বিদ্রোহী বাঙলা---কৈবর্ত বিদ্রোহ

লেখক
সুকুমার সরকার

বিদ্রোহী বাঙলার দ্বিতীয় বিদ্রোহ কৈবর্ত বিদ্রোহ৷ এটি একটি সুসংঘটিত গণবিদ্রোহ৷ এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন একজন জাত বাঙালি কৈবর্ত নেতা৷ তাঁর নাম ভীম৷ ভীম ও তাঁর ভাতুস্পুত্র দিব্যোক তৎকালীন অত্যাচারী পাল রাজা দ্বিতীয় দেবপালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কিছু কালের জন্য বাঙলার সিংহাসনে বসেছিলেন৷
কৈবর্ত বিদ্রোহের নেতৃত্ব ও সময় নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানান মতভেদ আছে৷ মূলত ইতিহাসের পাতায় এই বিদ্রোহের কাহিনী নিয়ে কিছু লেখা নেই৷ এই বিদ্রোহের কথা উল্লেখ আছে সন্ধ্যাকর নন্দী নামে এক কবির রামচরিত নামক একটি কাব্যগ্রন্থে৷ কাব্য ইতিহাস নয়৷ কাব্যে কবি কল্পনার রঙ লাগে৷ কবি সন্ধ্যাকর নন্দী তাঁর কল্পনার রঙে যে কাহিনি রচনা করেছেন তাতে রামপালের প্রশস্তি আছে৷ সেই প্রশস্তি গাঁথায় পাল রাজত্বে ঘটে যাওয়া এই কৈবর্ত বিদ্রোহের কথাও উল্লেখিত হয়েছে৷ সেই উল্লেখে কৈবর্ত বিদ্রোহের নায়ককে দস্যু, তস্কর বলে অবজ্ঞা করা হয়েছে৷ এটি বাঙালী জাতির প্রতি আর্য জাত্যাভিমানীদের বিদ্বেষ৷ কিন্তু আধুনিক ইতিহাসবিদদের অনেকে এই বিদ্রোহকে বাঙালির গর্বের ইতিহাস বলে উল্লেখ করেছেন৷ তবে একমাত্র রামচরিত কাব্যের উল্লেখে এই বিদ্রোহের কাহিনী নিয়ে নানান বিতর্কও আছে৷ সেই বিতর্ক ইতিহাসের স্থান কাল পাত্র নিয়ে যেমন, তেমনি বিদ্রোহের উদ্দেশ্যে নিয়েও৷ (বাঙালির ইতিহাসে ও পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম এই সুসংঘটিত গণবিদ্রোহের প্রকৃত ইতিহাসের কিছু সূত্র আমরা পাই শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লেখায়৷) প্রামান্য ঐতিহাসিকদের সংশয়াতিত ইতিহাসের সঙ্গে শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের উল্লেখিত সত্য ইতিহাসের তুল্যমূল্য আলোচনা করে এই বিদ্রোহের কিছু কথা উল্লেখ করবো৷
মানুষের সমাজে রাষ্ট্র ও রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর রাজার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের যেসব গণবিদ্রোহের কথা জানা যায় তার মধ্যে ‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’ একটি অন্যতম বিদ্রোহ৷ সম্প্রতিকালের কোন কোন ঐতিহাসিকের অভিমত ‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’ পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম গণ-বিদ্রোহ৷ বিশেষ করে একক কারও৷ প্রজাদের নেতৃত্বে সুসংঘটিত করে কোনো একটি রাজা বা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই ধরণের বিদ্রোহ৷ আর এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল বাঙলার মাটিতে বাঙলার সুপ্রাচীন বরেন্দ্রভূমিতে পাল রাজাদের আমলে৷
সন্ধ্যাকর রামচরিত কাব্যের উল্লেখ করে ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাঙলার ইতিহাস গ্রন্থে ‘‘রামপালের সহিত কৈবর্ত’-রাজ ভীমের যুদ্ধকালে লক্ষ্মীশূর রামপালের পক্ষ অবলম্বন করিয়াছিলেন বলিয়া উল্লেখ পাওয়া যায়৷ অন্যত্র আবার তিনি লিখেছেন, ‘‘দিব্য, বরেন্দ্রের কৈবর্ত্ত বিদ্রোহের অধিনায়ক, ইনি রামচরিতে দিব্যোক নামে অভিহিত হইয়াছেন৷
