গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ‘জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের সরকার’ঙ্গ কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে গণতন্ত্র হ’ল ‘মবোক্রেসী’, কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার নিয়ন্ত্রিত হয় ‘মব–সাইকোলজি’(জনতা–মনস্তত্ত্ব)–র দ্বারাঙ্গ১
যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবেই গণতন্ত্র সার্থক হবে, নচেৎ জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের শাসনের মানে দাঁড়াবে ‘বোকার দ্বারা, বোকার জন্যে, বোকার শাসন’*ঙ্গ২
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতার অভাব রয়েছেঙ্গ চালাক চতুর রাজনৈতিক নেতারা জনসাধারণের এই রাজনৈতিক চেতনার অভাবকে কাজে লাগিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে’ ক্ষমতা কুক্ষিগত করেঙ্গ নির্বাচনে জয়ী হবার জন্যে তারা ঘুষ দেওয়া, জাল বোট** দেওয়া, ৰুথ দখল করা, বোট কেনা প্রভৃতি সমস্ত রকম অসদ্ উপায় অবলম্বন করে, আর এরই ফলে সমাজে নৈতিকতার মান নেবে যায়, সৎ ও দক্ষ লোকেরা দূরে সরে’ থাকতে বাধ্য হয়ঙ্গ যেহেতু টাকা ছড়িয়ে, ভয় দেখিয়ে, গুণ্ডা লেলিয়ে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করা হয়, তাই নীতিবাদীদের নির্বাচনে জয় লাভের সম্ভাবনা খুবই কমঙ্গ
বিশ্বের জনগণের কাছে রাজনৈতিক গণতন্ত্র এক বিশাল ধাপ্পাঙ্গ শান্তি, সমৃদ্ধি ও সাম্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিক গণতন্ত্র অপরাধী সৃষ্টি করে’ শোষণে উৎসাহ দিয়েছে, আর জনগণকে ছুঁড়ে ফেলেছে দুঃখ ও যন্ত্রণার অতল গহ্বরেঙ্গ৩
যে সমস্ত দেশে বর্তমানে গণতন্ত্র প্রচলিত, সেখানকার জনগণের সে৷ প্রতারণা করে’ তাদের বিশ্বাস করানো হয়েছে যে, রাজনৈতিক গণতন্ত্র থেকে ভাল ব্যবস্থা আর কিছু হতে পারে নাঙ্গ রাজনৈতিক গণতন্ত্র জনগণকে কাগজে–কলমে বোটাধিকার দিলেও, কেড়ে নিয়েছে অর্থনৈতিক অধিকারঙ্গ আর তার ফলে ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট অর্থনৈতিক বৈষম্য, জনগণের ক্রয়ক্ষমতায় এসেছে প্রচণ্ড অসাম্য, সৃষ্টি হয়েছে বেকার সমস্যা, খাদ্য ঘাটতি, দারিদ্র্য, ও সামাজিক সুরক্ষার অভাবঙ্গ
উদার গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের হাতে থাকে অর্থনৈতিক ক্ষমতা, আর কমিউনিজম শাসিত দেশে অর্থনৈতিক ক্ষমতা থাকে পার্টি নেতৃত্বের এক ছোট গোষ্ঠীর হাতেঙ্গ উভয় ক্ষেত্রেই হাতে গোণা কিছু লোক সমগ্র সমাজের অর্থনৈতিক উন্নতির নামে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করেঙ্গ পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশই–তা সে পুঁজিবাদী হোক আর মার্কসবাদী হোক–অর্থনীতির কেন্দ্রীভবনের নীতি নিয়ে চলেছেঙ্গ কেন্দ্রিত অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক শোষণ কোনকালেই বন্ধ করা যাবে না, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানও সম্ভব হবে নাঙ্গ তাই গণতন্ত্রকে সাফল্যমণ্ডিত করতে হলে অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে জনগণের হাতে রাখতে হবেঙ্গ‘ অর্থনৈতিক গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠাই সমাধানের একমাত্র পথঙ্গ জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির এটাই একমাত্র উপায়ঙ্গ
‘অর্থনৈতিক গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত কর্মসূচীগুলি বাস্তবায়িত করতেই হবে–
* সকলের জীবন ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজনপূর্ত্তি সুনিশ্চিত করতে হবেঙ্গ
* প্রত্যেকের ক্রয়ক্ষমতার ক্রমবৃদ্ধি সুনিশ্চিত করতে হবেঙ্গ
* সমস্ত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা স্থানীয় জনসাধারণের হাতে রাখতে হবেঙ্গ
* স্থানীয় অর্থনৈতিতে বহিরাগতদের কোন অধিকার থাকবে নাঙ্গ