সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি–জমির মালিকানাস্বত্ব নিয়ে আর কোন বিরোধ বা সংশয়ের কোন অবকাশ থাকবে না৷ এমনি ভাবে স্তরে স্তরে কৃষি–জমির সামাজিকীকরণ করে’ ফেলার নীতি অনুসরণ করার ফলে মানুষও ক্ষুদ্র ব্যষ্টিস্বার্থের দ্বারা পরিচালিত না হয়ে সামূহিক স্বার্থের দ্বারা প্রেষিত হবার শিক্ষা লাভ করবে৷ মানুষের এই মানসিক বিস্তার ও দৃষ্টিকোণের পরিবর্ত্তন সমাজের বুকে এক সুষ্ঠু অনুকূল পরিবেশও গড়ে তুলবে৷ অবশ্য সমাজের বুকে সামূহিক মনস্তত্ত্বের এমন পরিবর্ত্তন আনা রাতারাতি সম্ভব হবে না৷ এ পরিবর্ত্তন আসবে ধীরে ধীরে মানুষের মনস্তত্ত্বের ক্রমঃ–রূপান্তরণের মধ্য দিয়ে৷
সমবায় বাস্তবায়নের চতুর্থ পর্যায়ে গ্রামের প্রত্যেকটি লোকের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে৷ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মত জনগণের সমস্ত সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলি সুলভ হবে৷ প্রতিটি গ্রামের সামূহিক জাগতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সম্ভাবনা সমূহের সর্বাধিক উপযোগ এই পর্যায়ে সম্ভব হবে৷ কৃষি, শিল্প ও জীবনধারণের অন্যান্য উপায়গুলির মধ্যে সুন্দর সঙ্গতি সংসাধিত হবে৷
সমবায় প্রথা বাস্তবায়নের প্রথম থেকে চতুর্থ পর্যায় পর্যন্ত সময়কালকে প্রাউট বাস্তবায়নের সময়কাল হিসেবে চিহ্ণিত করা যেতে পারে৷
আধুনিকীকরণ ঃ সমবায়ের ভিত্তিতে যে কৃষি ব্যবস্থা গড়ে’ উঠবে, সেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে হবে৷ এই আধুনিকীকরণের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধির সুবিধা হবে, জমির ওপর বেশী লোকের চাপ পড়বে না৷ উদ্বৃত্ত লোকদের অন্য কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নতি করা যাবে৷ অবশ্য এর জন্যে সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগক্ষেত্র তৈরী করে’ দিতে হবে৷ কম লোক দিয়ে কাজ করা হলে মজুরীর জন্য যে খরচ হ’ত তা বাঁচবে, সঙ্গে সঙ্গে বাড়ীর মেয়েরা ভারী ভারী কাজ থেকে রেহাই পেয়ে নিজেদের উন্নতির সময় পাবে৷ তাছাড়া, যান্ত্রিকীকরণের ফলে শহর ও গ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হবে, ফলে পল্লীবাসীদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে৷
কৃষিকে শিল্পের মত গুরুত্ব প্রদান ঃ এ পর্যন্ত কৃষির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম নীতি অনুসৃত হয়নি৷ সত্যি কথা বলতে কি, কৃষির সাংঘটনিক দিকটা প্রায় উপেক্ষিতই থেকে গেছে৷ কৃষিকেও শিল্পের ঢুস্তুব্ভব্দব্ধব্জম্ভ মত সমান গুরুত্ব দিতে হবে৷ শিল্পে কোন দ্রব্যসামগ্রীর দর নির্দ্ধারণের সময় কাঁচামালের দাম, শ্রমিকের মজুরী, ঋণের সুদ, সমগ্র ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, সংরক্ষণের মূল্য, লাভের পরিমাণ ও উৎপাদন–হার ইত্যাদির ভিত্তিতে কোন জিনিসের দাম নির্দ্ধারিত হয়ে থাকে, কিন্তু কৃষির ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না তাই কৃষিজ পণ্যের দাম ঠিক অর্থনৈতিক সূত্র মেনে চলে না৷ কর্ষককে অবস্থার চাপে ফেলে অতি কম মূল্যে তাদের উৎপাদিত পণ্যকে বিক্রয় করতে বাধ্য করা হয়৷ কৃষিকে যদি শিল্পের মত সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়, তা হলে শিল্পের ক্ষেত্রে যে যে নীতি অনুসৃত হয়, কৃষির ক্ষেত্রেও সেই নীতি প্রযুক্ত হবে৷ তেমনটি করা হলে কর্ষকদের অবহেলা করা যাবে না, আর সেক্ষেত্রে কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন, মূল্য নির্দ্ধারণ ও বিকাশের ধারায় কোন পার্থক্য থাকবে না৷
উৎপাদন–ব্যয় নির্দ্ধারণকালে বীজের দাম, শ্রমিকের মজুরী, কাঁচামালের দাম, কর্মচারীর পেনশন বাবদ দেয়, অত্যুৎপণ্যের গুদাম ব্যয়, উৎপাদনে ক্ষয়ক্ষতির ব্যয়, সিংকিং ফাণ্ড–সবকিছুই বিবেচিত হবে৷ উপরন্তু কর্ষকদের বৈয়ষ্টিক শ্রমের মূল্য বাবদ তাদের সামগ্রিক উৎপাদনের উপর শতকরা দশ থেকে পনের ভাগ লাভের টাকাও যুক্ত হবে৷ এইভাবে কৃষিজ পণ্যের দাম শিল্পজ পণ্যের মতই বিধিবদ্ধভাবে নির্দ্ধারিত হবে৷
ক্রেতাদের এই নব–নির্দ্ধারিত দামে বা মূল্যে কৃষিজ পণ্য ক্রয় করতে হবে৷ সুসংহত উন্নয়ন নীতির এইটাই হল যথাযথ পন্থা৷ এ ধরণের ব্যবস্থায় কর্ষকদের কোনদিন শোষিত বা অযথা হয়রান হতে হবে না৷
বর্তমানে জমির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে’ কর নির্ধারিত হয়৷ তাই কোন বৎসর ফসল না ফললে সরকারকে করের পরিমাণ হ্রাস করতে হয়৷ আবার বেশী ফসল হলে লেবির দ্বারা কর বাড়াতে হয়৷ এর ফলে কর্ষকদের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়৷ তাই প্রাউটের মতে কর্ষকদের নিকট থেকে প্রকৃত উৎপাদিত ফসলের এক অংশ প্রত্যক্ষ কর হিসেবে দ্রব্য মারফৎ গ্রহণ করা উচিত৷ দ্রব্যের মারফৎ কর আদায় করলে সরকারেরও সুবিধা কারণ বিভিন্ন স্থানে ভবিষ্যতের বিপদ–আপদের জন্যে মজুত রাখার সুবিধা হবে৷ প্রয়োজন মত সহজেই দুঃস্থ ব্যষ্টিদের সাহায্যে তা প্রেরণ করা সহজ হবে৷ তাছাড়া শহরের চাহিদাও মেটানো যাবে৷