কৈবর্ত বিদ্রোহ ও দিব্যোক সম্পর্কে সন্ধ্যাকর নন্দী কাব্যগ্রন্থ ‘রামচরিত’ ছাড়া আর কোথাও কিছু উল্লেখ নেই৷ সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিত’ একটি কাব্যগ্রন্থ৷ এটি রামায়ণ বর্ণিত রামের চরিত মানস নিয়ে যাঁরা কাব্যরচনা করেছেন, তাঁদের অনুকরণে পাল রাজবংশের প্রশস্তিগাথা রচনা করেছেন৷ এই রচনা কার্য তিনি করেছেন দ্বিতীয় মহীপাল-এর মৃত্যুর দুইপুরুষ পরে৷ অর্থাৎ মদন পালের নির্দেশে৷ ঐতিহাসিকদের মতে দ্বিতীয় মহীপালের ভাতুস্পুত্র ছিলেন মদন পাল৷ এই কাব্যের মূল উপজীব্য, প্রজানুরঞ্জন রামপালের প্রশস্তি৷ সেখানে কাব্যাভাষে সন্ধ্যাকর নন্দী এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছেন৷ মূলত তিনি পাল রাজাদের (রামপালের জ্যেষ্ঠভ্রাতা দ্বিতীয় মহীপাল বাদে) গুণকীর্তন করলেও, তাঁর আলেখ্যের আন্তর প্রেরণা ছিল পুরুষোত্তম রাম৷ সুতরাং কাব্যাভাষের পালরাজ প্রশস্তি কতটা ইতিহাসকে প্রতিনিধিত্ব করছে সেই প্রশ্ণ ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন রায়, রমেশচন্দ্র মজুমদারসহ অনেকেই তুলেছেন৷ নীহাররঞ্জন রায়ের নিজের কথায়, ‘মহীপালের প্রকৃতি, চরিত্র ও রাষ্ট্রবুদ্ধি সম্বন্ধে সন্ধ্যাকরের সাক্ষ্য কতখানি প্রামাণিক বলা কঠিন৷.... দিব্যোক সম্বন্ধেও সন্ধ্যাকরের সাক্ষ্য কতটা গ্রাহ্য বলা কঠিন৷ পালরাজাদের পারিবারিক শত্রুর প্রতি সন্ধ্যাকর সুবিচার করিতে পারিয়াছেন বলিয়া মনে হয় না৷’’
যে পালরাজার আদিষ্ট হয়ে রাজপ্রশস্তি রচনা করতে বসেছিলেন সন্ধ্যাকর নন্দী, সেই পাল রাজাদের শত্রুপক্ষের প্রতি সুবিচার করা সত্যিই তাঁর পক্ষে কঠিন ছিল৷ আজকের যুগেও যেখানে রাজ আনুকুল্য পাবার জন্য লেখকরা সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলে চালাবার জন্য লেখনী ধারণ করেন, সেখানে সেই প্রাচীন-মধ্যযুগের অবস্থা সহজেই অনুমেয়৷
আর্য-জাত্যাভিমানী আধুনিক যুগের গোড়ার দিকের ঐতিহাসিকরাও অনেকাংশে সেইসব গাথা কথাকে মূল্য দিয়েই ইতিহাসের তুল্যমূল্য বিচার করেছেন৷ সেই বিচারে বাঙলার এই মহান ‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’কে খুব বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়নি৷ বরং অনেকেই সন্ধ্যাকর নন্দীর সুরেই সুর মিলিয়েছেন৷ তবে এই বিদ্রোহ কার সঙ্গে কার হয়েছিল সেসব নিয়ে বেশ কিছু বিতর্ক আছে৷ সেই বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে বহু অজানা ইতিহাসের সত্য উদঘাটক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন, ‘বৌদ্ধ যুগের শেষ চরণে বৌদ্ধ রাজা দ্বিতীয় দেবপালের সময় উত্তর বাঙলায় এসেছিল এক বিরাট কৈবর্ত বিদ্রোহ৷
ইতিহাসের এই মহান কৈবর্ত বিদ্রোহের নায়কের নাম দিব্যোক৷ কিন্তু ঐতিহাসিকরা রামচরিত কাব্যে দিব্যোককে দেখিয়েছেন কুৎসিত দস্যু হিসেবে৷ আর্য জাত্যাভিমানীদের কাছে অবশ্য জলজীবী জালিক কৈবর্ত ও হলজীবী হালিক কৈবর্ত উভয়ই ছিলেন কুৎসিত, অনার্য, অবজ্ঞেয়৷ তাঁদের অধিকার আদায়ের লড়াইকে দস্যুর সঙ্গে তুলনা করা তো স্বাভাবিক৷ যেখানে এই আজকের যুগেও ছাত্র-ছাত্রাদের দাবী আদায়ের প্রশ্ণ উঠলে নেতা মন্ত্রীরা নিষিদ্ধ মাওবাদী বলে দাগিয়ে দেন৷
যাইহোক, সন্ধ্যাকর নন্দী দিব্যোককে দস্যু, কুৎসিত, নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করলেও তাঁর বিদ্রোহকে কিন্তু কেউ অস্বীকার করতে পারেননি৷ অর্থাৎ গৌরাবান্বিত পাল সাম্রাজ্যের যুগের কোনো এক সময় ভীষণভাবে প্রজা-অসন্তোষ দানা বেঁধেছিল ও একটি বিদ্রোহ হবার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল৷ এখন দেখতে হবে পাল সাম্রাজ্যে এমন কোন্‌ অত্যাচারী রাজা ছিলেন, যাঁর বিরুদ্ধে সেই প্রাচীন যুগে গণ বিদ্রোহ হবার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল? শিলালেখ, দানপত্র কিংবা প্রশস্তিগাথা তো সেই রাজাদের থাকে যাঁরা প্রজাবৎসল৷ যিনি অত্যাচারী, দুর্বিনীত তিনি তো এসবের প্রতি ধ্যান দেন না৷ তাহলে প্রশ্ণ আসতে পারে, এঁদের সম্পর্কে জানার উপায় কী?
