আত্মপরিচয়ে জেগে উঠুক বাঙালী

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

এই ধর্মান্ধতা, অসার ধর্মীয় মতবাদের দোহাই দিয়ে এই উন্মত্ততা আর যাই হোক কোনো পক্ষেরই কোন কল্যাণ করবে না৷ শুধুমাত্র ক্ষমতালোভি লুম্পেন পলিটিশিয়ান ও আত্ম সর্বস্ব ফ্যাসিস্ট শোষক ধনুকুবেরদের স্বার্থসিদ্ধি করবে৷

‘কেউ শেখে ঠেকে কেউ শেখে দেখে৷’ তথাকথিত ধর্মীয় মতবাদে উন্মত্ত বাঙালী দেখেও শেখেনা ঠেকেও শেখেনা৷ ৪৬ এর ক্ষত সাতাত্তর বছর ধরে বহে বেড়াচ্ছে লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল বাঙালী৷ তবু তার বোধোদয় হলো না৷ দাঙ্গা করে মরেছে বাঙালী, স্বার্থসিদ্ধি করেছে কিছু পশ্চিমি ধান্দাবাজ পলিটিশিয়ান, দাঙ্গাবাজ ধর্মব্যবসায়ী ও ফ্যাসিস্ট শোষক দেশীয় পুঁজিপতি৷

আজ আবার ধর্মান্ধতায় উন্মত্ত বাঙালী ৪৬-এর ক্ষত বুকে নিয়েই৷ অন্তরালে সেই ধান্দাবাজ, দাঙ্গাবাজ ও ফ্যাসিস্ট শোষকরাই৷ এই ধর্মান্ধ বাঙালীর চেতনায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে গোবর গোমূত্র৷ ভেড়ার পালের চেয়েও অধম এই ধর্মান্ধরা৷ সামনের ভেড়াটা যেদিকে যায় পেছনের সব ভেড়ারাই সেদিকে ছোটে ভালো-মন্দ বিচার না করেই৷ আর এই দাঙ্গাবাজদের পালের গোদারা সামনে নয়, অন্তরালে থেকে চালাচ্ছে আত্মপরিচয় ভুলে যাওয়া অনুর্বর মস্তিষ্কের বাঙালী নামধারী কিছু দ্বিপদ জীবদের৷

প্রায় ৯০বছর আগে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন---‘মানুষকে মানুষ বলে দেখতে না পারার মতো এতবড়ো সর্বনেশে অন্ধতা আর নেই৷ এই বন্ধন এই অন্ধতা নিয়ে কোনো মুক্তিই আমরা পাবো না৷ যে মোহে আবৃত হয়ে মানুষের সত্য রূপ দেখতে পেলুম না সেই অপ্রেমের অবজ্ঞার বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাক৷ যা যথার্থভাবে পবিত্র তাকে যেন সত্য করে গ্রহণ করতে পারি৷’’

বাঙালী আর কবে বুঝবে--- এই ধর্মান্ধতা না রক্ষা করবে নিজের অস্তিত্বকে, না বাঁচাবে মানুষের মনুষ্যত্বকে৷ মনুষ্যত্বকে খুইয়ে, নিজের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে কার স্বার্থে কিসের স্বার্থে এই দাঙ্গা! কোন পুণ্য লাভ হবে এই ভ্রাতৃঘাতী হানাহানিতে---৪৬ থেকেও শিক্ষা নিল না ধর্মান্ধ গোমুখ্যের দল!

তবু শেষ কথা এই---তথাকথিত ধর্মমতের আবরণে আবৃত এই উন্মত্ত দাঙ্গাবাজরাই বাঙালীর একমাত্র পরিচয় নয়৷ এই বাঙলা ইশা খাঁ প্রতাপাদিত্যের বাঙলা, রবীন্দ্রনাথ নজরুলের বাঙলা, স্বাধীনতার বেদীমূলে অক্লেশে প্রাণ দান করা বহু শত বাঙালীর এই বাঙলা৷ শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিতে বিজ্ঞানে অর্থনীতিতে রাজনীতিতে ধর্মনীতিতে শুধু বাঙলা নয়, শুধু ভারত নয় বিশ্বের দরবারে গৌরবজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন বহু শত বাঙালী৷

বিশ্বকবির কথায় বলি---‘দুঃসাধ্য অধ্যাবসায়ে দুর্গম লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছোবই যদি আমরা মিলতে পারি৷’ কবি নজরুলের কথায়---‘বাঙালী যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে বাঙালীর বাঙলা সেদিন সে অসাধ্য সাধন করবে৷’

বাঙালীর দুর্গতির রাত্রি অবসান হবেই৷ সসীম এই পৃথিবীতে সব কিছুরই একটা শেষ সীমা আছে৷ এই ধর্মান্ধ দাঙ্গাবাজদেরও শেষের দিন আগত৷ নবপ্রভাত আসে আঁধার রাত পার হয়েই৷ বাঙালীর জীবনেও নবপ্রভাত আসছে নতুন যুগের সূচনা করতে৷ আর ৪৬ নয় এবার বাঙালীর সামনে দৃষ্টান্ত হোক ১৯০৫৷ আজ শুধু আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে একটি মাত্র পরিচয়ে---আজ আকাশ বাতাস মুখরিত করে আজানের সুর ধবনিত হোক মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে, মন্দিরে মন্দিরে বাজতে থাকুক শঙ্খ বাদ্য, কিন্তু বাঙলার পথে ঘাটে, বাঙলার হাটে বাজারে, বাঙলার মাঠে ময়দানে আমাদের একটি মাত্র পরিচয় হোক---আমরা বাঙালী৷