সেকালে ইয়ূরেশিয়ান উচ্চারণে ৰড় ধরনের বিবর্ত্তন দেখা যেত৷ এর কতকটা ছিল স্বাভাবিকী উচ্চারণ–বিকৃতি, কতকটা ছিল স্বেচ্ছাকৃত অর্থাৎ তা করা হত নিজেকে অ–ভারতীয় দেখাবার উদ্দেশ্যে৷ ‘বসু’ Vasu) হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘বোস’ (Bose), ‘মিত্র’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘মিটার’ (Mitter), ‘ঘোষ’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘গ্যাস’ (Gas), ‘দত্ত’ হয়েছিল ‘ডাট’ (Dutt)৷ সাহেবদের ‘পল’ (Paul) পদবী আছে৷ তাই দেখে বাঙলা ‘পাল’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘পল’, ‘দাস’ হয়েছিল ‘ডায়াস’ (Dias), ‘বন্দ্যোপাধ্যায়’ বা ‘বাঁড়ুজ্জে’ হয়েছিল ‘ব্যানার্জী’ বা ‘ৰোনার্জী’ (Banerji or Bonerji), ‘মুখোপাধ্যায়’ বা ‘মুখুজ্জে’ হয়েছিল ‘মুখার্জী’ (Mukherji), ‘চট্টোপাধ্যায়’ বা ‘চাটুজ্জে’ হয়েছিল ‘চ্যাটার্জী’ (Chatterji)৷
আমাদের শহরে সেবার এলাহাবাদ থেকে জনৈক ইয়ূরেসিয়ান (Anglo-Indian) এসেছিলেন৷ ভদ্রলোক ৰেশ চালাক–চতুর, চটপটে৷ চালচলনে আদব–কায়দায় গায়ের রঙে একেবারে খাঁটি সাহেব৷ কে বলবে ‘এ্যাংলো–ইণ্ডিয়ান’৷ ভাসা–ভাসা বাংলাও বলতে পারতেন৷ বলতেন––বাঙ্গালীদের্ সঙ্গে অনেকদিন মেলামেশা করেছি কি না,তাই একটু–আধটু বাংলা বলতে বুঝতে পারি৷ নাম ক্যানিস গ্যাস (Kanis Gas)৷ গ্যাস সাহেৰ কিন্তু বাজার ধেকে থোড়–মোচা–ডুমুর–ঝি সবই কিনতেন৷ বলতেন–জনৈক বাঙ্গালী পরিবারের কাছ থেকে তার বোন রাঁধতে শিখে নিয়েছেন৷ খেতে very delicious (ৰেশ সুস্বাদু)৷ ঝিঙে–পোস্ত তো ইউনিক (অতুলনীয়)৷
কিছুদিন পরে এলাহাবাদ থেকে আমার মামী কয়েকদিনের জন্যে ৰেড়াতে এলেন৷ তিনি আমাকে বললেন–দেখ, ওখান থেকে আমার মামাতো ভাই সম্প্রতি বদলি হয়ে এখানে এসেছে৷ ওর সঙ্গে তোমার জানাশোনা হয়েছে?
আমি বললুম–এর মধ্যে এলাহাবাদ থেকে তো একজনই এসেছেন, কিন্তু তিনি তো বাঙ্গালী নন৷ তিনি তোমার মামাতো ভাই কী করে হবেন তিনি এ্যাংলো–ইণ্ডিয়ান––নাম্, ক্যানিস গ্যাস৷
মামী বললেন–ওই রে.....ওই......ওই৷ আমার মামাতো ভাই–নাম, গণেশ ঘোষ৷ ঢ়ঙ করে লেখে ‘ক্যানিস গ্যাস’৷ ওদের বাড়ী মেদিনীপুর জেলার গড়বেতায়.........ওখানেই আমার মামার বাড়ী কি না