এই প্রশ্ণের উত্তরের জন্য আমাদের শিলালেখ, দানপত্র কিংবা প্রশস্তিগাথার বাইরে ইতিহাস খোঁজার অন্য উপাদানের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে৷ মাটির বুকে কান পেতে সমাজ-সংস্কৃতির গভীর থেকে তুলে আনতে হবে সেই ইতিহাস৷ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি তথা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার কৈবর্ত বিদ্রোহের ইতিহাসের এই বিস্মৃত অংশটুকু সেই সমাজ-সংস্কৃতির পাঠ থেকে তুলে এনেছেন৷ কৈবর্ত বিদ্রোহে সঙ্গে দ্বিতীয় দেবপালের সম্পর্ক যুক্ত হয়েছে সেই সূত্র থেকেই৷ তা নিতান্তই ছিল বিস্মৃত ইতিহাস৷ কৈবর্ত বিদ্রোহের এই বিস্মৃত ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এমনই একজন নারীর কথা৷ নারীর কীর্তিগাথার আলোকে ইতিহাস খুঁজতে যাইনি বলেই ইতিহাসের এই বিপত্তি ঘটেছিল৷ সেখানে ঐতিহাসিকরা হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন আর বলছিলেন, দিব্যোক প্রথমেই বিদ্রোহ করেননি৷ কিংবা মহীপাল অত্যাচারী রাজা ছিলেন না৷ তাহলে প্রথমে কে বিদ্রোহ করেছিলেন? মহীপাল অত্যাচারী রাজা না হলে অত্যাচারী রাজা কে ছিলেন?
হ্যাঁ, এই উত্তরের মধ্যেই নিহিত আছে কৈবর্ত বিদ্রোহের প্রকৃত ইতিহাস৷ আর তার সূত্র ছিল পাল-বৌদ্ধযুগের সমাজ-সংস্কৃতির মধ্যেই৷ যেখানে নেপথ্য থেকে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন একজন অন্তঃপুরবাসিনী নারী৷ দ্বিতীয় দেবপালের ধর্মপত্নী লজ্জা দেবী৷ হ্যাঁ সেই যুগে স্ত্রীর প্রতিশব্দ হিসেবে ধর্মপত্নী বা সহধর্মীনী, ভার্যা, কলত্র, দ্বারা প্রভৃতি অনেকগুলো প্রতিশব্দ ছিল৷ দায়িত্ব ও কর্তব্যের ভিত্তিতে এক একজন স্ত্রী এক একরকম অধিকার ভোগ করতেন৷ যে স্ত্রীকে যজ্ঞের সমিধ দেবার অধিকার দেওয়া হতো তাঁকে বলা হতো ‘ধর্মপত্নী’ বা ‘সহধর্মিনী’৷
এ ব্যাপারে শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার লিখেছেন,‘কথা প্রসঙ্গে বলে রাখি, বৌদ্ধযুগে দ্বিতীয় দেবপাল যখন বাঙলার রাজা ছিলেন তিনি অনেক অন্যায় কাজ করেছিলেন, তখন তার প্রজারা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল৷ তখন বাঙলার জনগোষ্ঠীর শতকরা নববই ভাগ ছিল কৈবর্ত্ত৷ পরবর্ত্তীকালে সেই কৈবর্ত্তদের মধ্যে যাদের লেখাপড়া ছিল, টাকা পয়সা ছিল, তারা তথাকথিত উচ্চজাতে পরিণত হল৷ গোড়ার দিকে বাঙলার জনগোষ্ঠী মানেই ছিল কৈবর্ত্ত৷ বাঙলা হল জলের দেশ৷ ‘ক’ মানে জল৷ কৈবর্ত্ত বা কৈবর্ত্ত মানে জলই যার জীবিকা যেমন জলে যে মাছ ধরে, জলের সাহায্যে যে চাস করে, সবাই কৈবর্ত্ত৷ ‘কৈবর্ত্ত’ থেকে প্রাকৃত ভাষায় কৈবট্ট৷ কৈবট্ট থেকে বর্তমান হিন্দীতে ‘কেওট্‌’৷ তা সেই রাজার যিনি পট্টমহিষী-পটরাণী ছিলেন তার নাম ছিল লজ্জাদেবী৷ তিনি বললেন---না এতো অধর্ম হয়ে যাচ্ছে ও পত্নী হিসেবে আমার কর্তব্য এই অধর্মের বিরোধীতা করা৷ তখন রাণী কী করল?---না, অত্যাচারিত মানুষ যারা তার কাছে এল, রাণী তাদের বললেন--- আমি তোমাদের নিয়ে সংগ্রাম করব৷
