গবাদা আমাদের এলাকার একজন সুপরিচিত পরিবেশকর্মী৷ কি করে গবাদা যে এমন একটা তকমা পেলেন তা হয়তো অনেকেই জানেন না৷ কিন্তু ছোটবেলা থেকেই গবাদা গাছপালা খুব ভালোবাসতেন৷ নিজের হাতে নানান ধরণের গাছ লাগাতেন,আর সেইসব গাছপালার যত্ন নিজেই নিতেন৷ এখনকার মত লোকদেখানো পরিবেশ প্রেমী তিনি নন৷বহু বছর আগে থেকেই গবাদা কারো জন্মদিন,বিয়েবাড়ি , বিবাহ বার্ষিকী যেখানেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতেন সঙ্গে নিয়ে যেতেন ফুল বা ফল গাছের চারা৷ এমনকি শ্রাদ্ধ বাড়িতে গেলেও সঙ্গে নিতেন দু একটি গাছের চারা৷ আর বলতেন মৃত ব্যষ্টির স্মৃতিতে দু একটা গাছ লাগানো উচিত৷ গবাদার এইসব কাণ্ড কারখানায় বৌদি বিস্তর বিব্রত হন৷ গবাদা বৌদিকে শুধুই বলতেন -- এখন বুঝছো নাতো, পরে বুঝবে৷ গবাদাকে যারা জানে তাদের মধ্যে ছোটদের অনেকেই গবাদাকে গাছ দাদু বা গাছ কাকু বলে ডাকে৷ তাতে অবশ্য গবাদার বিরক্তি নেই৷ হাসিমুখেই উনি এসব মেনে নেন৷
এহেন গবাদা লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পথসভা বা জনসভা যাইহোক সেখানেই ছুটছেন৷ আর সভা শেষে ফিরছেন ব্যাজার মুখে৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভায় তার নিয়মিত হাজিরা সকলের মধ্যেই কৌতুহলের সৃষ্টি করে৷ গবাদার সাথে কোনো রাজনৈতিক দলের যোগাযোগ আছে, এমন খবর তো কারও জানা নেই৷ তাহলে গবাদার এমন সভায় যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি কেন? এব্যাপারে গবাদাকে প্রশ্ণ করতেই চটে লাল৷ খ্যাঁক খ্যাঁক করে বলে ওঠেন-- শুনেছিস কোনো দল পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে একটাও কথা বলছে? শুধু কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি আর কলতলার ঝগড়া করছে ঝগড়ুটেদের মত৷ গরম কেন এত বাড়ছে দিন দিন,বড়ো বড়ো গাছপালা গুলো কোথায় হারিয়ে গেল, জলাশয়গুলো বুজিয়ে একের পর এক বহুতল কি করে হচ্ছে,মাটির নীচ থেকে হু হু করে এত জল তুলে নেওয়া হচ্ছে কেন- এসব প্রশ্ণ তোলার বা উত্তর দেওয়ার কেউ নেই৷ এই একটা ব্যাপারে শাসক বিরোধী সবার অবস্থান একই জায়গায়৷ এবছরের তাপপ্রবাহে নিদারুণ কষ্টে কাটানো গবাদার বক্তব্য - মানুষ বাঁচলে তবে না রাজনীতি করবে! যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে করে আগামী দিনে মানুষ বাঁচবে কীভাবে সেই পরিকল্পনা করুক আগে৷ গবাদার মতে মানুষ নিজের স্বার্থে যেভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে চলেছে তাতে একথা বলা যেতেই পারে ’ মানুষ নিজের চিতা নিজেই সাজিয়ে তুলেছে’৷ মাটি,জল,বায়ু সব দূষিত হয়ে গেছে,অথচ এসব নিয়ে কোনো কথা নেই৷ কেন দীর্ঘদিন ধরে এভাবে তাপপ্রবাহ চলছে বা আগামী দিনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে বিজ্ঞানীরা জানালেও এই অবস্থা মোকাবিলার জন্য পদক্ষেপ কী গ্রহণ করা হবে সেসব নিয়ে দেশ নেতাদের মুখ থেকে কোনো শব্দ শোনা গেল না৷ এঁরা ভাবেন বড়ো বড়ো গাছপালা কেটে চওড়া রাস্তা ও জলাভূমি ভরাট করে সুউচ্চ অট্টালিকা তৈরি হয়ে গেলেই উন্নয়ন হয়ে যায়৷ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য রাস্তা চওড়া করার প্রয়োজন আছে ঠিকই, কিন্তু সেই রাস্তার দুপাশে পরিকল্পিত ভাবে দীর্ঘস্থায়ী গাছ রোপণ করা হয় না কেন? অরণ্য ধবংস করার ফলে আজ জঙ্গলের পশুরা লোকালয়ে চলে আসছে৷ ক্ষতি করছে বাড়িঘর, শস্যক্ষেত ও মানুষের জীবন৷ নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে,অথচ তীর বরাবর ভূমিক্ষয় রোধক গাছপালা লাগানোর পরিকল্পনা নেই৷ পুকুর, খালবিল,সায়র ইত্যাদি বুজিয়ে না দিয়ে সংস্কার করা দরকার৷ সাথে সাথে আরও নতুন নতুন পুকুর খনন করে বৃষ্টির জল ধরে রেখে তা কৃষিকাজ সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করার উদ্যোগ কোথায়? এসব নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের মাথাব্যথা নেই৷তাদের লক্ষ্য একটাই - যেন তেন প্রকারে ক্ষমতা দখল করা৷
সরকারিভাবে অরণ্য সপ্তাহ বা বনমহোৎসব পালিত হয় ঠিকই, কিন্তু তাদের হিসেবমত লক্ষ লক্ষ গাছ লাগানো হলেও সেগুলো দেখা যায় না৷ লাগানো হয়,বাঁচানোর জন্য যা করণীয় তা করা হয় না৷ আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা তো কম নয়, তাদের মধ্যে অনেকে আবার জোর গলায় ঘোষণা করে থাকেন তাদের সদস্য সংখ্যা সর্বাধিক৷ পরিবেশ উন্নয়নের অঙ্গ হিসেবে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণে দলীয় কর্মী সমর্থকদের কাজে লাগানোর উদ্যোগ কোনো রাজনৈতিক দল নেয় না কেন? বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে মারামারি বা দাদাগিরির প্রতিযোগিতা বন্ধ রেখে গাছ লাগানোর সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হোক৷ কোনদল পরিবেশ উন্নয়নে কত ভালো কাজ করতে পারে তার প্রতিযোগিতা হোক৷ গঠনমূলক চিন্তা ভাবনা শুরু হোক৷ পরিবেশ দূষণমুক্ত হলে মানুষ -পশু-পাখী- উদ্ভিদ -কীটপতঙ্গ বাঁচবে৷ নাহলে গবাদার মতন অল্প কিছু সংখ্যক পরিবেশ প্রেমীর চেষ্টায় পৃথিবী এই ভয়ঙ্কর বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাবে না৷৷
- Log in to post comments