাই সংযত বাক হওয়াটা দলীয় নেতাদের  উচিত৷  বিরাট ভারত যুক্ত রাষ্ট্রের যেখানে  সংসদীয়  গণতন্ত্র চলে সেখানে কেন্দ্র যে দলের দ্বারা শাসিত হয় সেখানকার যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি সম্মানীয় সে বিষয়ে সন্দেহ নেই, তবে তিনি যে সারা ভারতের  জনক হবেন এমন কথা বলা যায় না৷ কোন কিছু ভালো  কাজের জন্যও সেটা বলা যায় না৷ কোন দেশের প্রধানের ব্যষ্টিগত মতামতও অন্য দেশের মানুষের স্বাধীনতায় নাক গলানোর সামিল৷ যিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে আছেন তারও যদি লজ্জাশরম থাকে  তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করতেন৷ এমন নিদর্শন আমরা পাই---সুভাষচন্দ্র আজাদ-হিন্দ ফৌজের নেতৃত্বের ভার নেওয়ার পর জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তোজো বলেছিলেন--- সুভাষচন্দ্রই হবেন স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী৷ তীব্র প্রতিবাদ করে সুভাষচন্দ্র বলেছিলেন---‘তোজো নয় ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন সে দেশের মানুষ৷’ কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের কথায় ভাবে গদ্গদ্ হয়ে পড়েছিলেন৷ নির্বাচিত নেতা ও নেত্রীগণ সংসদ বিধান সভায়  যান মুখ্যতঃ জনগণের  সেবা করতে৷ কিন্তু সেই কর্তব্যের ধারেকাছেও তারা যান না৷ তাঁরা তাঁদের কর্তব্য ভুলে দলবাজিতেই পারদর্শী হয়েছেন৷ মনে রাখতে হয় নির্বাচিত ব্যষ্টি বিশেষ করে  ধর্মমত নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সেবক৷ দলে থেকে কাজ করাটা  আর শাসনে থেকে কাজ করাটার মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে৷ দুর্র্ভগ্যের  বিষয়  এটাই  বর্তমানে  দলীয় নেতানেত্রী ও শাসনে অবস্থানকারীগণ স্মরণে  রাখেন না৷ তাই  এদেশের গণতন্ত্রে এতটা ব্যর্থ৷ তাই এই বিষয়ে সচেতন হওয়াটা জরুরী দেশের সার্বিক কল্যাণে৷ অত্যন্ত বেদনার কথা ভারতের শাসকগণ  জনগণকে  সেবা দিতে যে চরম ব্যর্থ সেটা প্রবীন ব্যষ্টিগত হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন৷  তাই  আজ যুক্তিবাদী, চিন্তাশীল তরুণ তরুণীদের এগিয়ে এসে শাসন ভার গ্রহণ করাটা অতীব প্রয়োজন৷