সংগ্রাম হ’ল সংগ্রামে দ্বিতীয় দেবপালের মৃত্যু হ’ল৷ বলতে পার, বাঙলা কেন, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রজারা রাজাকে সরিয়েছিল এই ধরনের ব্যাপার উপলক্ষ্য করে এই প্রথম৷ ইংল্যাণ্ডে ব্যাপারটা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ঠিক এ ধরনের নয়৷ তখন সেই বাঙালী জনতার নেতা ছিলেন ভীম নামে একজন৷ তিনি যুদ্ধে মারা যান৷ তার ভাইপো ছিল দিব্যোক, দিব্যোককে উনি রাজা করলেন৷ অতঃপর রাণী নিজে স্বামীর চিতায় জ্বলে মরলেন৷ কিন্তু স্বামী হত্যা তিনিই করিয়েছিলেন৷ লড়াইটা হয়েছিল বর্তমান পৌণ্ড্রবর্দ্ধন ভূক্তিতে, মালদা আর দিনাজপুর জেলার সীমান্ত এলাকায়৷ দিব্যোক রাজা হলেন৷ নাম হল---দনুজমর্দ্দন দেব৷ তারই নামে শহর তৈরী হ’ল দিনাজপুর৷
সমাজ-সংস্কৃতির এই সূত্র থেকেই শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী তুলে আনলেন সেই যুগের এই কৈবর্ত বিদ্রোহের মিসিংলিঙ্ক ইতিহাসের অংশটুকু৷ কৈবর্ত বিদ্রোহের বিস্মৃত ইতিহাসের ধূম্রজাল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এইটুকুই যথেষ্ট ছিল৷ কেননা, ঐতিহাসিকদের মতে ভীম বা দিবেবাক যদি উচ্চরাজ আমর্ত্য হয়ে থাকেন, তবে রাজ অন্তঃপুরের এই সমর্থন ছাড়া এমন বিদ্রোহ করা সম্ভব ছিল না৷ অন্তত সেইযুগে৷ যখন সাধারণ মানুষের মধ্যে গণচেতনার কোনো উন্মেষই ঘটেনি৷
কৈবর্ত বিদ্রোহ শুধু বাঙলা ও বাঙালির নয় পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সুসংঘটিত গণবিদ্রোহ৷ জাত বাঙালির গর্বিত ইতিহাস৷ এই ইতিহাস বিস্মৃত হলে যেমন চলবে না, তেমনি এর প্রকৃত ঐতিহাসিক দিকগুলিকেও ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করতে হবে৷ ইতিকথার নীরস মসী আঁধারে নয়, ইতিহাসের উজ্জ্বল আলোয় সত্যকে বিধৃত করতে হবে৷ কৈবর্ত বিদ্রোহ আজ আর শুধু ইতিকথার নীরস পাঠ নেই কৈবর্ত বিদ্রোহের ইতিহাসকে আজ বাঙালি জাতিসত্তার সরস বিষয় হিসেবে তুলে ধরতে হবে৷ কেননা, কৈবর্ত পরিচয় বাঙালি জাতির গর্বিত আদি পরিচয়৷ আদি কৈবর্ত থেকেই বাঙালি জাতির পরবর্তী নমঃশূদ্র, চাকমা, মাহাতো, সদগোপ, মাহিস্য, কোচ প্রভৃতি ছয়টি জাত বাঙালি জনগোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে৷ আর উত্তর জনপদে এই কৈবর্ত-কোচ থেকে বিবর্তিত, বিভাজিত রাজগুন, পোলিয়া, কলিতা, সিংহ প্রভৃতি সমন্বিত নাম হয়েছে রাজবংশী৷ এ সবই আদি কৈবর্ত বাঙালি জাতির গর্বিত ইতিহাস৷ (ক্রামশঃ)