একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় প্রকাশ বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া জারি থাকলেও ভারত এখন স্বৈরাতান্ত্রিক পর্যায়ে আছে৷ ভারতীয় গণতন্ত্রের তিনটি মূলস্তম্ভ বিচার বিভাগ, সংবাদ মাধ্যম ও নির্বাচন কমিশন, এই তিনটি স্তম্ভই আজ পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত৷
এক্ষণে আলোচনার বিষয় এই যে, ভারতীয় গণতন্ত্রের দু’টি স্তম্ভ নির্বাচন কমিশন ও প্রচার মিডিয়ার সংবিধান বর্ণিত নিরপেক্ষতা কোন পর্যায়ে অবস্থান করছে৷ আজ প্রায় সমস্ত বিরোধীদলের অভিযোগ এদেশের সংবাদ মাধ্যম মাত্রই পক্ষপাতদুষ্ট ম্তম্ভ৷ আর দলের নির্বাচনী ইস্তাহারেও একই কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ এক্ষণে প্রশ্ণ হচ্ছে সংবাদ মাধ্যম সম্পর্কে বিরোধী দলগুলির এই মূল্যায়ন কি সংবিধানের অনুশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাল না
বস্তুত ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের (পার্টীর পত্রিকা এর মধ্যে পড়ে না) এই মূল্যায়ন অবশ্যই অহেতুক নয়৷ এর জন্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমই দায়ী৷ এই সত্য অস্বীকার করার কোনওরূপ অবকাশ অবশিষ্ট নেই৷ কারণ গণতন্ত্র ও বাক্স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরীর সুযোগ নিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম যে ভাড়ায় খাটা সংস্থারূপে কাজ করতে অভ্যস্ত তা পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষায় প্রচারিত সংবাদ পরিবেশক প্রতিষ্ঠানগুলিই তার প্রমাণ৷ কারণ এ রাজ্যে(পার্টির পত্রিকা বাদ) প্রভাতী যতগুলি পত্রিকা প্রকাশ হয় তাদের মধ্যে নিরপেক্ষ একটিকেও খুঁজে পাওয়া যায় না৷ হয় তারা সরকারের তাঁবেদারী করছে, না হয় বিরোধিতার নামে বিভিন্ন মতবাদের দালালি করছে৷ আর বৈদ্যুতিন চ্যানেলগুলি তো নির্লজ্জের অধম বললে অত্যুক্তি হয় না৷ এককথায় রাষ্ট্র বা জাতি কিংবা রাজনীতি, যখন দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পড়ে তখন সংবাদ মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলিই কাণ্ডারী হিসেবে জনসমক্ষে উপস্থিত হতে দেখা যায়৷ এ জায়গাটাতেই গণতন্ত্রে সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্ব৷ কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলায় প্রচারিত সংবাদ মাধ্যমকে এই দায়িত্বপূর্ণ কাজে জনসাধারণ পাচ্ছেন না৷ পরিবর্তে এই সংবাদ মাধ্যম বাঙলার বুকে যা করছে এক কথায় পরোক্ষে দালালি৷ সুতরাং ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সাংবিধানিক স্বীকৃতি সম্পর্কে ভাববার সময় এসেছে৷
দ্বিতীয়তঃ হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা৷ গত লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফা নির্বাচনের পর হঠাৎ করে ভোটের হার বাড়িয়ে দেন নির্বাচন কমিশন৷ দিল্লি মহারাষ্ট্রে ভুতুড়ে ভোটারের অভিযোগের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দলীয় কর্মীদের ভুতুড়ে ভোটার সম্পর্কে সতর্ক করেন৷ এরপর দলীয় কর্মীরা অনুসন্ধান করে জানতে পারছেন ভোটার তালিকায় ভুতুড়ে ভোটারে ভরে আছে৷ একই লোক একাধিক জায়গায় একাধিক রাজ্যে ভোটার তালিকায় নাম আছে৷ বিরোধীদলের চাপে নির্বাচন কমিশন নড়ে চড়ে বসলেও মানুষ এখনও আশান্বিত নয়৷ বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের সন্দেহ দূর না হলে গণতন্ত্র সুদূর পরাহত৷
- Log in to post comments