পূর্ব প্রকাশিতের পর,
এখন প্রশ্ণ হল কোনটা ধর্মমত তা এক নজরে বুঝব কী করে? এর কতগুলো বৈশিষ্ট্য আছে৷ যেমন---
ক) প্রবর্তক---প্রত্যেক ধর্মমতের একজন প্রবর্তক আছেন৷ যেমন খ্রীষ্ট্রধর্মের যীশুখ্রীষ্ট, ইসলাম ধর্মের হজরত মহম্মদ, বৌদ্ধধর্মের গৌতম বুদ্ধ, ইত্যাদি৷
খ) ধর্মগ্রন্থ--- প্রতিটি ধর্মমতের নির্দিষ্ট ধর্মগ্রন্থ আছে৷ যেমন খ্রীষ্টানদের বাইবেল, বৌদ্ধদের ত্রিপিটক, মুসলমানদের কোরান ইত্যাদি৷
গ) ধর্মগুরু--- সব ধর্মমতেরই ধর্মগুরু থাকে, প্রবর্তকরাই প্রথম ধর্মগুরু, পরেও ক্রমান্বয়ে ধর্মগুরু নির্দিষ্ট হয়৷
ঘ) সাধারণ বিশ্বাস---যেমন-বৌদ্ধরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেনা, খৃষ্টানরা ঈশ্বরকেই ত্রিভুবনের উৎস বলে মনে করে ইত্যাদি৷
ঙ) আচার অনুষ্ঠান--- প্রতি ধর্মমতেরই স্বতন্ত্র আচার অনুষ্ঠান আছে৷
চ) সামাজিক চেতনা৷
ছ) সামাজিক বন্ধন৷
এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলি প্রতিটি ধর্মমতের মধ্যে নাও থাকতে পারে, তবে অধিকাংশই পাওয়া যাবে৷ তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে-রিলিজন্ ধর্মমত বা ধর্মীয় সম্প্রদায় ঠিক তার বিপরীত তিনটি তত্ত্বের অপর দাঁড়িয়ে--- ১) মনো-ভাবাবেগ (সাইকো সেন্টিমেন্ট)--- ইতোপূবেই বলা হয়েছে--- ধর্মমত সৃষ্টিতে আদিতে আছে মানুষের সহজাত ভয়বৃত্তি৷ সমুদ্র, পাহাড়, অরণ্য, নদী, বন, ঊষা, সন্ধ্যা, বজ্র-বিদ্যুতের ভয়ে মানুষ শুরু করেছিল প্রাকৃতিক বিষয় ও শক্তির আরাধনা৷ এই ভয়-প্রসূত মনোভাবের জন্যে এক একটি ভৌতিক বস্তুকে সামনে রেখে উপাসনা শুরু করে৷ এই জাগতিক বস্তুর সংস্পর্শে আসার ফলে এক ভাবাবেগ বা সেন্টিমেন্ট গড়ে ওঠে--- একেই বলে সাইকো সেন্টিমেন্ট৷ প্রায় প্রত্যেক রিলিজনই একটা না একটা ভৌতিক বস্তুকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে৷ কোথাও সূর্য, কোথাও চাঁদ, কোথাও বা পাথর কেন্দ্র করে নানা ধর্মমত গড়ে উঠেছে৷
২) সাইকো-রিচ্যুয়্যালিস্টিক্ অব্জারভেন্স--- ভৌতিক বস্তুকে কেন্দ্র করে যে ধর্মমত সৃষ্টি হল, পূজা চলল--- সেই বস্তুর জন্য মানুষ পরবর্তীকালে একটা দর্শন আবিষ্কার করেছে৷ মানে ---সীমার দ্বারা, সীমিত বস্তুর দ্বারা অসীমকে পাওয়া যায় ভেবে ইটে গড়া মন্দির-মসজিদ প্রভৃতিকে পবিত্র জ্ঞানে পূজা-অর্চনা আরম্ভ হয়েছে৷ এই ভাবে ভৌতিক বস্তুর সঙ্গে থাকতে থাকতেও তাকে আরাধ্য বলে ভাবতে ভাবতে একটা দৃঢ় অথচ অন্ধ মনোভাব গড়ে ওঠে৷ আবার এইভাবে সেন্টিমেন্টের ফলে বিশেষ আচার-অনুষ্ঠানের (রিচ্যুয়ালিস্টিক অব্জারভেন্স্) ধরণেরও উদ্ভব হয়েছে, যদিও সবই অন্ধ বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত বিধি ব্যবস্থা--- যার পিছনে কোন যুক্তি নেই৷
ট্র্যাডিশান---প্রাচীনকাল থেকে কাজের, আচার অনুষ্ঠানের যে ধারা চলে আসছে, মানুষ তা বিনা বিচারে মেনে নেয়৷ বর্তমানে সেটাই একটা ট্র্যাডিশান হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সমাজপতি ও দেবতাদের রোষ-অভিশাপ নেমে আসবে--- এই ভয়ে কেউ আর এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে সাহস করে না৷ তাছাড়া, প্রবাদ বলে, মানুষ অভ্যাসের দাস৷ যুক্তিহীন হলেও যুগ যুগ ধরে একটা অভ্যাসে বশীভূত হলে মানুষ তার থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না সাফাই গায়---বাপ ঠাকুরদার আমল থেকে চলে আসছে,---তাই-ই ক্রমে একটা বদ্ধমূল সংস্কারে আবদ্ধ হয়ে গেছে৷
- Log in to post comments