কর্ষক
এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংসৃক্ত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷
সর্জন
তোমরা ভালভাবেই জান ’সৃজন’ শব্দটি ভুল৷ ‘সৃজ’ ধাতু ল্যুট করে পাই ‘সর্জন’–‘সৃজন’ নয়৷ কারও মধ্যে সৃজনী প্রতিভা থাকে না–থাকে সর্জনী–প্রতিভা৷ আমরা ‘উৎসর্জন’, ‘বিসর্জন’–এর ‘সর্জন’ শব্দটি ঠিকই ব্যবহার করি৷ কেবল শব্দটি উপসর্গ রহিত অবস্থায় থাকলে গোলমাল করে থাকি–বলে ফেলি ‘সৃজন’, ‘সৃজনী’৷ এবার থেকে ‘সৃজন’ শব্দটি ব্যবহার কোরো না৷
উপর্যুক্ত
‘উপরি উক্ত’–কে অনেকেই ভুল করে উপরোক্ত লেখেন, ভাবেন শব্দটা বোধহয় উপর উক্ত ঞ্চ উপরোক্ত৷ সংস্কৃতে ‘উপর’ বলে কোন শব্দ নেই–আছে ‘উপরি’৷ এই ‘উপরি’ ‘উক্ত’ > উপর্যুক্ত৷
অসংস্কৃতি
‘সংস্কৃতি’র বিপরীত শব্দ ‘অপকৃতি’ চলতে পারে, তবে ‘অপসংস্কৃতি’ চলতে পারে না৷ কারণ ‘সংস্কৃতি’ (সম্–কৃ ক্তিন্ ) সংস্কৃতি যার মানে যা মানুষকে সূক্ষ্মত্বের দিকে, রুচিবোধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়) মানেই ‘কৃতি’–র উন্নতাবস্থায় অধিরোহণ৷ ‘অপ’ মানে অবনত অবস্থা৷ একসঙ্গে দু’টো চলবে কি করে এ সোণার পাথর বাটি হয়ে গেল যে আবার ‘অপকৃতি’–র মানে ‘কুকার্য’ও হয়৷ তাই সংস্কৃতির বিপরীত শব্দ হিসেবে বরং ‘অসংস্কৃতি’ শব্দটা চলতে পারে৷ কেননা ‘সম্’ উপসর্গ সাধারণতঃ ভাল বা শুভ অর্থে প্রযোজ্য হয়৷ তাই ‘অপসংস্কৃতি’ শব্দটি অশুদ্ধ৷
(‘প্রভাতরঞ্জনের ব্যাকরণ বিজ্ঞান’)